ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চার আসনই আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক, বিএনপি চায় ঘুরে দাঁড়াতে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  চার আসনই আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক, বিএনপি  চায় ঘুরে দাঁড়াতে

শংকর লাল দে/ মোখলেছুর রহমান/ কামরুজ্জামান বাচ্চু/ মেজবাহউদ্দিন মাননু, পটুয়াখালী থেকে ॥ পটুয়াখালী সবসময়ই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জন্য ‘উর্বর ভূমি’। জেলার চার আসনেই রয়েছে দলটির বিশাল ভোট ব্যাংক। সাংগঠনিকভাবে কিছুটা দুর্বল হলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি চাইছে ঘুরে দাঁড়াতে। অন্যদিকে জোটগত নির্বাচনের সুযোগ নিয়ে বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি চাচ্ছে আওয়ামী লীগের আসনে ভাগ বসাতে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলার চার আসনেই বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সব প্রতিকূলতা ছাপিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। বাদ পড়ছে না গরিব-হতদরিদ্র সাধারণ ভোটাররাও। সম্ভাব্য প্রার্থীরা আর্থিক অনুদানসহ নানা উপহার সামগ্রী দিচ্ছেন নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের। গ্রাম-গঞ্জের মাঠপর্যায় থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন চায়ের দোকানে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ভোটারদের চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রয়েছে অসংখ্য মনোনয়ন প্রত্যাশী। প্রার্থিতা নিয়ে দলীয় বিভেদও প্রকাশ্যে। জোট-মহাজোটের হিসাবের অঙ্কের সুযোগ নিয়ে বিএনপি চাইছে কিছু আসনে ভাগ বসাতে। তবে জেলার চার আসনের আ’লীগের নেতাকর্মীরা দৃঢ় কণ্ঠেই বলছেন, বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হলে প্রতি আসনেই বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে নৌকার প্রার্থীরা। পটুয়াখালী-১ (পটুয়াখালী সদর-মির্জাগঞ্জ-দুমকি) ॥ এ আসনে দলের শক্ত সমর্থন থাকলেও গত নির্বাচনে মহাজোটের আসন ভাগাভাগির অঙ্কে আসনটি হাতছাড়া হয় আওয়ামী লীগের। গত নির্বাচনে এ আসনে মহাজোট থেকে প্রথমে মনোনয়ন দেয় হয় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ এ্যাডভোকেট মোঃ শাহজাহান মিয়াকে। অপরদিকে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি মনোনয়ন দেয় দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদারকে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান মিয়া তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে। আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে তাদের সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার। যদিও তিনি ওই নির্বাচনে নিজের ভোটটাও দিতে আসেননি। এরপর তার সময়ে গত হলো পাঁচটি বছর। যেখানে সরকারের গতানুগতিক উন্নয়ন ছাড়া উল্লেখ করার মতো তার কোন কার্যক্রম ছিল না। অপরদিকে প্রশাসনের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী সভায় অনুপস্থিত থেকেছেন ধারাবাহিকভাবে। এ সময়ে হাতে গোনা কয়েক বার হেলিকপ্টারে এসেছেন পটুয়াখালী। সব মিলিয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীসহ এলাকার জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলেন স্থানীয় এমপি জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার। মোটাদাগে বলতে গেলে গত পাঁচ বছর পটুয়াখালী-১ আসনটি ছিল বাস্তবে অভিভাবক শূন্য। এর পরেও একাদশ নির্বাচনে পুনরায় এই আসন থেকে তিনি মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। রুহুল আমীন হাওলাদারকে মনোনয়ন দেয়ার কারণে গত পাঁচ বছর আওয়ামী লীগের জন্য কেটেছে দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে। তাকে মনোনয়ন দেয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা। উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ কোন কিছুতেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল না। কারণ ছিল নিজ দলের এমপি না থাকা। এবার তাই এ আসনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে ও দলের সাংগঠনিক ধারাবাহিকতা স্বাভাবিক রাখতে দলের সম্ভাব্য সব প্রার্থী এবার এক যোগে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশের তৃণমূলের সঙ্গে কোন যোগযোগ নেই। এরা মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক নির্ভর নেতা, মাজার (বিশেষ এক নেতার আশীর্বাদ পুষ্ট) নির্ভর সম্ভাব্য প্রার্থী। অপরদিকে বিএনপির মধ্যে একাধিক গ্রুপ-উপগ্রুপে