ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আগামীকাল টাঙ্গাইল;###;সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি ৩-এর পাতায়

পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী ॥ জামালপুর

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী ॥ জামালপুর

আজিজুর রহমান ডল, জামালপুর ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে জমে উঠেছে জামালপুরের নির্বাচনী রাজনীতি। বইছে নির্বাচনের দমকা হাওয়া। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, জেলার পাঁচটি আসনেই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতা ততই বাড়ছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা চালাচ্ছেন ব্যাপক জনসংযোগ। দশম জাতীয় নির্বাচনে পাঁচটি আসনের মধ্যে চারটি আসনই রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দখলে। একটি আসন মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির দখলে। একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর কারণে জেলার পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগের অন্তর্কলহ থাকলেও দলটি আগামী নির্বাচনে সব আসনই শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চায়। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি চাইছে অন্তত দুটি আসন পেতে। জেলার সষিরাবাড়ী ছাড়া বাকি চারটি আসনেই বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী সরব রয়েছেন। পাঁচটি আসনেই রয়েছে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা। এরপরও দলটি চাইছে তাদের হারানো আসন পুনরুদ্ধার করতে। জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ) ॥ দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ; এ দুটি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে জামালপুর-১ আসন গঠিত। এ আসনটি মূলত আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলেও এ আসন পায় আওয়ামী লীগ। তখন এমপি নির্বাচিত হন আবুল কালাম আজাদ। এরপর ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে আবুল কালাম আজাদ এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হয়ে তিনি তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। মাঝে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে আসনটি আওয়ামী লীগের হাত ছাড়া হয়েছিল। এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের ছয়জন, বিএনপির তিনজন এবং জাতীয় পার্টির (এরশাদ) একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ টানা কয়েকবার ক্ষমতাসীন সরকারে থাকলেও এলাকায় দুই উপজেলায় তেমন কোন উন্নয়ন না করতে পারায় এবং দলীয় কোন্দলের কারণে বর্তমানে এ আসনে দলীয়ভাবে কিছুটা কোনঠাসা হয়ে আছেন। তাঁর নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলার মধ্যে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় সরকারের উন্নয়ন কাজে নজর না দেয়ায় এ উপজেলার দলীয় নেতাকর্মীরা ‘দেওয়ানগঞ্জে এমপি চাই’-এ স্লোগান তুলে প্রচার চালাচ্ছে। দলের মধ্যেই আবুল কালাম আজাদ বিরোধী একটি গ্রুপ প্রকাশ্যে রূপ নেয়ায় এবার দুই উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মনোয়নের প্রত্যাশায় মাঠে জনসংযোগ করছেন। আওয়ামী লীগের চরম কোন্দলের কারণে এ আসনটি জোটের শরিক দল জাতীয় পার্র্টিকেও ছেড়ে দিতে পারে বলেও এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই একাধারে চারবার এ আসনটিতে বিজয় পেয়েছে। বর্তমান এমপি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ একাধারে চারবার এ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। কিন্তু সরকারী বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ছাড়া দলীয়ভাবে তিনি চরম কোনঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। কোন্দল এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে কার্যত কাছের কিছু নেতাকর্মী ছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর তাঁর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। দলীয় নেতাকর্মীদের সামাল দিতে তিনি বেকায়দায় রয়েছেন। বিকল্প নির্ভরযোগ্য কোন প্রার্থী না থাকায় নির্বাচনের আগে এসব কোন্দল থাকবে না বলেও অনেকেই মনে করছেন। বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তনের প্রত্যাশা নিয়ে এবারও তিনি দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় জেলার শীর্ষ নেতা এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ মেডিসিন, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসতিয়াক হোসেন দিদারও মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে শোনা যাচ্ছে। তাঁরাও এলাকায় জনসংযোগ চালাচ্ছেন। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে খুবই দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এ অবস্থায় দলের সাবেক এমপি এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত এবার এ আসন পুনরুদ্ধারে মাঠে রয়েছেন। তিনি ছাড়াও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও জেলা মহিলা দলের সভাপতি সাহিদা আক্তার রীতা ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ুম নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে হাওয়া ভবন সংশ্লিষ্টতার কারণে এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত দীর্ঘদিন এলাকা ছাড়া থাকলেও কয়েক মাস ধরে পুনরায় তিনি তাঁর দেওয়ানগঞ্জের বাসভবন থেকে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সাহিদা আক্তার রিতা গতবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রায় ৭০ হাজার ভোট পান। কিন্তু বিজয়ী হতে পারেননি। এ আসনে বিএনপির রাজনীতিতে সাবেক আইজিপির আগমনকে কেন্দ্র করে বকশীগঞ্জে বিএনপি ও অঙ্গদলের মধ্যে কোন্দল ছড়িয়ে পড়ে। কোন্দলের কারণে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের জনপ্রিয়তা কখনই কাজে লাগাতে পারছেন না। ফলে আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী কে হচ্ছেন খোদ বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেই এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। অপরদিকে জাতীয় পার্টির সরকারের আমলের এ আসনের সংসদ সদস্য বর্তমানে জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী এম এ সাত্তার জোটের ভাগ পেলে এবার নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি ইতোমধ্যে দুই উপজেলাতেই সাংগঠনিক কর্মসূচীর পাশাপাশি জনসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এবার নতুন মুখ হিসেবে এ আসনে সাবেক মন্ত্রী-এমপি এম এ সাত্তারের ছেলে ব্যারিস্টার সামির সাত্তারও এলাকায় জনসংযোগ করছেন। তবে তিনি নৌকা প্রতীক চাইবেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। সামির সাত্তার নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে এলাকায় প্রায় দু’বছর ধরে জনসংযোগ ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত নৌকা প্রতীক যাকেই দেয়া হোক না কেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে এ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই। অপরদিকে দলীয় কোন্দলের কারণে এ আসনে জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টিকে দিলে বিএনপির জন্য এ আসন পুনরুদ্ধারের পথ অনেকটা সহজ করে দেয়া হবে বলেই অনেকেরই ধারণা। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ বলেন, ১৫ বছর ধরে এ আসনের দুই উপজেলায় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সর্বক্ষণিক মাঠে রয়েছেন। দলকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকা প্রতীকের জন্য কাজ করছি। আমি প্রত্যাশা করি, এ আসনে আমাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকার বিজয় দেখিয়ে দেব। দেওয়ানঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান দলীয় এমপি আবুল কালাম আজাদ দেওয়ানগঞ্জের উন্নয়ন ও রাজনীতিতে সময় না দেয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁর ওপর এবার নাখোশ। তাছাড়া এবার ‘দেওয়ানগঞ্জে এমপি চাই’ বলেও সর্বস্তরে একটা জোরালো দাবি উঠেছে। দলের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে এবং উপজেলা পরিষদের দায়িত্বে থাকার কারণে এ আসনে বিশেষ করে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার জন্য কাজ করার সুযোগ হয়েছে। নেতাকর্মীরা এবার চাইছে আমাকে। আমি মনোনয়ন পেলে অবশ্যই এ আসন উপহার দিতে পারব। জামালপুর-২ (ইসলামপুর) ॥ এ আসনটিও আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এ আসন থেকে টানা ছয়বার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত হাজি রাশেদ মোশাররফ। মাঝে একবার ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির কাছে হাতছাড়া হয়। আসছে নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রভাব খুবই শক্তিশালী অবস্থায় থাকলেও একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে সরব থাকায় এবার কে পাচ্ছেন নৌকা প্রতীক এ নিয়ে এলাকায় চলছে ব্যাপক গুঞ্জন। বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য হচ্ছেন আওয়ামী লীগের ফরিদুল হক খান দুলাল। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এবার এ আসন থেকে বর্তমান এমপি ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- সেক্টর কমান্ডার জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীরউত্তমের কন্যা বর্তমানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি মাহজাবিন খালেদ বেবী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ইসলামপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র জিয়াউল হক জিয়া, শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহাজাহান আলী ম-ল ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা কৃষিবিদ মঞ্জুরুল মোর্শেদ হ্যাপী। এ ছাড়াও মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টিও এ আসনটি চায়। শরিক দল থেকে এ আসন কব্জা করতে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইসলামপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সভাপতি মোস্তফা আল মাহমুদও বছরখানেক ধরে এলাকায় অবস্থান করে ব্যাপক জনসংযোগ এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকা-ের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে ফরিদুল হক খান দুলাল ও মাহজাবিন খালেদ বেবী ছাড়া বাকি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অতটা তোড়জোড় নেই এলাকায়। বর্তমান এমপি মোঃ ফরিদুল হক খান দুলাল এবারও মনোনয়ন নিশ্চিত করতে এলাকায় তাঁর সময়ের মধ্যে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে দিন-রাত জনসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে সরকারী চাকরি, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শুরু করে সব কাজে বিএনপি থেকে দলে সদ্য যোগদানকারীদের এবং তাঁর একান্ত কাছের নিকটাত্মীয়দের বেশি বেশি সুযোগ-সুবিধা দেয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সিংহভাগ নেতাকর্মীরা তাঁর প্রতি বিক্ষুব্ধ। