ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাফ ফুটবলে তপুর গোলে উড়ে গেল পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সাফ ফুটবলে তপুর গোলে উড়ে গেল পাকিস্তান

রুমেল খান ॥ প্রতিশোধ নেয়ার আনন্দই অন্যরকম। আহা কি আনন্দ গগনে সমীরণে ... জয় ফুটবলের, জয় বাংলাদেশের! ‘দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ’ খ্যাত সাফ সুজুকি কাপে (সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ) দীর্ঘ পাঁচ বছর পর পাকিস্তানকে হারিয়ে (বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত) কড়ায়-গ-ায় মধুর প্রতিশোধ নিল বাংলাদেশ। এই জয়ে সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রাখলো ‘দ্য বেঙ্গল টাইগার্স’ দল। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর নিজেদের শেষ গ্রুপ ম্যাচে নেপালের বিরুদ্ধে খেলা বাংলাদেশের। ওই ম্যাচে ন্যূনতম ড্র করলেই শেষ চারে নাম লেখানো নিশ্চিত হয়ে যাবে ১৯৪ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারীদের। ২ খেলায় ৬ পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে লাল-সবুজবাহিনী। সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট করে নেপাল ও পাকিস্তানের। তবে গোল তফাতে এগিয়ে থাকায় দুইয়ে আছে হিমালয়ের দেশ নেপাল। বৃহস্পতিবার যেন ‘শনির দশা’য় পেয়ে বসেছিল বাংলাদেশকে। কোন কিছুই যেন মনমতো হচ্ছিল না তাদের। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে জয় নিশ্চিত হবার পর দুই দলের খেলোয়াড়ই মাঠে লুটিয়ে পড়লেন। পাকিস্তানীরা হতাশায়, বাংলাদেশীরা চিত্তসুখে! ৮২ মিনিটে বক্সের ডানপ্রান্তে ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। মামুনুলের বাড়ানো বল পোস্টে রাখতে পারেননি তপু বর্মণ। তবে ৮৫ মিনিটে বাংলাদেশের আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন এই তপুই। বাঁপ্রান্ত থেকে বিশ্বনাথের লম্বা থ্রো তে বল পেয়ে পোস্টের খুব কাছ থেকে জটলার মধ্যে হেড করে কাক্সিক্ষত ঠিকানায় বল পাঠিয়ে দেন তপু বর্মণ (১-০)। উল্লাসে ফেটে পড়ে গ্যালারি, উল্লাসে মাতোয়ারা হয় পুরো দেশ। আনন্দে জার্সি খুলে গোল উদযাপন (উদযাপন করেন বন্দুকের গুলি করার ভঙ্গিতে) করতে গিয়ে খুলে ফেলেন জার্সি। এর শাস্তিও পেয়েছেন হলুদ কার্ড দেখে। তবে বাংলাদেশের আনন্দের সামনে এই হলুদ কার্ড যে কিছুই না! অথচ গোল হবার আগ পর্যন্ত গ্যালারির চিত্র ছিল ভিন্ন। দর্শকরা হতাশ-সন্দিহান হয়ে পড়েন বাংলাদেশের জয় নিয়ে। অনেক দর্শকই গ্যালারি ছাড়তে শুরু করেন ৮০ মিনিটের পর থেকে। এর ৫ মিনিট পরেই গোলের দেখা পেলে বের হয়ে যাওয়া দর্শকরা আফসোসে মরেছেন গোল চাক্ষুষ দেখতে না পেরে। আর যারা দেখেছেন, তাদের তো পোয়াবারো! নেপালে অনুষ্ঠিত ২০১৩ সালের সাফ ফুটবলে গ্রুপপর্বে এই পাকিস্তানের কাছেই ২-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার সেই হারের বদলা নিল বাংলাদেশ। সপ্তদশতম মুখোমুখি লড়াইয়ে এ নিয়ে