ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদার আমলে এরশাদের বিচার হয় কারাগারে

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 খালেদার আমলে এরশাদের বিচার হয় কারাগারে

বিকাশ দত্ত ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানি নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে স্থানান্তরে কোনভাবেই সংবিধানের লঙ্ঘন হয়নি। ফৌজদারি কার্যবিধির ৯ ধারা মোতাবেক সরকার যেখানে ইচ্ছা সেখানে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালত গঠন করতে পারে। এটা নিরাপত্তার কারণেই করা হয়েছে। এর আগেও ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের বিচার হয়েছিল পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে লালভবনে। বিএনপি সরকারের সময় কারাগারের স্থাপিত একটি কক্ষে স্থাপিত আদালতে এরশাদের বিচার করলেও এখন তারাই (বিএনপি) খালেদা জিয়ার বিচারের জন্য কারাগারে স্থানান্তরিত অস্থায়ী আদালতকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, ওয়ান ইলেভেনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্যদের ও বিডিআরের মামলা পরিচালনা করার জন্য আদালত স্থানান্তর করা হয়েছিল। ফলে খালেদা জিয়ার চলমান একটি বিচার স্থান নতুন করে গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কোনভাবেই সংবিধান পরিপন্থী নয়। এটা সংবিধান সম্মতভাবেই করা হয়েছে। যদিও এর আগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কারাগারের ভেতর আদালত বসিয়ে কর্নেল তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল। খালেদার বিচারে আইন মোতাবেক আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে। এখানে আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। যারা সংবিধান লঙ্ঘনের কথা বলছে, তা হলে কি উনারা পাকিস্তানের সংবিধানের কথা বলছে কিনা? কোনভাবেই বাংলাদেশের সংবিধান লঙ্ঘন করা হয় নাই। এমনই অভিমত ব্যক্ত করেছেন আইনমন্ত্রী থেকে শুরু করে এ্যাটর্নি জেনারেল, আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ও আইন বিশেষজ্ঞগণ। সূত্র জানায়, আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে আদালতের স্থান নির্ধারণ করতে পারে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার একই প্রক্রিয়ায় নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন কক্ষকে আদালত হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সেখানে বিচার সম্পন্ন করা হয়। এর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু মামলার আসামিরা আইনজীবী প্রয়াত খান সাইফুর রহমানের মাধ্যমে হাইকোর্টে আবেদন করেছিল। বিস্তারিত শুনানি অন্তে তাদের সেই অভিযোগ খারিজ করা হয়। ২০০৭ সালে জাতীয় সংসদ ভবনের বিশেষ কক্ষগুলোতে আদালত স্থাপন করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ অন্য অনেকের বিচার কাজ পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া পুরান ঢাকার আদালত ভবন থেকে পৃথক আদালত ব্যবস্থা তৈরি করে বকশীবাজার মাদ্রাসার একটি অংশকে আদালত করে পরিচালনা স্থান নির্ধারণ করে সেখানে একটি মামলা বিচার সম্পন্ন হয়। এ বিষয়েও মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে আদালত স্থাপন করাকে অবৈধ দায়ী করে খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে হাইকোর্টে অভিযোগ তোলা হয়। যা খারিজ হয়ে যায়। ফলে খালেদা জিয়ার চলমান একটি মামলার বিচার স্থান নতুন করে গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কোনভাবেই অবৈধ নয়। কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিচার সম্পন্ন করতে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ী আদালত স্থাপন করে মঙ্গলবার গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। ফলে বুধবার থেকে বিশেষ জজ আদালত-৫-এ বিচারাধীন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। মামলার শুনানির জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগের উপসচিব (প্রশাসন-১) মোঃ মাহবুবার রহমান সরকার স্বাক্ষরিত এই গেজেটে বলা হয়েছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারকাজ বকশীবাজার এলাকার সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে পরিচালিত হচ্ছে। মামলা চলাকালীন ওই এলাকাটি জনাকীর্ণ থাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে এই আদালত স্থানান্তর করা হচ্ছে। এখন থেকে এই মামলার বিচার কার্যক্রম পুরনো কারাগারে ঘোষিত অস্থায়ী আদালতে চলবে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সংবিধান লঙ্ঘন করে সরকার কারাগারে আদালত স্থাপন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরী সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, আদালত স্থানান্তর করায় কোনভাবেই সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়নি। ফৌজদারি কার্যবিধির ৯ ধারায় আছে সরকার যেখানে ইচ্ছা সেখানে আদালত করতে পারে। আইনসম্মতভাবে আদালত বসানো হয়েছে। উনারা কর্নেল তাহেরকে কারাগারের ভেতর আদালত বসিয়ে ফাঁসি দিয়েছে। আমরা আইনসম্মতভাবে আদালত বসিয়েছি। এখানে আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটেনি। সংবিধান লঙ্ঘনের কথা বলছে, তা হলে কি উনারা পাকিস্তানের সংবিধানের কথা বলছে কিনা। কোনভাবেই বাংলাদেশের সংবিধান লঙ্ঘন করি নাই। আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম জনকণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার চাইলে যে কোন জায়গায় গেজেটের মাধ্যমে আদালত ঘোষণা করতে পারে। তাতে আইনী কোন বাধা নেই।’ বিচারপতি শামসুল হুদা মানিক বলেন, আদালত স্থানান্তর করার মাধ্যমে কোনভাবেই সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়নি। সংবিধানের আলোকেই আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে। কিভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে তা জানতে চাই। মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য এ সমস্ত কথা বলা হচ্ছে। সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী শ.ম রেজাউল করিম বলেছেন, খালেদা জিয়ার চলমান একটি মামলার বিচার স্থান নতুন করে গেজেট প্রকাশের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কোনভাবেই অবৈধ নয়। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ছাড়াও ওয়ান ইলেভেনের সময় জাতীয় সংসদ ভবনে স্থাপিত বিশেষ আদালত ও বিডিআর বিদ্রোহ মামলার শুনানিতে পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার বিশেষ আদালতসহ অনেক উদাহরণ আমাদের আছে। দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহাবুবে আলম বলেছেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সংবিধান মেনেই পুরনো কারাগারে অস্থায়ী আদালত স্থাপন করা হয়েছে। ‘কারাগারে অস্থায়ী আদালত স্থাপন করায় সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে’ বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, কারাগারে আদালত স্থানান্তর করায় সংবিধান লঙ্ঘন হয়নি। নিরাপত্তার কারণেই পুরনো কারাগারে অস্থায়ী আদালত স্থাপন করা হয়েছে। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত আদালত নিয়ে তার আইনজীবীরা ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। আদালত স্থাপনের ব্যাপারে সরকার যে গেজেট প্রকাশ করেছে সেটা আইন মোতাবেকই করেছে। এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ব্যাপারে জেলখানার পাশের ভবনকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তখনও সেটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল, কিন্তু লাভ হয়নি। কাজেই আমার মনে হয়, এটা সঠিকভাবে হয়েছে এবং এতে কোন আইন লঙ্ঘিত হয়নি।’ এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আরও বলেন, ‘সরকার নিরাপত্তার জন্য যে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনি (খালেদা জিয়া) কোন বিষয় থেকে বঞ্চিত হলেন কিনা, সেটা হচ্ছে বড় বিষয়। সেখানে তো বঞ্চিত হওয়ার কোন কারণ দেখি না। সেখানে গিয়ে তার আইনজীবীরা, আত্মীয়রা অনবরত দেখা করছেন। তার জন্য সেবিকা রাখা হয়েছে। কাজেই তার অধিকার খর্ব করা হচ্ছে না।
×