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেও একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম ও ত্যাগী কিছু নেতাকর্মীর সঙ্গে তাঁর দা-কুমড়োর সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে। দলের মধ্যে চরম কোন্দল ছড়িয়ে পড়লেও জেলার নেতারা মনে করছেন, বিএনপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে বর্তমান এমপিই ভাল করবে। বর্তমান এমপি ফরিদুল হক খান দুলাল বলেন, দুইবার এমপি নির্বাচিত হয়ে গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দিয়ে ইসলামপুরে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করিয়েছেন। আমি এ আসনের গণমানুষের জন্য সময় ব্যয় করে থাকি। আমার আগের এমপিদের রেখে যাওয়া অবহেলিত এই উপজেলার মানুষ এখন উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছে। আমাকে মনোনয়ন দিলে আসনটিতে নৌকা প্রতীকের বিজয় অব্যাহত থাকবে। অপরদিকে সংরক্ষিত আসনের এমপি মাহজাবিন খালেদ বেবী তাঁর চাচা এলাকার ছয়বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবেক ভূমিমন্ত্রী প্রয়াত রাশেদ মোশাররফ এবং তাঁর বাবা জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীরউত্তমের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে এবার আসন থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেতে চান। প্রায় দুই বছর ধরে তিনি এলাকায় বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে প্রতিটি এলাকায় উঠান বৈঠক এবং জনসংযোগ করে এলাকার আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটার বিশেষ করে নারী ভোটারদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর এই কর্মসূচী নিয়ে এমপি ফরিদুল হক খানের সমর্থকদের মধ্যে ঈর্ষা দিনদিন বাড়ছে। তাঁর নজরকাড়া জনসংযোগের কারণে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থিতা নিয়ে সংশয়ের মাত্রা দিনদিন বাড়ছে। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী কৃষিবিদ মঞ্জুরুল মোর্শেদ হ্যাপী বলেন, এ আসনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে অনেক সংশয় শোনা যাচ্ছে। এলাকায় এবার নতুন মুখ চায় সবাই। এলাকার মানুষের জন্য আমি কাজ করতে চাই। সেই লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে জনসংযোগ করছি। দলীয় এবং সাধারণ স্তরের ভোটারদের মধ্যে আমাকে নিয়ে একটা আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারছি। আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলে আশা করি দলীয় সমর্থনের পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে এ আসনে নৌকার বিজয় উপহার দিতে পারব। অন্যদিকে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে নড়েচড়ে বসেছে বিএনপি। তবে এ আসনেও বিএনপির সাংগঠনিক অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি সুলতান মাহমুদ বাবু এবং উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ইসলামপুর উপজেলা পরিষদের সদস্য নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুল। জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) ॥ জেলার মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ এ দুটি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত আসনটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় নির্বাচনী এলাকা। আসনটি আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি বলা হয়ে থাকে। বর্তমান সরকারের বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এ আসন থেকে ১৯৯১ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন বিএনপি সরকার গঠন করেছিল। এরপর ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকেই সংসদ নির্বাচিত হন। টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হচ্ছে মির্জা আজম। বিগত নির্বাচনগুলোর চাইতে আসছে নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এবার নির্বাচনী প্রচারে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা করেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে তিনি মেলান্দহ-মাদারগঞ্জের আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোকে গতিশীল করতে প্রতিমাসেই কোথাও কর্মিসভা, কোথাও বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করেন। নেতাকর্মীদের সর্বক্ষণিক চাঙ্গা রাখতে নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন। তাঁর সফল নেতৃত্বে এ আসনের আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান সারা জেলার মধ্যে মডেল হয়ে উঠেছে। এ আসনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ষষ্ঠবারের মতো মির্জা আজমকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করতে আগাম প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন। এলাকায় সম্প্রতি