ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি আমলে বিদ্যুত খাতকে নজিরবিহীনভাবে পিছিয়ে দেয়া হয় ॥ প্রধানমন্ত্রী

আজ আলোর উৎসব ॥ বিদ্যুত উৎপাদন ২০,০০০ মেগাওয়াটের মাইলফলক স্পর্শ করায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আজ আলোর উৎসব ॥ বিদ্যুত উৎপাদন ২০,০০০ মেগাওয়াটের মাইলফলক স্পর্শ করায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উৎপাদন ক্ষমতায় ২০ হাজার মেগাওয়াটের মাইলফলক স্পর্শ করেছে বিদ্যুত খাত। আজ ২০ হাজার মেগাওয়াটের মাইলফলক উদ্যাপনে হবে আলোক উৎসব। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, সদরঘাট আর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে হবে এই আলোক উৎসব। বৃহস্পতিবার বিদ্যুণ্ড জ¦ালানি সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য স্পর্শের ঘোষণা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় তিন দিনের এই আয়োজন উদ্বোধন করে বলেছেনÑ দেশের বিদ্যুত চাহিদা পূরণে নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা সৃষ্টি করে বিদ্যুত খাতের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। ঢাকায় বিদ্যুত জ¦ালানি সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা তার সরকারের সময় মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দিতে ব্যাপক কর্মকা-ের কথা তুলে ধরে বলেন,বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে দেশের বিদ্যুত খাতকে যেভাবে পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল, তা নজিরবিহীন, যা পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায়নি। বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে তিন দিনের বিদ্যুত জ¦ালানি সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। বিদ্যুত সপ্তাহের অনুষ্ঠানের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াটের মাইলফলক স্পর্শ করায় আজ সন্ধ্যায় আলোক উৎসব করা ছাড়াও বিশেষ সেমিনার এবং বিদ্যুত জ¦ালানি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বলা হচ্ছে দেশের ১২৪টি বিদ্যুতকেন্দ্রের স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ১৭ হাজার ৪৩ মেগাওয়াট। এর সঙ্গে ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো থেকে আরও ২ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে প্রায় ২৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হচ্ছে। সে হিসেবে মোট উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়ায় ২০ হাজার ১৩৩ মেগাওয়াট। এছাড়া আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে আসছে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিদ্যুত জ¦ালানি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। দ্রুত বিদ্যুত উৎপাদনে বিশেষ অবদান রাখায় রাষ্ট্রীয় নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (এনডব্লিউপিজিসিএল) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও) পুরস্কৃত করা হয়েছে। সরকারী কোম্পানিটি এক হাজার ২১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করছে। কোম্পানিটি দুই হাজার ৭২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। আর তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনায় রয়েছে ছয় হাজার ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র। স্বল্প সময়ে বিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদনে আনায় সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান, সেরা বিদ্যুত কেন্দ্রের পুরস্কার পেয়েছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ভোলা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের জন্য পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন। দ্রুত বিদ্যুত সম্প্রসারণে পুরস্কার দেয়া হয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে। বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন পুরস্কারটি গ্রহণ করেন। এছাড়া গ্যাস কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড, সেরা এলপিপিজি হিসেবে ওমেরা এলপিজি, বিদ্যুত খাতে অবদান রাখায় ইউনাইডেট গ্রুপ। সেরা পত্রিকা রিপোর্টিং (প্রিন্ট মিডিয়া) যৌথভাবে দুজন এবং একজন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার রিপোর্টারের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনে বিদ্যুত খাত নিয়ে আলোচনা করেছেন উল্লেখ করে বলেন, আমরা একটা বিমসটেক সোলার গ্রিড লাইন করে দিচ্ছি। এই আন্তঃদেশীয় গ্রিডলাইনের মাধ্যমে কে কত বেশি বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারে, তা থেকে বাংলাদেশ কিনবে, এটা আমরা স্পষ্ট করে ফেলেছি। আঞ্চলিক সহযোগিতার যুগান্তকারী পদক্ষেপটা আমরা ইতোমধ্যেই গ্রহণ করেছি। তার সরকার বিগত সাড়ে নয় বছরে দেশের বিদ্যুত খাতের সম্প্রসারণে বেশ কিছু আঞ্চলিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সহযোগিতা চুক্তির আওতায় স্থাপিত দু’দেশের বিদ্যুত সঞ্চালন কেন্দ্রের মাধ্যমে ভারত থেকে প্রথম গ্রিড আন্তঃসংযোগের মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। এ ক্ষমতা ১০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিতীয় গ্রিড আন্তঃসংযোগ উদ্বোধনের মাধ্যমে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হচ্ছে। আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি শীঘ্রই উদ্বোধন করা হবে। