ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

চোখে পড়ছে না অবৈধ গাড়ি পার্কিং ॥ অবশ্য যত্রতত্র বাস থামানো বন্ধ হয়নি, বেপরোয়া পথচারী

বদলে যাচ্ছে রাজধানীর সড়কের চিত্র, হেলমেট ছাড়া তেল মিলছে না

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বদলে যাচ্ছে রাজধানীর সড়কের চিত্র, হেলমেট ছাড়া তেল মিলছে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানী ঢাকার সড়কের চিত্র অনেকটাই পাল্টে গেছে। সবচেয়ে দৃশ্যমান হলো বেশিরভাগ মোটরসাইকেল চালক এখন হেলমেট ব্যবহার করছেন। যদিও পেছনের আরোহীদের ক্ষেত্রে হেলমেট খুব একটা দেখা যায়নি। বিআরটিএর হিসাব অনুযায়ী রাজধানীর মোট পরিবহনের প্রায় অর্ধেকই এখন মোটরসাইকেল! ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ’র মোবাইল কোর্টের কারণে, বৃহস্পতিবার গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল খুবই কম। প্রাইভেটকারও অন্য দিনের তুলনায় কম চলেছে। হেলমেট ছাড়া পেট্রোল পাম্প থেকে মোটরসাইকেল চালকদের তেল সরবরাহ করা হয়নি। বেশিরভাগ বাসের দরজা খোলা ছিল। কোন বাসেই চালক ও হেলপারের পরিচয়পত্র-মোবাইল নম্বর টানাতে দেখা যায়নি। ফার্মগেট, মোহাম্মদপুরসহ কিছু এলাকায় লেগুনা চলতে দেখা গেছে। যত্রতত্র বাস থামানোর চিত্র আগের মতোই। চলমান অভিযানের কারণে অনেক সড়ক ছিল ফাঁকা। মতিঝিল, মৌচাক, পল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ, মগবাজার, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ গাড়ি পার্কিং খুব একটা চোখে পড়েনি। মতিঝিলে অবৈধ পার্কিং করা কয়েকটি প্রাইভেটকারে পুলিশকে তালা লাগিয়ে দিতে দেখা গেছে। পুলিশ বলছে, রাজধানীতে পরিবহন চালকরা বেপরোয়া একথা সত্য। কিন্তু সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া পথচারী। তারা কোনভাবেই রাস্তা পারাপারে আইন মানতে চান না। বুঝিয়ে-শুনিয়েও আ্ইন মানাতে বাধ্য করা যাচ্ছে না। বার বার অনুরোধের পরও অনেককেই ইচ্ছেমতো সড়ক পারাপার হতে দেখা গেছে। হাতের কাছে ওভারব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস থাকলেও অনেকেই তা ব্যবহার করতে চান না। জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপারের নিয়ম জানেন না অনেকেই। তবে বেপরোয়া পথচারীদের শায়েস্তা হতে দেখা গেছে ফার্মগেট এলাকায়। সেখানে বিআরটিএ মোবাইল কোর্ট বেপরোয়া পথচারীদের জরিমানা করেছে। তবে এও সত্য যে, আগের চেয়ে ওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস ব্যবহার বেড়েছে। বেড়েছে নিয়মতান্ত্রিক রাস্তা পারাপারও। পুলিশ বলছে, দীর্ঘদিনের অভ্যাস পরিবর্তনে চাই জনসচেতনতা। আস্তে আস্তে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে জানান তারা। মাসব্যাপী ট্রাফিক সচেতনতা কর্মসূচীতে পুলিশকে সহযোগিতা করছে রেড ক্রিসেন্ট ও স্কাউট সদস্যরা। নো হেলমেট নো তেল ॥ রাজধানী ঢাকার পাম্পগুলোর দৃশ্যও অন্যরকম। প্রতিটি পাম্পে হেলমেট ছাড়া তেল না দেয়ার নোটিস ঝোলানো হয়েছে। সবাই এখন হেলমেট ব্যবহার করে নিচ্ছেন তেল। যারা হেলমেট ছাড়া আসেন তাদের বলা হচ্ছে, ‘নো হেলমেট নো তেল’। হেলমেট ছাড়া তেল না দিতে গত মঙ্গলবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে পাম্পগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর থেকেই এ নির্দেশনা কার্যকর করেছে পাম্প পরিচালকরা। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কয়েকটি পাম্প ঘুরে দেখা গেছে, বাইক চালকদের হেলমেট ছাড়া তেল দেয়া হচ্ছে না। পাম্পের মেশিনে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে এ সংক্রান্ত নোটিস। যারা হেলমেট ছাড়া তেল নিতে আসছেন, তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। কোন অনুরোধ মানা হচ্ছে না তাদের। হেলমেটবিহীন চালকদের তেল না দেয়ার জন্য নির্দেশনাকে সাধুবাদ জানিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে ‘পথের বন্ধু’ ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী খোকন বলেন, আমরা হেলমেট ছাড়া কাউকে তেল দিচ্ছি না। আর তার থেকে বড় কথা তেল পাবে না এই ঝুঁকি থাকায় কেউ হেলমেট ছাড়া তেল নিতে আসছেনও না। মুগদা, রমনা পেট্রোল পাম্প ঘুরে দেখা যায়, তেল নিতে আসা বাইকচালকদের হেলমেট রয়েছে। সবাই সারিবদ্ধভাবে তেল নিচ্ছেন। পরিবাগের মেঘনা পাম্পে গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র। হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেলে তেল দেয়া হচ্ছে না। পাম্প কর্তৃপক্ষ বলেন, ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে এসে বলে গেছেন হেলমেট ছাড়া তেল না দিতে। আমরা সে নির্দেশনা পালন করছি। নিরাপদ পারাপারে পুলিশের মতবিনিময় ॥ নিরাপদে রাস্তা পারাপারে সচেতনতা বাড়াতে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের আয়োজনে বৃহস্পতিবার মোহাম্মদপুরের অঙ্গন কমিউনিটি সেন্টারে ‘ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপদ রাস্তা পারাপার সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা’র আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপ-পুলিশ কমিশনার লিটন কুমার সাহা, ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারসহ পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের আওতাধীন স্কুল-কলেজের প্রায় শতাধিক শিক্ষক অংশ নেন। সভায় স্কুল ও কলেজের উপস্থিত শিক্ষকরা তাদের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপার, স্কুলের নিকট যানবাহনসমূহের নিরাপদ গতিতে চলাচল, প্রতিষ্ঠানের সামনে জেব্রা ক্রসিং ও রোড মার্কিং স্থাপনসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। সমস্যা সমাধানে পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেন তারা। পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়। পাশাপাশি নিরাপদ রাস্তা পারাপারের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের তাদের স্কাউট ও বিএনসিসি সদস্যদের নিয়োজিত করতে অনুরোধ জানান। লিটন কুমার সাহা বলেন, শুধু ট্রাফিক পুলিশের ওপর দায় দিলে চলবে না, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপদ সড়কের জন্য বিআরটিএ, সিটি কর্পোরেশন, ছাত্রছাত্রীবৃন্দ, অভিভাবকবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। উল্টো পথে গেলেই জরিমানা ॥ বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে শুধু উল্টো পথে গাড়ি চালানোর অপরাধে ৩৬৪ গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানানো হয়, উল্টো পথে গাড়ি চালানো ছাড়াও হাইড্রলিক হর্ন ব্যবহারের দায়ে ৭১, হুটার বা বিকনলাইট লাগানোর জন্য ৭ গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশ স্টিকার লাগানোর জন্য ২টি গাড়ি, মাইক্রোবাসে কালো গ্লাস লাগানোর জন্য ১৪টি, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল বা এয়ারফোন ব্যবহার করার জন্য ১৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এদিকে মোটরসাইকেল চালকদের বিভিন্ন অপরাধের জন্য ২ হাজার ৪৮৩ টি মামলা হয়েছে। আটক করা হয়েছে ১৪৭টি মোটরসাইকেল। বিআরটিএর হিসেবে রাজধানীতে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ১১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি। এরমধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রায় চার লাখ ৯৫ হাজার। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে লেগুনা চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ১২১টি বাস স্টপেজ ছাড়া কোন অবস্থাতেই নগরীতে বাস থামানো যাবে না। যত্রতত্র গাড়ি থামালে মামলা করার কথাও বলেন তিনি। সেই সঙ্গে হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালকদের কোন পেট্রোল পাম্পে তেল না দেয়ার কথা জানিয়ে কমিশনার বলেন, দরজা বন্ধ করে বাস চালাতে হবে। আন্ডারপাস ও ওভারব্রিজ ব্যবহারসহ যত্রতত্র রাস্তা পারাপার বন্ধে জনসচেতনতায় বিশেষ বিশেষ পয়েন্টে মাইকিং করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। ৫-৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ‘মাসব্যাপী ট্রাফিক আইন প্রয়োগ ও ট্রাফিক সচেতনতামূলক কর্মসূচী-২০১৮’ উপলক্ষে ঢাকা মহানগরী এলাকায় ট্রাফিক আইনে বিদ্যমান বিভিন্ন ধারা অনুযায়ী রুট পারমিটবিহীন, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন যানবাহন, ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী যানবাহন এবং চালকের বিরুদ্ধে ১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশ অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
×