ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধার মামলা নিতে থানায় দুই হাজার টাকা দাবি

প্রকাশিত: ০৭:০১, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 মুক্তিযোদ্ধার মামলা নিতে থানায়  দুই হাজার টাকা দাবি

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ, ৫ সেপ্টেস্বর ॥ দোয়ারাবাজার উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধার বন্দোবস্ত পাওয়া জমি জোরপূর্বক দখল ও মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে মারধরের অভিযোগে মামলা নিতে ঘুষ দাবি পুলিশের। উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের ইদ্রিস আলী নামের এক যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা থানা পুলিশের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন। তিনি জানান, সরকারী বন্দোবস্ত পাওয়া জমি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী পরিবার। স্থানীয়ভাবে এর বিচার না পেয়ে বয়োবৃদ্ধ এই মুক্তিযোদ্ধা দোয়ারাবাজার থানা পুলিশের শরণাপন্ন হলে থানার ডিউটি অফিসার এএসআই সুমন অধিকারী মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলীর কাছে দুই হাজার টাকা দাবি করেছেন বলে মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ। ডিউটি অফিসার জানিয়েছেন, মামলা রেকর্ডে টাকা লাগবে অন্যথায় মামলা রেকর্ড করা হবে না। তবে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়। ইদ্রিস আলীর অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সংঘটিত এই হামলার ঘটনায় জড়িত ফতেপুর গ্রামের জাকির হোসেনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে শুক্রবার দুপুরে দোয়ারাবাজার থানায় এই লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন তিনি। অভিযোগ দায়েরের পাঁচদিন পার হওয়ার পরও কোন ব্যবস্থা নেয়নি থানা পুলিশ। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবার। জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে বন্দোবস্ত দলিল দেয়ার পর সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস, ইউপি চেয়ারম্যান আমীরুল হক, সাবেক ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ জমি সরেজমিন মাপজোক করে বুঝিয়ে দেন ১৯৯৬ সালে ভূমিহীন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলীকে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী তার অভিযোগে জানান, উল্টো জমির মালিকানার দাবি ছেড়ে দিতে জাকিরের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত হুমকি প্রদান করা হয় তাকে ও তার পরিবারকে। এরই জের ধরে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টায় উপজেলার চকবাজারে মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলীর ছেলে আক্তার হোসেন ও ফরহাদ হোসেনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে অতর্কিতে হামলা করে। এ খবর পেয়ে তিনি বাজারে এলে তাকেও ৫/৭ জন মিলে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে। মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ও তার ছেলে আক্তার হোসেন সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুই দিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেন। অপর ছেলে ফরহাদ হোসেনকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলীর আনা অভিযোগ অস্বীকার করে জাকির হোসেন বলেন, আমার রেকর্ডীয় জায়গায় মালিকানা দাবি করে আসছেন মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী। আমি উনার বন্দোবস্ত পাওয়া জমি দখল করিনি। এদিকে, মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী বলেন, সন্ত্রাসীদের হাতে মার খাওয়ার পরদিন শুক্রবার দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে লিখিত অভিযোগসহ থানায় যান তিনি। এ সময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থানায় ছিলেন না। ডিউটি অফিসার এএসআই সুমন অধিকারীর হাতে এজাহারের কপি দিলে সুমন তার কাছে দুই হাজার টাকা দাবি করেন, অন্যথায় মামলা রেকর্ড হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। বিষয়টি ওসিকে জানালে তিনিও ডিউটি অফিসারকে ‘কিছু খরচপাতি’ দেয়ার কথা বলেন বলে অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলীর। তিনি আরও বলেন, টাকা দিতে অপারগ হওয়ায় অভিযোগ দায়েরর চার দিন পরও অভিযোগ তদন্তে ঘটনাস্থলে যায়নি থানা পুলিশ। বিষয়টি পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করার কথা জানান মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী। অভিযোগের ব্যাপারে দোয়ারাবাজার থানার এএসআই সুমন অধিকারী মামলা রেকর্ডে দুই হাজার টাকা লাগবে মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলীর করা এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধার কাছে কোন টাকাপয়সা দাবি করিনি। এসব বিষয়ে তার সঙ্গে আমার কোন কথাই হয়নি। তবে ওই দিন আমি ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে ছিলাম, তিনি অভিযোগ থানায় রেখে গেছেন। মামলা রেকর্ডের বিষয় ওসি স্যার দেখেন। দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি সুশীল রঞ্জন দাস বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলীর দায়ের করা অভিযোগটি তদন্তাধীন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলা রেকর্ডের ক্ষেত্রে ঘুষ চাওয়া ও ঘুষ দিতে সায় দেয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।
×