জর্জরিত। পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী ঢাকা বসে রাজনীতি করার কারণে সাংগঠনিক কোন তৎপরতা ছিল না গত প্রায় ৯ বছরে। হাতেগোনা কয়েকজন নেতার সামাজিক যোগাযোগ নির্ভর কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে চলছে দলটির সাংগঠনিক কর্মকান্ড। এর পরেও যদি চলমান রাজনীতির জটিল সমীকরণে মহাজোট রক্ষায় এ আসনে রুহুল আমীন হাওলাদারকে মনোনয়ন দেয়া হয়, সে ক্ষেত্রে এ আসনটি মহাজোটের হাত ছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ আগামী নির্বাচনে যদি রুহুল আমীন হাওলাদারকে মনোনয়ন দেয়া হয়, সে ক্ষেত্রে মুখ রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগের কেউ কেউ নির্বাচনী কাজে নামলেও তৃণমূলকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা সহজ হবে না। আর সে কারণে ভোটের ফল চলে যেতে পারে বিএনপির প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর পক্ষে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ এ্যাডভোকেট মোঃ শাহজাহান মিয়া, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দুমকি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ হাওলাদার, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী আশ্রাফ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান পৌর মেয়র মোঃ শফিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তারিকুজ্জামান মনি, সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান আহমেদ মৃধা। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টি মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার পটুয়াখালী থেকে মনোনয়ন চাইবেন। তবে তাকে পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালি) থেকেও তাকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে। এ আসনে ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরী। এ ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্নেহাংশু সরকার কুট্টি ও তৌফিক আলী খান কবির। পটুয়াখালী-২ (বাউফল) ॥ এ আসনটিও আওয়ামী লীগের দুর্গ বলে খ্যাত। এ আসনের বর্তমান এমপি ও জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আসম ফিরোজ ৬ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। সাংগঠনিক দক্ষতা ও আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে তিনি এ আসন থেকে বার বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এর প্রতিদান হিসেবে দল থেকে তাকেও মূল্যায়ন করা হয়েছে। হুইপ থেকে চীফ হুইপ করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি যদি জয়ী হন আর আওয়ামী লীগ যদি সরকার গঠন করলে তবে তিনি মন্ত্রী হবেন এমন আশা ব্যক্ত করেছেন দলীয় কর্মী সমর্থকরা। তাই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে তার সমর্থন ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বর্তমানে আসম ফিরোজ অধিক কর্মব্যস্ততার মধ্যেও নির্বাচনী এলাকায় সফর করছেন। গত প্রায় পাঁচ বছরে তিনি ৯৮ বার সফরে বাউফলে এসেছেন। প্রতি সফরের ৫-৭ দিন করে এলাকায় অবস্থান করেছেন। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে নেতাকর্মী সমর্থকসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক সুদৃঢ় করেছেন। এক কথায় বাউফলের প্রত্যেকটি অলিগলি, বাড়ি ঘর তার পরিচিত। নেতাকর্মীদের নামও তার মুখস্থ। ওয়ান ইলেভেনের সময়ও তিনি দলের জন্য সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। তাই এলাকার মানুষের বিশ্বাস একাদশ নির্বাচনেও তিনি নৌকার মনোনয়ন পাবেন। আসম ফিরোজ ছাড়াও এ আসন থেকে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী এ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাউফল পৌরসভার মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জোবায়দুল হক রাসেল, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ও আরটিভির পরিচালক ফিরোজ আলম আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন। তবে এ আসনে আসম ফিরোজ এমপি নৌকা মার্কার মনোনয়ন পেলে তিনিই জয় লাভ করবেন বলে পর্যবেক্ষরা মনে করছেন। এ আসনে বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফারুক আহমেদ তালুকদার দুঃসময়ের কা-ারি হিসেবে পরিচিত। ২০০১ সালে এ আসন থেকে সহিদুল আলম তালুকদার একবার এমপি নির্বাচিত হন। এরপর নানা কারণে তিনি বিতর্কিত হয়ে উঠেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় নেতাকর্মীদের বিপদে রেখে তিনি গা ঢাকা দেন। এ সময় নেতাকর্মীদের পাশে এসে দাঁড়ান ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফারুক আহমেদ তালুকদার। যে কারণে ২০০৮ সালে ইঞ্জিনিয়ার ফারুক আহমেদ তালুকদারকে ধানের শীষের মনোনয়ন দেয়া হয়। তখন সাবেক এমপি সহিদুল আলম তালুকদার দলের প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজ আলমের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারেন অংশ নেন। যদিও ওই প্রার্থী মাত্র ১১ হাজার ভোট পেয়েছেন। আর ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফারুক আহমেদ তালুকদার পেয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার ভোট। ওই সময় সহিদুল আলম স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও মৃত আরাফাত রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন। যা এখনও দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মনে রেখেছেন। আগামী নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফারুক আহমেদ তালুকদার ছাড়াও বিএনপির সাবেক এমপি সহিদুল আলম তালুকদার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দফতর সম্পাদক মুঃ মুনির হোসেন, জিয়া গবেষণা পরিষদের সাবেক সভাপতি আনিচুর রহমান, ও জামায়াতের ঢাকা মহনগর দক্ষিণের আমির ও ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মুঃ শফিকুল ইসলাম মাসুদ মনোনয়ন চাইবেন। এ আসনে জাতীয় পার্টি (এরশাদ), ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন (চরমোনাই) থেকেও প্রার্থী দেয়া হবে। কিন্তু কারা প্রার্থী হবেন তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) ॥ গলাচিপার ১২ ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও দশমিনা উপজেলার সাত ইউনিয়ন নিয়ে পটুয়াখালী-৩ আসন বরাবরই ভোটের দিক থেকে আওয়ামী লীগের জন্য ‘উর্বর ভূমি’। নৌকার মনোনয়ন মানেই বিজয় নিশ্চিত। ১৯৯১ সালের পর থেকে এ আসন আওয়ামী লীগের দখলে। প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন। যে কারণে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন মানেই প্রার্থীদের কাছে সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যাও অনেক বেশি। গত দশম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে রেকর্ড সংখ্যক ৩৩ প্রার্থী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনেও এখন পর্যন্ত মাঠে নেমেছেন বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন বর্তমান এমপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি এ আসনে চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমান এমপি ছাড়াও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় এখন পর্যন্ত আরও যারা মাঠে রয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেনÑ যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক কামরান শাহীদ মহাব্বাত প্রিন্স, পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কাজী আলমগীর হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোঃ ফোরকান মিয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান টিটু, দশমিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল আজীজ মিয়া, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার ভাগ্নে এসএম শাহজাদা, দশমিনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন, দশমিনা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইকবাল মাহামুদ লিটন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গোলাম মোস্তফা নান্টু, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি তসলিম শিকদার, গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোঃ হারুন অর রশিদ, গলাচিপা উপজেলা বিএনপির একাংশের সভাপতি গোলাম মোস্তফার ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য হাজী মোঃ শাহ আলম এবং নবম সংসদের এমপি গোলাম মাওলা রনি প্রমুখ। বিএনপির এখন পর্যন্ত তিনজন সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তারা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাসান মামুন, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির একাংশের সভাপতি মোঃ শাহজাহান খান ও উপজেলা বিএনপির আরেক অংশের সভাপতি গোলাম মোস্তফা। অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোঃ কামাল হোসেন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) এ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান শওকত। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে চারবার এমপি ও একবার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের তৃণমূল পর্যায়ে রয়েছে ব্যাপক গণভিত্তি। উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অধিকাংশের কাছে তার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। সাধারণ মানুষের কাছেও তিনি আস্থা এবং নির্ভরতার প্রতীক। এসব তথ্য জানিয়ে আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনের মনোনয়ন প্রসঙ্গে গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক সন্তোষ কুমার দে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন এমপি এবং মন্ত্রী হয়েই গলাচিপা-রাঙ্গাবালীর মানুষের প্রাণের দাবি গলাচিপা-পটুয়াখালী সড়ক নির্মাণ করেছেন। এছাড়া টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে শুরু করে অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার পাকা ভবন, নতুন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, ইউনিয়ন-গ্রাম পর্যায়ে যোগাযোগ অবকাঠামো, শহর-গ্রাম পর্যায়ে সড়কবাতি স্থাপন, বঙ্গবন্ধু উপশহর স্থাপনের পরিকল্পনাসহ ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- এলাকাবাসীর কাছে আজীবনের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দলের প্রার্থী হিসেবে আবারও তাকে মনোনীত করা হলে আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে খ্যাত এ আসনটি সুরক্ষিত থাকবে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা টিটো বলেন, এলাকার ভূমিহীন কৃষকদের পুনর্বাসনে আখম জাহাঙ্গীর হোসাইন দৃষ্টান্তমূলক অবদান রেখেছেন। দলের প্রতিটি পর্যায়ের নেতাকর্মী তার পিছনে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। বেকারদের কর্মসংস্থানেও জাহাঙ্গীর হোসাইন যথেষ্ট অবদান রেখেছেন। গত কয়েক বছরে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দান-অনুদানের মাধ্যমে এবং ব্যাপক গণযোগাযোগে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা কামরান শাহীদ মহাব্বাত প্রিন্স এলাকার মানুষের দৃষ্টি কেড়েছেন। যে কোন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে অসহায় মানুষের পাশে পাওয়া যায়, এমন আস্থা এরই মধ্যে তিনি অর্জন করেছেন। কামরান শাহীদ মহাব্বাত প্রিন্স বলেন, গত কয়েক বছর ধরে তিনি এ আসনের উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন। এ আসনে তিনিই একমাত্র কেন্দ্রীয় নেতা। তাই তিনি মনোনয়নের সর্বোচ্চ দাবিদার। ২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হয়েই গোলাম মাওলা রনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন। যা এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সর্বশেষ এমপি থাকা অবস্থায় একটি টিভি চ্যানেলের সংবাদকর্মীদের লাঞ্ছিত করে জেলে যান। ফলে দশম সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হন। চলতি বছর এলাকায় আসার মধ্যে দিয়ে এবং পোস্টার ছড়িয়ে তিনি আবারও দলীয় মনোনয়ন লড়াইয়ে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন। দলীয় কোন পদ-পদবি না থাকলেও কেবলমাত্র বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার ভাগ্নে এ পরিচয়ে এসএম শাহজাদা এলাকায় গত এক-দেড় বছর ধরে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ গত ১৫ আগস্ট গলাচিপা উপজেলা শহরে ‘আওয়ামী পরিবার’ ব্যানারে পৃথক শোক দিবস পালন করেন। যা এক পর্যায়ে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ ঘটনায় গলাচিপা উপজেলা আওয়ামী লীগ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আওয়ামী লীগ এক লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, এসএম শাহজাদার পিতৃকূলের সকলেই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী এবং তিনি সকল কর্মকা-ে মামার (সিইসি) নাম ব্যবহার করেন। যদিও পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে এসএম শাহজাদা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। উপরন্তু শোক দিবসের কর্মসূচীতে হামলার জন্য বর্তমান এমপির অনুসারীদের দায়ী করেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে শাহজাহান খান ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন। প্রথমবার জাতীয় পার্টির মনোনয়নে এবং পরের নির্বাচনগুলোতে বিএনপির মনোনয়নে। এর মধ্যে ১৯৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচন ছাড়া কখনই জয়ের মুখ দেখেননি। এরপরও তিনি এবারও মাঠে রয়েছেন। বিনয়ী ও ভদ্র হিসেবে পরিচিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান মামুন এরই মধ্যে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের কাছে ‘ক্লিন ইমেজ’ পরিচিতি লাভ করেছেন। শিল্পপতি গোলাম মোস্তফাও বিএনপির মধ্যে পৃথক অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনিও মানুষের কাছে ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের কমবেশি একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। ইসলামী আন্দোলন পৃথক নির্বাচন করলে তা বিএনপির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরও দলীয় পর্যায়ে পরিচিতি রয়েছে। পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালি) ॥ সাগরপাড়ের জনপদ কলাপাড়া উপজেলার ১২ ইউনিয়ন, দুটি পৌরসভা এবং রাঙ্গাবালী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী-৪ সংসদীয় আসন। ইতোপূর্বে যতবার ঠিকঠাক ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে তার সবক’টি সংসদ নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে। বর্তমানে এখানকার সংসদ সদস্য আলহাজ মাহবুবুর রহমান এমপি। ২০০১ সাল থেকে তিনি এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছেন। ২০০৮ সালে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে এবং ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ আসনটিকে বরিশাল বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিংবা ভিআইপি আসন বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এ আসনে দেশের তৃতীয় পায়রা সমুদ্রবন্দর, শের-ই-বাংলা নৌ-ঘাটি, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ার প্লান্টসহ এখানে চলছে একাধিক বিদ্যুত প্লান্টের নির্মাণ কাজ। ইতোমধ্যে পায়রা বন্দরের নৌপথে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এসব মেগাপ্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে বর্তমান এমপি মাহবুবুর রহমানের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। তাঁর দাবি দেশ স্বাধীনের পরে ২০০৯ সালের পরে এই জনপদের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। রয়েছে ডোর-টু-ডোর বিশেষ পরিচিতি। কলাপাড়া-কুয়াকাটা মহাসড়কের ২২ কিমি সড়কের তিনটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কুয়াকাটাগামী বিকল্প সড়কের বালিয়াতলী পয়েন্টে নির্মাণ চলছে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর নির্মাণ কাজ। শত কিমি বিদ্যুত লাইন টানা হয়েছে। ৬০ ভাগ মানুষকে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। অন্তত দেড় শ’ কিলোমিটার সড়ক পাকা করা হয়েছে। অধিকাংশ সড়কে এখন চলছে যানবাহন। অর্ধশতাধিক আধুনিক সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে। যেখানে শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি দুর্যোগকালীন আশ্রয় নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে মানুষ। কুয়াকাটা পর্যটনকেন্দ্রের উন্নয়নে গৃহীত মাস্টারপ্লান অনুসারে এগুচ্ছে কর্মকা-। এসব উন্নয়নে ব্যয়-বরাদ্দ রয়েছে হাজারো কোটি টাকার। উন্নয়নে যেমন বদলে গেছে এই জনপদের চেহারা। তেমনি কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার হাজার শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন ধরনের মানুষের। এক কথায় বিস্ময়কর উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এই আসনটির চোখ এখন দেশের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রভাবশালী রাজনীতিকদের। স্থানীয় এবং বহিরাগতদের রয়েছে দৃষ্টি। থেমে নেই এই আসনে ভূমি দখল কেন্দ্রিক জবরদস্তি। আর সুযোগকে পুঁজি হিসেবে অসংখ্য অখ্যাত ব্যক্তি কোটিপতি বনে গেছেন। তবে এমপি মাহবুবের ঘনিষ্ঠজনের অনেকেই এবার রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী। ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে অনেক নেতিবাচক প্রচার চালাচ্ছেন। তারপরও বিরোধ-ক্ষোভ, মান-অভিমানকে নিয়েও দলটির নেতাকর্মীরা এখনও নিজস্ব দ্বিতল অফিসটিতে দলের সকল কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, এখনও এই আসনে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় বর্তমান এমপি মাহবুবুর রহমান যে উন্নয়ন করেছেন, তাতে তাঁর চেয়ে দক্ষ এবং সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী প্রার্থী আর কেউ নেই। তৃণমূলের ইউনিয়ন পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাকর্মী কিংবা জনপ্রতিনিধির বক্তব্যও একই ধরনের। এ আসনে আওয়ামী লীগে রয়েছেন অন্তত দেড় ডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাঁরা হলেন- সাবেক প্রতিমন্ত্রী বর্তমান এমপি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মোঃ মাহবুবুর রহমান, পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মহিব্বুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলাউদ্দীন