একটি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ বিগত দিনে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও মির্জা আজমকে নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। নির্বাচনে অংশ নিলে বরাবরের মতো এবারও এ আসনে বিএনপির সঙ্গেই আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ আসনের দুটি উপজেলায় বিএনপির রাজনৈতিক ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাবেক নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বিএনপিতে যোগদানের পর থেকে মির্জা আজম বিরোধী একটি সেন্টিমেন্ট তৈরি করে এখনও তিনি মাঠে রয়েছেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক এবং মেলান্দহ উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদে রয়েছেন। দুই উপজেলার বিএনপির মধ্যে জনপ্রিয় হলেও দলীয় কোন্দলের কারণে তিনি ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। ওই নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ‘দেয়াল ঘড়ি’ প্রতীকে অংশ নিয়ে লক্ষাধিক ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মির্জা আজমের কাছে হেরে যান। এরপরও তিনি মাঠ ছাড়েননি। আসছে জাতীয় নির্বাচনেও তিনি বিএনপি থেকেই ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এ আসনে মির্জা আজমের সঙ্গে ভোটযুদ্ধে নামার মতো বিএনপির বিকল্প প্রার্থী না থাকায় তাঁর মনোনয়ন নিশ্চিতই বলা যায়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল মেলান্দহ-মাদারগঞ্জে বেশ নিয়মিতভাবেই রাজনৈতিক কর্মসূচী পালনের পাশাপাশি ব্যাপক গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এ আসনে জামায়াত-শিবির ও তাদের সমমনা ইসলামি দলের নেতাকর্মীদের কাছেও মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বেশ গ্রহণযোগ্য। তিনি ছাড়াও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য গোলাম রব্বানী, জাতীয় পার্টি থেকে সদ্য যোগদানকারী বিএনপি নেতা দৌলুতুজ্জামান আনসারীও এ আসনে ধানের শীষ প্রতীক পেতে এলাকায় প্রচার চালিয়ে আসছেন। তাঁরা কেন্দ্রেও লবিং করছেন। জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) ॥ এ আসনটি সরিষাবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনে ১৯৭০ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত কোন এমপি পর পর দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন এমন উদাহরণ কেউ সৃষ্টি করতে পারেননি। কিংবা একই দলের কোন প্রার্থী একাধিকক্রমে নির্বাচিত হয়েছেন এমন উদাহরণও নেই। বড় দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বাইরেও অন্য দলের প্রার্থীর জয়ী হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। আওয়ামী লীগ দাবি করে আসনটি তাদের ঘাঁটি। অন্যদিকে বিএনপিও দাবি করে আসনটিতে তাদের অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী। কিন্তু বাস্তবতা হলো দুই দলেরই কোন প্রার্থীই একাধিকক্রমে নির্বাচিত হননি। একবার যিনি নির্বাচিত হয়েছেন দ্বিতীয়বারে তিনি পরাজিত হয়েছেন। এভাবেই আসনে এমপি অদলবদল হয়ে আসছে। ১৯৯১ সালে বিএনপির মহাসচিব মরহুম ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদার আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদারকে হারিয়ে এমপি হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মাওলানা নূরুল ইসলাম। ২০০১ সালে মাওলানা নূরুল ইসলাম পরাজিত হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সালাম তালুকদারের ভাতিজা মেজর জেনারেল (অব) আনোয়ারুল কবীর তালুকদারের কাছে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান ডাঃ মুরাদ হাসান। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপির ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম। ডাঃ মুরাদ হাসান নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি ডাঃ মুরাদ হাসান। আওয়ামী লীগ এই আসনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। বিএনপি বর্জন করায় কোন প্রার্থী ছিল না। জাতীয় পার্টির মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মামুনুর রশীদ জোয়ারদার। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) প্রার্থী সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল। আওয়ামী লীগের সমর্থনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী মামুনুর রশীদ জোয়ারদার এমপি নির্বাচিত হন। পরে উপজেলা আওয়ামী লীগ এমপিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা এক ডজনেরও বেশি। এ কারণে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থিতা নিয়ে এবার আরও বেশি দলীয় কোন্দল ছড়িয়ে পড়েছে। কোন্দলের কারণে এ আসনের নৌকা প্রতীকের মনোনয়নের বিষয়টি কার্যত জেলা আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের চাইতে মূলত এ আসনে চলছে প্রার্থীদের নিজের শক্তি ও আধিপত্যের মহড়া। দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে এমপি না থাকায় এ উপজেলা উন্নয়ন বঞ্চিত হওয়া এবং নেতাকর্মীরা সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগকে মাথায় রেখে জেলা থেকে সকল প্রার্থীদের এক কাতারে আনারও চেষ্টা অব্যাহত হয়েছে। এবার লাঙ্গল নয়, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মনোনয়নের