ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ খুব ভাল ব্যাপার এই যে, খুদে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ আমলে নিয়েছে সরকার। নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছিল তারা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের দাবির আলোকে এখন কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশ। বর্তমানে চলছে মাসব্যাপী বিশেষ কার্যক্রম। ঢাকার রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে ডিএমপি। সড়কে শৃঙ্খলা না আসা পর্যন্ত চলবে অভিযান। পুলিশের পাশাপাশি রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইডের মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা জনসচেতনতামূলক কর্মকা-ে অংশ নিচ্ছেন। ফলে গণপরিবহনের ছবি কিছুটা হলেও সুন্দর হয়েছে। এখন লাইসেন্সবিহীন ও যথাযথ প্রশিক্ষণ গ্রহণ ছাড়া বাস চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ বাস থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে। মামলা দেয়া হচ্ছে প্রচুর। পরিবহন মালিক ও চালকরা তাই বেশ সতর্ক। মোটরসাইকেলের গতিও কিছুটা নিয়ন্ত্রিত। অন্য সময় শহরের ফুটপাতে মোটরসাইকেল উঠিয়ে দেয়া ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। এখন সেটি খুব একটা সম্ভব হচ্ছে না। পথচারীদের আতঙ্ক দূর করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন কোন ফুটপাতে মোটরসাইকেল দেখা মাত্রই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। দু’জনের বেশি চড়তে দেয়া হচ্ছে না। চালক ও আরোহীকে হেলমেট পরতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রয়োজনে বাধ্য করা হচ্ছে। হেলমেট ছাড়া গেলে চালককে এমনকি জ্বালানি সংগ্রহ করতে দেয়া হচ্ছে না। পুলিশের কঠোর নিদের্শনা দেয়া আছে। পেট্রোল পাম্পগুলো তার বাস্তবায়ন করছে। এদিকে নিরাপদ সড়ক সবার চাওয়া হলেও, ট্রাফিক আইন মান্য করার ব্যাপারে কারও কোন আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। ওভারব্রিজ আছে সেখানেই। কম বেশি আছে। কিন্তু ব্যবহার করতে যেন একদমই মন চায় না। অলস বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের তাই পাকড়াও করছে মোবাইলকোর্ট। জরিমানা করছে। বৃহস্পতিবার শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে রীতিমতো কানামাছি খেলা দেখার অভিজ্ঞতা হলো। এখানে স্কাউট গ্রুপের সদস্যরা কাজ করছিলেন। পথচারীদের ট্রাফিক আইন মানতে উৎসাহিত করছিলেন তারা। কিন্তু একজন শুনে তো, তিনজন ভোঁ দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে যান। কেউ কেউ তো ঝগড়া শুরু করে দেন। অবশ্য এত কিছুর পরও হাল ছাড়তে দেখা যায়নি স্বেচ্ছাসেবীদের। হাল ছাড়ছে না ট্রাফিক পুলিশও। এভাবে চলছে, একটা পরিবর্তন হবে। হবে যে, বেশ অনুমান করা যায়। ঢাকায় এখন চলছে এশীয় চারুকলার বিশাল আয়োজন। বহির্বিশ্বের সঙ্গে শিল্প ভাবনা বিনিময়ের অন্যতম মাধ্যম ‘দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ।’ গত ৩৭ বছর ধরে ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগ এ আয়োজনকে ধারাবাহিকভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসছে। ক্রমে আয়োজনটির পরিসর ও মান বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবার ১৮তম আসর। আরও বেশি সমৃদ্ধ। উৎসবে যোগ দিয়েছেন বিশ্বের প্রায় ৭০ দেশের চারুশিল্পী। দেশী-বিদেশী ৪৬৫ শিল্পীর ৫৮৩টি শিল্পকর্মের প্রদর্শনী চলছে শিল্পকলা একাডেমিতে। পেইন্টিং, ভাস্কর্য, আলোকচিত্র, প্রাচ্যকলা, প্রিন্ট মেকিং, ভিডিও আর্ট, মৃৎশিল্প, পারফর্মেন্স আর্ট, নিউমিডিয়া, স্থাপনা শিল্পÑ কী নেই? শিল্পকর্ম সংখ্যায় এত যে, দেখে শেষ করা যায় না। প্রতিদিনই প্রচুর দর্শনার্থী আসছেন। জাতীয় চিত্রশালার সবকটি গ্যালারি ঘুরে দেখছেন তারা। আছে আরও নানা আয়োজন। সব মিলিয়ে শিল্পপ্রেমীদের অভূতপূর্ব মিলনমেলা। মাসব্যাপী আয়োজন চলবে চলতি মাসের শেষ দিন পর্যন্ত। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের কমলাপুরের বাড়িটির কথা বলে শেষ করা যাক। স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িতে এবার গড়ে তোলা হয়েছে আর্ট গ্যালারি ও গ্রন্থাগার। ‘আসমানী ভবনের’ দ্বিতীয় তলায় বুধবার এর উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে উত্তরাধিকার সূত্রে এই বাড়ির মালিক কবির সন্তানরা। তাদের একজন হাসনা জসীমউদ্দীন। বাড়িতে তার নিজের অংশে গ্যালারি ও গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছেন তিনি। এ উপলক্ষে উদ্বোধনী দিন ভবনে সুন্দর একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঘরোয়া অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। বাংলাদেশ লোকসঙ্গীত পরিষদের শিল্পীরা পল্লীকবি রচিত চারটি গান পরিবেশনা করেন। পল্লীকবির কবিতা আবৃত্তি করেন ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীলুফার হক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই এলাহী চৌধুরী ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু। গ্যালারি ও গ্রন্থাগারের উদ্বোধন করে অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, বাড়িটির সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি আছে। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে এখানে আমার বহুবার আসা হয়েছে। কারণ পল্লীকবির তৃতীয় ছেলে ফিরোজ আনোয়ারের সঙ্গে আমার গভীর বন্ধুত্ব ছিল। আমরা আসতাম, থাকতাম, খেতাম আর সারারাত আড্ডা চলত। কবির পরিবারের পক্ষ থেকে উপযুক্ত প্রস্তাব পেলে এই ভবনকে কবি জসীমউদ্দীন একাডেমি হিসেবে গড়ে তোলা যেতে পারে বলেও মত দেন মন্ত্রী।
×