আহামেদ, বর্তমান এমপির ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান মিলন, সাবেক মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাকিবুল আহসান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সৈয়দ নাসির উদ্দীন, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি মুরসালিন আহম্মেদ, পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার, কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-ইসলাম লিটন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কলাপাড়া ইউনিট সভাপতি সৈয়দ আখতারুজ্জামান কোক্কা, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহসম্পাদক নীহার রঞ্জন সরকার মিল্টন, যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট শামীম আল সাইফুল সোহাগ, রাঙ্গাবালী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ড. আরিফ বিন ইসলাম, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এম নয়া মিয়া নয়ন, ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল আলম টিটো প্রমুখ। অন্যদিকে বিএনপিতেও রয়েছে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিএনপির এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মোঃ মনিরুজ্জামান মনির এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। এ আসনে একদিকে কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন এবং অপরদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুজ্জামান, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে আলাদা আলাদা দলীয় কার্যালয়ে কর্মকান্ড চালাচ্ছেন। এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রয়েছে একক প্রার্থী মুফতি মাওলানা মোঃ হাবিবুর রহমান। এছাড়া জাসদ (আম্বিয়া-বাদল-প্রধান) থেকে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাংবাদিক বিশ্বাস শিহাব পারভেজ মিঠু। তবে গুজব রয়েছে জাপার (এ) মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এই আসনে নির্বাচনে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এনিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা রয়েছেন নানান শঙ্কায়। তবে এই আসনে জাতীয় পার্টির নেই তেমন কোন ভোট ব্যাংক। বর্তমান এমপি মাহবুবুর রহমান নিজেকে এবারও দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রার্থী হিসেবে দাবি করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যে কয়বার নমিনেশন দিয়েছেন ততবার বিজয় উপহার দিয়েছি। আমি বহুবার নমিনেশন না পেলেও দলের পক্ষে নিবেদিত হয়ে কাজ করেছি। ২০০৮ সালে আমার বাড়িতে দিনের বেলা আমাকে সপরিবারে হত্যার জন্য গুলি করা হয়েছে। তখনও জীবনবাজি রেখে দলকে আগলে রেখে নেতৃত্ব দিয়েছি। এবারও আমাকে দায়িত্ব দিলে বিজয় শতভাগ সুনিশ্চিত করব ইনশআল্লাহ। তিনি এও বলেন, শুধু নমিনেশন পাওয়া নয়। এবারে এই আসনের নির্বাচন অনেক ফ্যাক্টর কাজ করবে। সেটিকে মোকাবেলা করে দলকে জেতানোর সক্ষমতা থাকতে হবে। নিজেকে ক্লিন ইমেজধারী দাবি করে উপজেলার সাবেক সভাপতি আলাউদ্দিন আহাম্মদ বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি অনেকটা আশাবাদী। একই দাবি অধ্যক্ষ মহিববুর রহমান, অধ্যক্ষ সৈয়দ নাসির উদ্দিনসহ অধিকাংশ সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর। জানা গেছে, বর্তমান এমপির নামে দুদকের মামলা দায়েরের পর থেকে তাঁর অনুগত একটি গ্রুপ বিভক্তিতে জড়িয়ে গেছে। দলের কর্ম বাদ দিয়ে একে অপরের নামে ফেসবুকে ছড়াচ্ছেন নানা নেতিবাচক প্রচার। এমপি মাহবুব বলে আসছেন তার ২০১৪ সালের হলফনামায় সম্পত্তির পরিমাণ ২৮ একর ৬৫ শতক উল্লেখ করেছেন। সেখানে ২ হাজার ৮৬৫ একর বলে প্রচার করা হয়। তাঁর অনুসারীদের দাবি এটি শুধু এমপি মাহবুবের বিরুদ্ধে চক্রান্ত নয়। আওয়ামী লীগের সাগরপাড়ের এই জনপদের শক্ত নেতৃত্বে আঘাত হানতে এমন অপকৌশল করেছে প্রতিপক্ষরা। তবে তৃণমূলের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস জননেত্রী শেখ হাসিনা এই আসনে যোগ্য ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দিবেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। সে ক্ষেত্রে এখনই কথিত নেতা যারা নিজেদের কেন্দ্রীয় কিংবা আঞ্চলিক নেতাদের নেতা দাবি করে দলের বিভাজন বাড়াচ্ছেন তাদের চিহ্নিত করে দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরী প্রয়োজন। তাহলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই আসনের আগামী সংসদ নির্বাচনের বিজয় সুনিশ্চিত করা যাবে।
×