জন্য চলছে জোর লবিং। আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রশীদ, সাবেক এমপি ডাঃ মুরাদ হাসান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান হেলালের নাম উল্লেখযোগ্য। তাদের মধ্যে অধ্যক্ষ আব্দুর রশীদ ও ডাঃ মুরাদ হাসানের সমর্থকরা মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি শোডাউনের মধ্য দিয়ে নিজেদের কোন্দল তীব্র আকারে ছড়িয়ে পড়ায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে এবারও এ আসন জাতীয় পার্টিকে দেয়ার শঙ্কাও বাড়ছে। কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপিতে মনোনয়ন নিয়ে নিজেদের প্রতিযোগিতা নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতাও নেই। জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম একক প্রার্থী। বর্তমানে শামীম তালুকদার সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। অন্যদিকে নির্বাচনের প্রচারে নেমেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) প্রার্থী সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল। জাতীয় পার্টির এমপি মামুনুর রশীদ জোয়ারদার পুনরায় আওয়ামী লীগের জোটের হয়ে মনোনয়নের প্রত্যাশায় এবারও তিনি জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক এমপি ডাঃ মুরাদ হাসান বলেন, পাঁচ বছর এমপি থাকা অবস্থায় সরিষাবাড়ীতে আমি ব্যাপক উন্নয়নসহ রাজনৈতিকভাবে দলকে সুসংগঠিত করতে অক্লান্ত শ্রম দিয়েছি। এবারও আমি মনোনয়ন চেয়েছি। আশা করি আমাকেই নৌকা প্রতীক দেয়া হবে। সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ান হোসেন বাদশা বলেন, সরিষাবাড়ীতে এ আসন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বঞ্চিত। একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে থাকায় কিছুটা বিভেদ থাকলেও এ আসনে যদি নৌকা প্রতীক দেয়া হয় তাহলে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই মিলে কাজ করব এবং বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারব। জামালপুর-৫ (সদর) ॥ জামালপুরের পাঁচটি আসনের মধ্যে জামালপুর সদর আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা নিয়ে গঠিত আওয়ামী লীগের পুরনো ঘাঁটি বলে খ্যাত এ আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। সেবার বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সিরাজুল হক নির্বাচিত হয়ে বিএনপি সরকারের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী হয়েছিলেন। পরবর্তীতে একাধারে ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ রেজাউল করিম হীরা এ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি ভূমিমন্ত্রী হয়েছিলেন। বর্তমান সরকারের আমলেও তিনি ভূমি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদে রয়েছেন। জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে আওয়ামী লীগের ভেতরে-বাইরে এবং সাধারণ ভোটারদের মধ্যে মোঃ রেজাউল করিম হীরার গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও তার বার্ধক্যগত এবং দলে একাধিক বিকল্প মনোয়ন প্রত্যাশীরা খুব জোরালোভাবে মাঠে থাকায় এবার এ আসনে তার মনোনয়ন নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। কেন্দ্র থেকে তাকে মনোয়ন না দিলে কাকে দিয়ে এ আসনের বিজয় নিশ্চিত করা হবে এ নিয়ে চলে ব্যাপক হিসাব নিকাশ। দলে আরও কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও কোন কারণে মোঃ রেজাউল করিম হীরা মনোনয়ন নিশ্চিত না হলে জেলা কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরীকে বিকল্প হিসেবে ভাবছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা জেলার রাজনীতিতে প্রভাবশালী এই সচ্ছল নেতার নেতৃত্বেই মূলত জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি পরিচালিত হয়ে আসছে। ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী নিজেও এলাকায় জনসংযোগ করে চলেছেন। তার সমর্থনে নৌকায় ভোট প্রার্থনার পোস্টার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে এ আসনের ১৫টি ইউনিয়ন। তিনি ইতোমধ্যে ১৫টি ইউনিনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে জনসংযোগ করছেন। জনসংযোগে জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলোর অধিকাংশ নেতা-কর্মীদের তার সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পোশাকশিল্প ব্যবসায়ী ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন, শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আইনজীবী এইচ আর জাহিদ আনোয়ার, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী মারুফা আক্তার পপি, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ব ম জাফর ইকবাল জাফু, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রেজাউল করিম রেজনু সিআইপি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডাঃ আব্দুল মান্নান ও জামালপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিজন কুমার চন্দ। তাদের মধ্যে শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে বিগত তিনটি নির্বাচনে কেন্দ্রে লবিং করেও মনোনয়ন বঞ্চিত হন। কিন্তু তিনি মাঠ ছাড়েননি। আসছে নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ১৫টি ইউনিয়নে রাজনৈতিক কর্মসূচী, সামাজিক