সাতবার জিতলো বাংলাদেশ। ২০১ ফিফা র‌্যাঙ্কিংধারী পাকিস্তানের জয় ৬টিতে। বাকি ৪ ম্যাচ ড্র হয়। দু’দলই এদিন ম্যাচ শুরুর সময় ফর্মেশন সাজায় ৪-২-৩-১ পদ্ধতিতে। এদিন বাংলাদেশ দলের একাদশে একটি পরিবর্তন ছিল। ডিফেন্ডার আতিকুর রহমান ফাহাদ ইনজুরিতে থাকায় তার বদলে একাদশে ঢোকেন মিডফিল্ডার সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম। প্রথমার্ধে মাঝমাঠের দখল নিতে পারেনি লাল-সবুজরা। তাদের আক্রমণ ছিল উইংনির্ভর (বিশেষ করে লেফট উইং)। পাকিস্তানের বক্সে ফেলা উঁচু সেন্টারগুলোর একটিও মাথায় নিতে পারেননি বাংলাদেশের তিন ফরোয়ার্ড সুফিল-বিপলু-সাদ। পারবেন কি করে, তাদের চেয়ে পাকিস্তানী ডিফেন্ডাররা যে দৈত্যের মতো লম্বা! তাছাড়া পাসগুলো অনেক সময় ঠিকঠাক হচ্ছিল না। পক্ষান্তরে বল পজেশনে পিছিয়ে থাকলেও (৬২%-৩৮%) সুযোগ পেলেই প্রতি-আক্রমণে উঠেছে ‘পাক শাহিন’ খ্যাত পাকিস্তান। তাদের প্রতিটি আক্রমণই ছিল বিপজ্জনক। এর বিপরীতে বাংলাদেশের আক্রমণ ছিল মাত্র একটি! বাকিগুলো আক্রমণ ছিল না, ছিল ‘আক্রমণ-প্রচেষ্টা’। যেগুলো ছিল দুর্বল, পরিকল্পনাহীন এবং অঙ্কুরেই বিনষ্ট! বাংলাদেশ-ভুটান ম্যাচের চেয়েও বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচে দর্শক সমাগম ছিল বেশি। এই মাঠে সর্বশেষ এমন ভিড় দেখা গিয়েছিল ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মালয়েশিয়া যুব দলের কাছে ২-৩ গোলে হেরে গিয়েছিল স্বাগতিক দল। ওই ম্যাচে স্টেডিয়ামের গ্যালারি ছিল পরিপূর্ণ। এদিন গ্যালারিতে হাজির ছিলেন ১৫ হাজারেরও বেশি ফুটবলপ্রেমী। তারা ভুভুজেলা বাজিয়ে, হাততালি বাজিয়ে, চিৎকার করে নিজ দলের ফুটবলারদের অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি প্রথমার্ধে। পাকিস্তানকে এই ম্যাচে হারালেই সেমিতে উঠতে পারতো বাংলাদেশ। এই আসরে তারা সর্বশেষ সেমিফাইনাল খেলেছিল ২০০৯ আসরে। সেবারও বাংলাদেশ ছিল স্বাগতিক। ১১ ডিসেম্বরের সেই সেমিতে ভারতের কাছে ০-১ গোলে হেরে ফাইনালে ওঠার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল বাংলাদেশের। দ্বিতীয়ার্ধে কৌশল বদলে খেলার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। আগের অর্ধের চেয়ে অনেকটাই ভাল ও আক্রমণাত্মক ও গতিশীল ফুটবল খেলে তারা। কিন্তু তাদের আক্রমণগুলো বারবার পর্যবসিত হচ্ছিল ব্যর্থতায়। দীর্ঘ সময় পর আবারও দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সফল দল হওয়ার সুযোগ এসেছে লাল-সবুজদের জন্য। পাঁচ ধাপের প্রথমটি বেশ সফলভাবেই পেরিয়েছে তারা। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিনে ভুটানকে ২-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে স্বপ্নপূরণের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেছে জামাল ভুঁইয়ারা। আগেরদিন প্রতিপক্ষ হিসেবে খুবই পাকিস্তানকে ‘কঠিন’ বলে মনে করছিলেন জেমি ডে। তার আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করেই স্থায়ুক্ষয়ের ম্যাচে জিতল বাংলাদেশ।
×