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের কাছে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত বিক্রি করতে চেয়েছেন। এর বাইরে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত ভারত থেকে আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি নেপাল এবং ভুটান থেকে জলবিদ্যুত আমদানির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত মাসেই তার সরকার নেপালের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশ, ভুটান এবং ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে সরকার গঠন করে বিদ্যুত পেয়েছিলাম মাত্র এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট, চরদিকে হাহাকার, এদেশের অধিকাংশ মানুষের ঘরে আলো ছিল না। সেই অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য সর্বপ্রথম আইন করে আমরা বেরকারী খাতে বিদ্যুত উৎপাদন শুরু করি এবং বেসরকারী খাতকে উন্মুক্ত করে দেই। ফলশ্রুতিতে আমরা মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই এক হাজার ৬০০ থেকে বিদ্যুত উৎপাদন ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে নিয়ে যেতে সক্ষম হই। সেই সঙ্গে জেনারেটরের ওপর থেকে সব ট্যাক্স তুলে দেই এবং শিল্প কারখানার মালিকদের বলে দেই আপনারাও আপনাদের মতো বিদ্যুত উৎপাদন করুন এবং সেই বিদ্যুত আশপাশে বিক্রিও করতে পারবেন। আমরা গ্রিড লাইন আপনাদের ভাড়া দেব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু, ২০০৯ সালে যখন আমরা সরকারে আসি তখন দেখি বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ যা আমরা রেখে গিয়েছিলাম, তার থেকে কমে ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট হয়ে গেছে। পৃথিবীর আর কোন দেশের জনগণের এ ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে বলে তাঁর জানা নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাঁচ বছরে কোন দেশ এভাবে পিছিয়ে যায়, সেটাও আমার জানা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তৃতায় বলেন, বর্তমানে আমাদের বিদ্যুত উৎপাদন খরচ প্রতি ইউনিট ৬ দশমিক ২৫ টাকা। কিন্তু বিক্রি মূল্য রাখা হয়েছে ৪ দশমিক ৮২ টাকা। কাজেই এখানে আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি। অর্থাৎ বিদ্যুত উৎপাদনে যে খরচ তা আমরা গ্রাহকের কাছ থেকে নিচ্ছি না। প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুত ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য সকলকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। নেপালের জ¦ালানি, পানি সম্পদ ও সেচমন্ত্রী বার্সামান মুন অনন্ত বিদ্যুত জ¦ালানি সপ্তাহের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশের মধ্যে জ¦ালানি সহায়তা সৃষ্টির ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তার দেশ সহায়তা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। ইতোমধ্যে উভয় দেশ বিদ্যুত সহায়তা সম্প্রসারণে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। নেপালে আগামী ১০ বছরে ১৫ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদন করবে। তিনি মনে করেন এই উদ্যোগের অংশীদার হতে পারে বাংলাদেশ। প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আজ আমরা ৪৭ লাখ গ্রাহক থেকে ৩ কোটি ৮ লাখ গ্রাহকে উন্নীত করেছি। বিপুল জনগোষ্ঠীকে সেবা দিতে বিদ্যুত জ¦ালানি বিভাগের কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়াতে তিনি ধন্যবাদ জানান। মন্ত্রী বলেন, এখন পৃথিবীর বড় বড় বিনিয়োগকারী আমাদের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। বিদ্যুত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতের মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে। সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার কাজ করছে। ইতোমধ্যে দেশের বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ১৩৩ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। তিনি জানান স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অগ্রগতি বিস্ময়কর। বিদ্যুত জ¦ালানি সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুত জ¦ালানি খাতের সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন কোম্পানির স্টল ঘুরে দেখেন। মেলাতে সরকারী- বেসরকারী সকল কোম্পানি স্টল দিয়ে নিজেদের কার্যক্রম তুলে ধরছে।
×