অনুষ্ঠানাদি, খেলাধুলা আয়োজনে সহায়তা দেয়াসহ এলাকায় জনসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এ আসনটি আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়েছিল ১৯৯১ সালের নির্বাচনে। সেবার বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সিরাজুল হক নির্বাচিত হয়ে বিএনপি সরকারের স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী হয়েছিলেন। উপমন্ত্রিত্ব, ব্যক্তি ইমেজ ও প্রভাব বিস্তার করে বেশ দাপটের সঙ্গে ওই সময় বিএনপিকে সুসংগঠিত করলেও পরবর্তীতে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে জেলা বিএনপির রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেলেও আর জয়ের মুখ দেখেননি। সেই কোণঠাসা অবস্থা বিরাজমান থাকা অবস্থায় জেলা বিএনপির রাজনীতিতে জায়গা করে নেন তার উত্থানের কারিগর তারই শ্যালক বর্তমান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী শাহ মোঃ ওয়ারেছ আলী মামুন। মামুন ইতোমধ্যে দুই মেয়াদে জামালপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার সুবাধে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের আস্থাভাজন অর্জন করেন। এখানে বিএনপি তিনটি গ্রুপে বিভক্ত থাকলেও মূল ধারার রাজনৈতিক কর্তৃত্ব এখন শাহ মোঃ মামুনের কব্জায়। তাকে কেন্দ্রীয় বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহসাংগঠনিকের দায়িত্বও দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কেন্দ্রীয় বিএনপি এবার শাহ মোঃ ওয়ারেছ আলী মামুনকেই এ আসনের ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবেই ধরে রেখেছে বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যদিও বিএনপি সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী মোঃ সিরাজুল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী বিএনপির সাবেক সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনি, জামালপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মোঃ আমজাদ হোসেন ভোলা মল্লিকও আসছে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে কেন্দ্রে লবিং করছেন। অতটা তোড়জোড় না থাকলেও তারাও এলাকায় জনসংযোগ চালিয়ে নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সমর্থন আদায়ে জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া সাংগঠনিকভাবে অতটা ভিত না থাকলেও জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মোঃ জাকির হোসেন এ আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা-এরশাদ) থেকে একক প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান এমপি রেজাউল করিম হীরা বলেন, জামালপুর সদর উপজেলায় আমার সময়ে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আশা করি এ আসনে আমাকেই নৌকা প্রতীক দেয়া হবে। আমি প্রস্তুত আছি। একই সঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের প্রতি আস্থা রেখে বলেছেন, এ আসনে যাকেই নৌকা প্রতীক দেয়া হবে, তার সঙ্গেই থাকব। টানা চারবার বিজয়ের ধারাবাহিকতায় সদর আসনটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে চাই। মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী বলেন, এ আসনটি যেমন নৌকার ঘাঁটি। আবার এ আসনে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপি-জামায়াত মোকাবেলায় এ আসনে দরকার অতীত দিনের চাইতে আওয়ামী লীগে একটি শক্তিশালী প্রার্থী। এ আসনের বিজয় ধরে রাখতে সেই দিক বিবেচনায় আমি সদর আসনে মনোনয়ন পেতে চাই। আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলে দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চাই এই নির্বাচনে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে এ আসন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চাই। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ বলেন, এ আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ। অতীতের অবদান, বর্তমানের ভূমিকা ও ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে দক্ষ এবং মেধাবীকে মনোনয়ন দিতে হবে। যারা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে। শুধু সদর নয়, নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন যাকেই দেয়া হোক, জেলার পাঁচটি আসনের বিজয়ের লক্ষ্য নিয়েই আমাদের প্রস্তুতি চলছে। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নিলোফার চৌধুরী মনি বলেন, সংরক্ষিত এমপি থাকাকালীন জামালপুর সদরের ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় নেতাকর্মীদের নিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেছি। দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরাই আমার সঙ্গে আছে। সেজন্যই আমি সাহস পাই এ আসনে নির্বাচন করতে। আশা করি দল আমাকে মনোনয়ন দিবে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শাহ মোঃ ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, একটানা দুই বছর জামালপুর পৌরসভার মেয়র থাকা অবস্থায় এবং দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেয়ার পর প্রতিটা ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ঝিমিয়ে পড়া সংগঠনকে শক্তিশালী করেছি। যদি এ আসনে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে বিপুল ভোটে জয়ী হতে পারব।
×