ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে সাক্ষরতার হার বেড়ে ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দেশে সাক্ষরতার হার বেড়ে ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে সাক্ষরতার হার গত এক বছরে আরও বেড়ে ৭২ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করে বলেছেন, বর্তমান সরকারের নিরলস চেষ্টায় দেশে সাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। গতবার এই হার ছিল ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ। আগামীকাল ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস সামনে রেখে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই তথ্য দেন। মন্ত্রী একই সঙ্গে বলেন, সাক্ষরতা অর্জন করি, দক্ষ হয়ে জীবন গড়ি’ এই স্লোগানে এবার আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালন করা হবে। ৮ সেপ্টেম্বর সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শিল্পকলা একাডেমি পর্যন্ত র‌্যালি এবং একাডেমিতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাক্ষরতা দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আসিফ-উজ-জামান, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক তপন কুমার ঘোষ ছাড়াও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার কার্যক্রম এক সময় বন্ধ ছিল জানিয়ে ফিজার বলেন, এই সরকার ২০১৪ সালে নিরক্ষরদের সাক্ষরজ্ঞান করতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা অধিদফতরকে ৪৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। আমাদের লক্ষ্য যতক্ষণ একজন নিরক্ষর মানুষ থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত সরকার এটা চালিয়ে যাবে। জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী ২০১৮ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত উন্নীত করার কথা। এ বিষয়ে অগ্রগতি কতটা? জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এটা এখনও বাস্তবায়ন করা যায়নি, প্রক্রিয়া চলছে। আমরা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত চালাচ্ছি। আমাদের ৭০০ স্কুলে ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণী খুলেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের অধীনে থাকা বিদ্যালয় থেকে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীগুলো ছেড়ে দিলে তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয়া হবে। এটা উনারা ছেড়ে দেবেন, আমরা শুরু করব। এটার প্রসেস নিয়ে অনেক টানাপোড়েন আছে, এটা কেবিনেট পর্যন্ত গেছে। এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হলে নিশ্চয়ই সেটার বাস্তবায়ন আমরা করব। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এটি বাস্তবায়নের ব্যাপারটাও সরকারের। প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রী যদি বলে দেন তাহলে এটা হবে না। সরকার যখন সিদ্ধান্ত নেবে তখন এটা হবে, তবে এটা পরিত্যক্ত হয়নি, তাদের দাবি প্রত্যাখ্যাতও হয়নি। তাদের বিষয়টি যুক্তিযুক্তভাবে আলোচনা করা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, আর কয়েক মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে, আমি মনে করি যারা আন্দোলন করছেন তারাও বুঝবেন যে আওয়ামী লীগ সরকারই শিক্ষার জন্য, সরকারী কর্মচারীদের বেতন ও সম্মান বৃদ্ধি করেছেন। আমি মনে করি তাদের আশ্বস্ত থাকা দরকার, এই সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলেই বরং তাদের আশাটা পূর্ণ হতে পারে। আমি আহ্বান জানাব কোন হঠকারী সিদ্ধান্ত না নিয়ে তাদের অপেক্ষা করা দরকার। সরকারের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত পঞ্চম শ্রেণীতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা চলতে থাকবে বলে আবারও জানান গণশিক্ষামন্ত্রী। মন্ত্রী আরও বলেন, দেশে বর্তমানে নিরক্ষর ব্যক্তি ৩ কোটি ২৫ লাখ। আর বিদ্যালয়-বহির্ভূত ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশু ১০ লাখ। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে নিরক্ষরদের সাক্ষরতা জ্ঞান এবং বিদ্যালয়-বহির্ভূত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া হবে। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এখনও শতভাগ সাক্ষরতার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। দেশে সার্বিক সাক্ষরতা আন্দোলন কর্মসূচীর মাধ্যমে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ নিরক্ষরকে সাক্ষরতা জ্ঞান দেয়া হয়। মন্ত্রী জানান, দেশে নিরক্ষরতা দূরীকরণে ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৪৫ লাখ নিরক্ষর নারী-পুরুষকে সাক্ষরতা জ্ঞান দেয়ার জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা) বাস্তবায়ন করছে। দেশের ৫০ লাখ নব্য-সাক্ষরকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করে কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, সাক্ষরতা ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচী পরিচালনা, বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশুদের উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে এবং কিছু শহর এলাকায় মোট ৫ হাজার ২৫টি আইসিটিভিত্তিক স্থায়ী কমিউনিটি লার্নিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রতিটি জেলায় একটি করে মোট ৬৪টি স্থায়ী জীবিকায়ন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারের পূর্ণাঙ্গ মনোনিবেশ রয়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, যে শিক্ষকরা অবুঝ শিশুদের পড়ালেখা করান, তাদের সুযোগ-সুবিধা-সম্মানী ভালভাবে বৃদ্ধি হওয়া দরকার। প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক সবাই তৃতীয় শ্রেণীতে ছিল, এখন প্রধান শিক্ষক দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণী ও তৃতীয় শ্রেণীর মধ্যে বেতন কতটা হলে বৈষম্য থাকবে না সেই চিন্তা সরকারের। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রী যদি বলে দেন তাহলে এটা হবে না। আমি কিন্তু কোন স্কুল জাতীয়করণ করে দিতে পারি না। সরকার যখন সিদ্ধান্ত নেবে তখন এটা হবে। তবে এটা পরিত্যক্ত হয়নি, তাদের দাবি প্রত্যাখ্যানও হয়নি। তাদের বিষয়টি যুক্তিযুক্তভাবে আলোচনা করা হচ্ছে। যেটা ব্রিটিশ করেনি, পাকিস্তান করেনি সেটা জাতীয়করণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আর এখন জননেত্রী শেখ হাসিনা করছেন। শিক্ষকদের ভরসা রাখা দরকার। আশা করি এর একটা যৌক্তিক সমাধান হবে।
×