ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রুপীর রেকর্ড দর পতনে ভারতে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রুপীর রেকর্ড দর পতনে ভারতে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ডলারের সাপেক্ষে রোজ পতনে তল পাচ্ছে না রুপী। লক্ষণ নেই বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমারও। তাই ভারতে পেট্রোল, ডিজেলের দরে সাধারণ মানুষকে কিছুটা অন্তত স্বস্তি দিতে ফের দাবি উঠল উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাইয়ের। একই সঙ্গে কেন্দ্রকে বাড়তি চাপে রাখতে সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দাবি, অবিলম্বে ওই দুই জ্বালানিকে জিএসটির আওতায় আনুক মোদি সরকার। যদিও এখনই তেমন কোন সম্ভাবনা নেই বলেই দিল্লীর দরবার সূত্রে দাবি। গত মঙ্গলবার ৩৭ পয়সা উঠে ডলার পৌঁছেছে রেকর্ড ৭১.৫৮ রুপীতে। আর ডলারের গুঁতোয় কলকাতায় লিটারে ৭৪ রুপী ছাড়িয়েছে ডিজেল। পেট্রোলও পৌঁছেছে ৮২.২২ রুপীতে। এই অবস্থায় টুইটে চিদম্বরমের দাবি, চড়া শুল্কের জন্যই পেট্রোল, ডিজেলের দর এত বেশি। তাদের জিএসটিতে আনতে উদ্যোগী হওয়া জরুরী। যদিও আদৌ ক’টি রাজ্য তা মানতে রাজি, তাতে সংশয় যথেষ্ট। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্তার ভাষ্য, অশোধিত তেলের চড়া দর ও রুপীর পতনে চলতি খাতে ঘাটতি বাড়বে। তা জেনেশুনে উৎপাদন শুল্ক কমাতে নারাজ তারা। তার মতে, ভোটের মুখে খরচে রাশ টানা শক্ত। পেট্রোল ও ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক লিটারে যথাক্রমে ১৯.৪৮ ও ১৫.৩৩ রুপী। এ দিন কলকাতায় রাজ্যের কর ও সেস পেট্রোলে প্রায় সাড়ে ১৬ রুপী। ডিজেলে প্রায় ১১ রুপী। সঙ্গে আছে ডিলারদের কমিশন। অনেকের প্রশ্ন, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর কম থাকাকালীন কেন্দ্র যদি উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়ে থাকে, তবে এখন কমাবে না কেন? প্রশ্নের মুখে রাজ্যের করও। এদিকে, পেট্রোল, ডিজেলের চড়া দাম নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। ডলারের সাপেক্ষে রুপীর দাম তলানিতে ঠেকা নিয়েও মোদি সরকারকে নিয়মিত নিশানা করছেন বিরোধীরা। অথচ সেই জোড়া সমস্যা সামাল দিতে রাতারাতি কিছু করার অস্ত্র কেন্দ্রের হাতে নেই। তেলের দাম কমাতে উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাই করলে ঘাটতি বাড়ার সম্ভাবনা। আর রুপীর দর অনেকটাই নির্ভরশীল তার উপর লগ্নিকারীদের আস্থা দেখানোয়। এই অবস্থায় ওই দুই সমস্যার কারণ হিসেবেই বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিকে কাঠগড়ায় খাড়া করলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তার দাবি, অর্থনীতির ভিত পোক্ত। এই সমস্যা সাময়িক এবং মূলত বাইরের সমস্যার কারণে। তাই শুধু এতে ঘুম ছোটার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি এখনও। দিনের শেষে বাজার বন্ধের পরে জেটলির এই আশ্বাস শেয়ার বাজারের মনে ধরবে কি না, তা বোঝা যাবে যাবে আগামী দিনে। কিন্তু এ দিন তিনি মুখ খোলার আগে পর্যন্ত অন্তত আদৌ আশ্বস্ত দেখায়নি বাজারকে। শুধু শেষ ছয় লেনদেনেই সেনসেক্স পড়েছে ৮৭৮ পয়েন্ট। রুপীর পতন নিয়ে জেটলি বলেন, এর দায় বিশ্ব বাজারের। আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। দাবি করেন, রুপী পড়লেও, অন্য দেশের মুদ্রার তুলনায় তার জমি পোক্ত। পরিস্থিতি সামলাতে রিজার্ভ ব্যাংক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করছে। কিন্তু অনেকেই মনে করাচ্ছেন, শুধু এই বছরেই ডলারে রুপী পড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। এখনও খুব স্পষ্ট আশ্বাস দিতে শোনা যায়নি শীর্ষ ব্যাংককেও। পেট্রোল, ডিজেলের দাম বাড়া প্রসঙ্গে তার যুক্তি, অশোধিত তেলে বিশ্ব বাজারের বিরূপ প্রভাব ঘাড়ে এড়ানো মুশকিল। কিন্তু সেখানেও বিরোধীদের প্রশ্ন, তা হলে উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাইয়ের নাম মুখে নেই কেন? রুপী এবং তেলের দর যে তাদের হাতে নেই, তা বারবার বলছে কেন্দ্র। কিন্তু তাতে চিঁড়ে ভেজার লক্ষণ নেই বাজারে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, বাজার উঁচু। তাই পতনের ধাক্কা টের পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দুশ্চিন্তা যে বাড়ছে সন্দেহ নেই। উদ্বেগ বাড়াচ্ছে শুল্ক যুদ্ধ। ইন্ধন আছে বিশ্ব বাজারে প্রায় সব সূচকের পতনেরও। তবে ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সভাপতি কমল পারেখ বলেন, ‘মাত্র ছয় মাসে নিফটি উঠেছে ১,৮৫০ পয়েন্ট। তাই সংশোধন ভাল।’
×