ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

উজানের পানিতে এ মাসেই বন্যার আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

উজানের পানিতে এ মাসেই বন্যার আশঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার বর্ষায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের দেখা না মিললেও হঠাৎ করেই সেপ্টেম্বরে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে অতি বৃষ্টির কারণে চীন এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এখন সেই পানি ভাঁটিতে নেমে দেশে বন্যার আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। ইতোমধ্যে বন্যার বিষয়ে ঢাকাকে সতর্ক বার্তাও দেয়া হয়েছে। তবে উজান থেকে পানি আসলেও বন্যার কোন আশঙ্কা দেখছে না দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে শেষ অবধি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, দেশের সমতলে দেশের প্রধান প্রধান নদ নদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীগুলোর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের এক বৈঠকে উল্লেখ করা হয়েছে চীনের বন্যার কারণে ভারতের অরুণাচল রাজ্যের তিন জেলা এবং অসমে ইতোমধ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। একই কারণে ভাঁটির দেশ বাংলাদেশে প্রভাব পড়তে পারে। চীনের সাংপো নদীর পানি ভারতের ব্রহ্মপুত্র হয়ে যমুনা নদীতে নেমে আসলে উত্তর পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এদিকে, অতি বৃষ্টির কারণে চীনের সাংপো নদীর বন্যার পানি ছেড়ে দেয়ায় বাংলাদেশে বন্যা হওয়ার আশঙ্কায় ঢাকাকে সতর্ক করেছে দিল্লী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, ‘তিব্বতে অতি বৃষ্টির কারণে সাংপো নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় ব্রহ্মপুত্রে পানি ছেড়ে দিয়েছে চীন। এর ফলে ভাঁটির দেশগুলোতে এর প্রভাব পড়বে। ইতোমধ্যে ভারতের অরুণাচল ও অসম রাজ্যকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকার জন্য দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বলা হয়েছে। ভারতের এই দুই রাজ্যে বন্যা হলে এর পানি বাংলাদেশে আসার আশঙ্কা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চীন সরকার বলছে, ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সাংপো নদী পানিতে ফুলে ফেপে উঠছে। গত ৫০ বছরের ইতিহাসের সর্বোচ্চ পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ভারতের অসম অরুণাচলের ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে পারে এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতরের ওই বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে উল্লেখ করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামসুদ্দিন আহমেদ জানান, সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে শেষ পর্যন্ত দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদী বন্যা হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামীতে অব্যাহত থাকতে পারে। সেপ্টেম্বরের ১০ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পেতে পারে। আর গঙ্গা-পদ্মার অববাহিকার পানি সমতলে স্থিতিশীল থাকতে পারে। সমুদ্রবন্দর সমূহে তিন নম্বর সতর্কতা ॥ এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত মৌসুমী নিম্নচাপটি একই এলাকায় আরও ঘণীভূত হয়ে মৌসুমী গভীর নি¤œচাপে পরিণত হয়। এটি সোমবার দুপুর ১২টায় দীঘার কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করেছে। বর্তমানে এটি গাঙ্গেয়পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর উড়িষ্যা এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি স্থলভাগের উপর আরও পশ্চিম/উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মৌসুমী নি¤œচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাফেরা করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে। নিজস্ব সংবাদদাতা কলাপাড়া থেকে জানান, বঙ্গোপসাগর ভয়াল হয়ে উঠেছে। উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে মাঝিসহ ১৬ জেলে নিয়ে ডুবে গেছে একটি মাছ ধরার ট্রলার। বুধবার রাতে এফবি মার্জিয়া আক্তার রীমা ট্রলারটি গভীর সাগরবক্ষে ডুবে গেছে। অপর একটি ট্রলার মাঝি-মাল্লাদের উদ্ধার করেছে। কিন্তু ট্রলার-জালসহ কোন কিছুই উদ্ধার করা যায়নি। বুধবার সন্ধ্যা থেকে সাগর হঠাৎ করে উত্তাল হয়ে ওঠায় হাজারো ট্রলার মাছ শিকার বন্ধ করে আলীপুর-মহিপুর বন্দরের শিববাড়িয়া চ্যানেলে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। তিন নম্বর সতর্ক সঙ্কেত থাকলেও ঢেউয়ের তা-ব ভয়াল। তবে এখনও কিছু মাছ ধরার ট্রলার তীরে এসে পৌঁছাতে পারেনি। বাকি যারা রয়েছে তারা শুক্রবার সকালের মধ্যে ঘাটে এসে পৌঁছাবে, এমনটাই জানিয়েছেন এখানকার ট্রলার মালিকরা। জেলে মোহাম্মদ হোসেন বলেন, সাগর এত উত্তাল যে ট্রলারে কেউ ঠিকমতো বসে থাকতে পারি নাই। এমনকি অনেকেই বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। জেলেরা জানায়, বরফ, তেল ও দৈনন্দিন বাজার নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফিরে আসতে হয়েছে। ফলে বড় ধরনের লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন তারা। নিজস্ব সংবাদদাতা মাদারীপুর থেকে জানান, ঝড়ো বাতাস ও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে বৈরী আবহাওয়ার কারণে পদ্মা নদী উত্তাল হয়ে উঠেছে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে দশটা থেকে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌরুটে সব লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় ফেরিতে ছিল প্রচ- যাত্রী চাপ। উত্তাল পদ্মায় ফেরি চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। এতে উভয় পাড়ে যাত্রী দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। ধীরে ধীরে বাতাসের গতিবেগ বৃদ্ধি পেয়ে পদ্মা নদী উত্তাল হয়ে উঠলে দুর্ঘটনা এড়াতে সকাল পৌনে দশটার দিকে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ। স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, প্রচ- ¯্রােতে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে এই সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। এতে ঘাট এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে যানজট। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঘাট এলাকায় আটকা ছিল ৩ শতাধিক গাড়ি।
×