ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মানবকল্যাণের জন্যেই প্রযুক্তি, কিন্তু সেই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সমাজে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করছে এক শ্রেণীর মানুষ। জীবনের সকল ক্ষেত্রেই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ইন্টারনেট। তাতে জীবনযাপন অনেক সহজ ও গতিময় হয়ে উঠেছে। অথচ ইন্টারনেটের অপব্যবহার করে অপপ্রচার চালিয়ে স

সমাজ ভাবনা - বিষয় ॥ ইন্টারনেটের অপব্যবহার

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সমাজ ভাবনা -	বিষয় ॥ ইন্টারনেটের অপব্যবহার

চাই পরিকল্পিত ব্যবহার সাধন সরকার ॥ ইন্টারনেট পুরো পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। বিশ্বায়নের এই যুগে জীবনের সব ক্ষেত্রে এখন ইন্টারনেটের ব্যবহার ছাড়া কল্পনা করা যায় না! খোলা আকাশের মতো ইন্টারনেটও সবার জন্য অবারিত। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছোট-বড় বয়সের কোন বিধিনিষেধ নেই। প্রযুক্তির ব্যবহার খারাপ নয়। তবে ব্যবহারের ওপরই এর ভাল-মন্দ নির্ভর করে। ইন্টারনেটের সুফল বলে শেষ করা যাবে না। মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ, তথ্য আদান-প্রদান, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে মানুষের জীবনযাপন আগের থেকে সহজ করে দিয়েছে ইন্টারনেট। ফলে পৃথিবী আগের থেকে অনেক বেশি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে চারপাশ। প্রদীপের নিচে অন্ধকার থাকে। ইন্টারনেটের অপব্যবহারও মানুষের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সমাজে মন্দ লোকের অভাব নেই। ফেসবুক, ভাইবার, হোয়াটসএ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইমোসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণার ফাঁদ পেতে নানা কৌশলে টার্গেট ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রতারকচক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ইন্টারনেটে নারী ও কিশোর-কিশোরীরা হয়রানি ও যৌন নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। ইন্টারনেটকে অনেক উগ্রবাদী সংগঠন তাদের অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ব্যবহার করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে আবার ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে সমাজে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে। ইন্টারনেটের অনেক তথ্য (বিশেষ করে মিথ্যা তথ্য) যাচাই-বাছাই করার সুযোগের আগেই অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে! মিথ্যা তথ্য ও খবর মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে। এতে করে সমাজে অস্থিরতা তৈরি হয়। যা মুহূর্তেই বিপদের কারণ হতে পারে। ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারে অশ্লীলতা বাড়ছে, বাড়ছে অনলাইনে জুয়া খেলা। ইন্টারনেটের মাত্রাতিরিক্ত আসক্তিতে সামাজিক ও পারিবারিক টানাপোড়েন বাড়ছে, বাড়ছে নৈতিকতার অবক্ষয়। ইন্টারনেট আসক্তি মাদকাসক্তির মতো। মাদক যেমন একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়, ইন্টারনেটের অপব্যবহারও জীবনকে শেষ করে দেয়। নেশা, জঙ্গীবাদ, দেশদ্রোহে ও অপরাধপ্রবণতায় ইন্টারনেটকে কাজে লাগানো হচ্ছে। কৌতূহলী অনেক জীবন ইন্টারনেটের রঙিন দুনিয়ায় অসর্তকার কারণে শেষ হয়ে যাচ্ছে। অপরিণত বয়সে ইন্টারনেট থেকে সন্তানদের দূরে রাখা উচিত। পরিবারের মা-বাবাকে খেয়াল রাখতে হবে পরিবারের সন্তান কিভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, কোন কোন সাইট ব্যবহার করছে, কোথায় যাচ্ছে। পরিবারকে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ইন্টারনেটে কোন কোন সংগঠন বা গোষ্ঠী তরুণদের টার্গেট করছে। উগ্রবাদে আকৃষ্ট করছে! তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ইন্টারনেটে কুৎসা রটাচ্ছে। উন্নত দেশে সন্তানদের ইন্টারনেট ব্যবহারের গতিবিধি লক্ষ্য রাখার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি ও এ্যাপস রয়েছে। আমাদের দেশেও এগুলো ব্যবহার করা যায় কিনা ভেবে দেখা দরকার। ইন্টারনেটে বিভ্রান্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে। মনে রাখতে হবে, উন্নতি ও অগ্রযাত্রায় সকল ভাল কাজে যেমন ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া সম্ভব তেমনি ইন্টারনেটের অপব্যবহার করে ক্ষতিও ডেকে আনা সম্ভব। তাই এ ব্যাপারে তরুণ জনগোষ্ঠীসহ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে . যুগের চাহিদা আফফান ইয়াসিন ॥ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, বিভিন্ন গবেষণা, বিভিন্ন মার্কেট, উন্নত যানবাহন, নিজস্ব বা ভাড়াটে বাড়ি, দামী রেস্টুরেন্ট, গোপন নিরাপত্তা, ক্রয়-বিক্রয়, ফাইল-ডাটা সংরক্ষণ, ধর্মীয় রীতি-নীতি চর্চা, পত্র-পত্রিকা পাঠ, মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের যে কোন প্রান্তে তথ্য আদান-প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে বর্তমানে ইন্টারনেট অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশ, কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক পর্যন্ত ইন্টারনেটের সহায়তায় লেনদেন ও হিসাব-নিকাশ করে থাকে। গুগল, ফেসবুক, ইমো, টুইটার, ইউটিউবসহ নানান প্রকার সামাজিক সাইটগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদান করা হচ্ছে। ইন্টারনেটের অবদানে ইউটিউব, ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সিং এবং পিটিসিসহ ইত্যাদি প্রযুক্তির সহায়তায় হাজার হাজার বেকার যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে চাকরিজীবী, ছাত্র-শিক্ষক, নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, অফিসার-কর্মচারী সকল বয়সের মানুষ উপার্জন করছে লাখ লাখ টাকা। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, পিসি, ও অ্যান্ড্রয়েড সেটগুলো বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রদের জন্য শিক্ষার একটা বড় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেটাও ইন্টারনেটের ওপর ভিত্তি করেই। ইন্টারনেটের যে কত চাহিদা সেটা দু’দিন ইন্টরনেট বন্ধ করে রাখলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে। আজকের বাংলাদেশ এই অবস্থানে আসার অন্যতম ভূমিকাও ছিল ‘ইন্টারনেটের’। আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে করেছে সহজ-সরল ও গতিময়। যার অবদানে ঘরে বসেই আয়ত্ত করছি বিশ্বের সকল প্রান্তে ঘটে যাওয়া তথ্য এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনাসহ অংশগ্রহণ করছি দূরবর্তী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে। নিঃসন্দেহে ইন্টারনেট আমাদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু আমরা সেটাকে অকল্যাণে ব্যয় করছি। কেউ কেউ সঠিক বিষয় উপলব্ধি না করে রাস্তায় পাওয়া তথ্য, কারও মানহানি করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য, সংশ্লিষ্ট ঘটনা বা বিষয়ের সঙ্গে জড়িত নয় এমন তথ্য, উস্কানি ও হয়রানিমূলক তথ্য ইত্যাদি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছি। যার ফলে, দেশে দেখা দেয় অরাজকতা, ক্ষুণœ হয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সম্মান, বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে এই মিথ্যা অপপ্রচারগুলো এবং বয়ে আনছে দেশের জন্য অমঙ্গল। আর আমরা এই গর্হিত কাজ করে নিজেকে পরিচয় দিচ্ছি অসচেতন নাগরিক এবং নির্বুদ্ধিতার। আবার কেউ ইন্টারনেটের সাহায্যে বিভিন্ন অসৎ কৌশল অবলম্বন করে ব্যাংক, প্রতিষ্ঠান এবং উচ্চ পদস্থ ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ইন্টারনেট অপব্যবহার প্রতিরোধ করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে . আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ মোঃ মাহবুবুর রহমান সাজিদ ॥ প্রশ্ন হচ্ছে, ফেসবুকের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? এটি কি সত্যিই আমাদের জন্য প্রযুক্তির আশীর্বাদ নাকি ভয়াবহ অভিশাপ? আমরা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে ফেসবুকে উঁকি না দিলে যেন প্রাতঃকর্ম ভালভাবে সম্পাদন হয় না। এটি আমাদের জীবনের মহামূল্যবান উপাদন ‘সময়’কে অযথা কেড়ে নিচ্ছে। প্রতিদিন লাখ লাখ কর্মঘণ্টা বিনষ্ট হচ্ছে এই ফেসবুকের কারণে। এটি একটি হুজুগ নির্ভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এখানে প্রবেশ করলেই জানা যায় আজকের দিনে কোন ইস্যুটি হট যাচ্ছে। সেই হট বিষয়টি সবাই একটা করে স্ট্যাটাস দিবে কিংবা শেয়ার করবে। সেটা হতে পারে প্রেম হতে পারে টিএসসিতে বসে থাকা প্রেমিক-প্রেমিকার রোমান্টিক চুমু, নেতা-নেত্রীদের কোন হাস্যকর খাপছাড়া মন্তব্য, কিংবা চলমান কোন দেশী-বিদেশী আন্দোলন সম্পর্কে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক। যখন যেই হুজুগই সামনে আসে, সবাই সেটি নিয়েই মেতে ওঠে। বিশেষ করে তরুণ সমাজের লেখাপড়া লাঠে উঠেছে এই ফেসবুকের কারণে। বলা হয়ে থাকে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাল্যবিয়ে রোধ করেছেন। সতীদাহপ্রথা রোধ করেছেন রাজা রামমোহন রায়। আর শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়েছেন মার্ক জাকারবার্গ। এই ফেসবুক আজ আমাদের কাছ থেকে শুধু প্রচুর সময়ই কেড়ে নিচ্ছে তা নয় বরং আমাদের আচার-আচরণ, অভ্যাস এবং জীবন পদ্ধতিতে নেতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আমরা আজ বই পড়তে উদাসীন, গান শুনতে অনীহা, দাদি-নানিদের কাছ থেকে গল্প শুনতে আর আগ্রহ নেই, নেই পরিবার পরিজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বসে আড্ডা দেয়ার মানসিকতা। আজ আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ নেই, ইচ্ছাও নেই। সবই দখল করে নিয়েছে ফেসবুক। সেখানেই আমরা আমাদের আবেগ, অনুভূতি, সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ প্রকাশ করি। সেখানে আমাদের হাজার হাজার বন্ধু। তাদের সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করি। কিন্তু তারা সবাই ভার্চুয়াল। বাস্তবজীবনে খুব কমই তাদের সহযোগিতা কিংবা সাহচর্য পাই। এটি আমাদের সমাজে সৃষ্টি করছে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা। পিতা-মাতার অবাধ্যতা, পড়াশোনা বিমুখতা, মানসিক হতাশা, আত্মীয়তার সম্পর্ক হ্রাস, পরকীয়া, প্রতারণা ইত্যাদিসহ নানা সামাজিক সমস্যা। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিবাহবিচ্ছেদের আশঙ্কাজনক তথ্য। এসবের জন্য বহুলাংশে দায়ী এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সম্প্রতি আরেকটি মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়েছে ফেসবুক নিয়ে। সেটি হলো- গুজব ছড়ানো। আমরা যদি সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলন কিংবা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে বিষয়টা আমাদের নিকট স্পষ্ট হবে। কোটা আন্দোলন চলাকালীন একজন নিহত হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে কিভাবে পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলা হয়েছিল কিংবা নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগের কেন্দীয় অফিসে চারজনকে ধর্ষণ এবং হত্যার গুজব ছবিসহ প্রচারিত করে কিভাবে অহিংস আন্দোলনকে সহিংস আন্দোলনে রূপদান করা হয়েছিল এসব আমাদের জানা রয়েছে। এসএম হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে . সাইবার নিরাপত্তা খালিদ জামান সেজান ॥ জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির অগ্রগতি মানুষের জীবনে এমন অভাবনীয় পরিবর্তন এনে দিয়েছে যা মাত্র দুই দশক আগেও ছিল সাধারণ মানুষের কল্পনার অনেক উর্ধে। ইন্টারনেট উদ্ভাবন হওয়ার ফলে আমাদের পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে অভাবনীয় গতিতে এবং একইসঙ্গে আমাদের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে নতুন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। অফিস-আদালত, পড়ালেখা, গবেষণা, সামাজিক যোগাযোগ ইত্যাদি সবক্ষেত্রেই ব্যবহার হচ্ছে ইন্টারনেট। কিন্তু, পাশাপাশি বেড়ে গেছে ইন্টারনেটের অপব্যবহারও। শুধু বেড়ে গেছে বললে ভুল বলা হবে, বরং অপব্যবহার ছড়াচ্ছে দ্রুত গতিতে। ইন্টারনেট কোন মন্দ কিছু নয়। ব্যবহারকারী যেভাবে তা কাজে লাগাবে, এটি সেভাবেই ব্যবহৃত হবে। কিন্তু, সম্প্রতি ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে সারা পৃথিবীতেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী সংগঠনগুলো। তালেবান, আল কায়েদা, আইএস ইত্যাদি বহু জঙ্গী সংগঠন তাদের বিদ্বেষমূলক ভিডিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিচ্ছে। ভিডিওগুলোতে থাকে বিভিন্ন দেশ ও ব্যক্তিবর্গকে উদ্দেশ্য করে নানা হুমকি-ধমকি। যে কারণে আজকাল মানুষের মনে সদা আতঙ্ক এবং ভীতি কাজ করে। এভাবে ইন্টারনেটের অপব্যবহার করে বিঘিœত করা হচ্ছে সামাজিক এবং মানসিক শান্তি। ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে জঙ্গীবাদ। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা বেড়ে যাওয়ার কারণে বেড়ে যাচ্ছে সাইবার অপরাধ। অভিনব উপায়ে সাইবার অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে যা বিস্মিত করে তুলছে খোদ ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞদেরই। আন্তর্জাতিক সাইবার আক্রমণের জন্য বেড়ে গেছে অর্থ আত্মসাৎ করার মতো ঘটনাও। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি এ রকমই এক দৃষ্টান্ত। আরও আছে এটিএম জালিয়াতি, অনলাইন শপিংয়ে প্রতারণা এবং পাউন্ড/ডলার বিনিময়ে হঠকারিতা। দক্ষ হ্যাকারদের দৌরাত্ম্য এতই বেশি যে, তাদের রুখে দেয়া তো দূরের কথা, তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করাই মুশকিল। তবে ইন্টারনেটের অপপ্রয়োগ সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রামসহ ব্যক্তিগত মেইল এ্যাকাউন্ট হ্যাক করে কিছু অসাধু হ্যাকার হাতিয়ে নিচ্ছে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য এবং স্পর্শকাতর ছবি। তারপর শুরু“হয় ব্ল্যাকমেইলিং, আর সেখানেও ব্যবহার হয় এই ইন্টারনেট। ইদানীং ট্রোল বা মিম তৈরির নামে হরহামেশা বিভিন্ন খ্যাতনামা ব্যক্তির সামাজিক মানহানি করা হচ্ছে যা সস্তা বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি বেড়ে যাওয়ায় তরুণ সমাজও হুমকির মুখে। রাতজাগা এবং খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা করার কারণে তাদের ভবিষ্যত স্বাস্থ্য ক্ষতির সম্মুখীন। অপরদিকে, ফেসবুক, টুইটারে বেশি সময় ব্যয় করার কারণে পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। অনেকে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে পর্নোগ্রাফির ওপর। দাম্পত্য জীবনে তৈরি হচ্ছে কলহ। খবরের পাতায় শিরোনাম হচ্ছে, ‘ঢাকায় প্রতি ১ মিনিটে একটি করে তালাক।’ ফেসবুকে ভুয়া খবর এবং গুজব ছড়িয়ে সম্প্রতি আমাদের দেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা হয়েছে। এতে সাধারণ জনগণ এবং সরকার উভয়ই বিব্রত। সেই সঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা বার বার বেছে নিচ্ছে ফেসবুক তথা ইন্টারনেটকেই। স্মার্ট হওয়ার আগেই আমরা বাচ্চাদের হাতে তুলে দিচ্ছি স্মার্টফোন। ছোটো বাচ্চারা না বুঝেই ব্লুু হোয়েলের মতো আত্মঘাতী ফাঁদে পা দিয়ে অবেলায় হারিয়ে ফেলছে মূল্যবান জীবন। আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে . শিশুর মনোজগতে আগ্রাসন অলোক আচার্য্য ॥ ইন্টারনেট বা অন্তর্জল হলো জ্ঞানের এক বিশাল দুনিয়া যেখানে আপনি অনায়াসে নিজেকে সম্দ্ধৃ করতে পারেন। আবার অন্যদিকে নিজেকে নেতিবাচক দুনিয়ার সঙ্গেও পরিচিত করাতে পারেন। এটা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ওপর। সোজা কথায় আপনার সামনে দুটো রাস্তা। একটা ভালর দিকে। যেখানে শুধুই জ্ঞানের বিশাল ভান্ডার। আপনি চাইলেই নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারেন। অন্যটা হলো খারাপ। যেখানে আপনি নিজেকে ধ্বংস করার প্রস্তুতি নিতে পারেন। আমি কোনদিকে যাব সেটা আমার ইচ্ছা। কিন্তু যেসব ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়ে তারা শিশুর পর্যায়ে। যেখানে তাদের ভাল মন্দ বোঝার বয়স হলেও আবেগ নিয়ন্ত্রণের সময় হয় না। তারা বন্ধুদের সাহায্যে হোক, কৌতূহল বশত হোক বা অন্য কোন ভাবে হোক পর্নোসাইট বা খারাপ সাইটগুলোতে প্রবেশ করছে। আর আমরা তো জানি এসব জগতে একবার প্রবেশ করলে তা থেকে মুক্ত হওয়া কঠিন। এটাও এক ধরনের নেশার মতো। যা একজন শিশুর মনোজগতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ধ্বংস করে দেয় সৎ চিন্তাগুলোকে। বারবার টেনে নিয়ে যায় অন্ধকারের দিকে। ভাল করার আগ্রহ তার মধ্যে থেকে কমতে থাকে। এবং তার আত্মবিশ্বাস অতিমাত্রায় নেমে যায়। ইন্টারনেটের যে বিশাল ভাল একটি দিক রয়েছে তা তার কাছে অজানা থেকে যায়। স্কুল কলেজ ফাঁকি দিয়ে, বাড়িতে পড়ার ফাঁকে যেকোন সময় সুযোগ পেলেই খারাপ সাইটগুলোতেই ঢুকছে। ঢাকার স্কুলগামী বহু শিশু পর্নোগ্রাফি দেখে। এটা কেবল ঢাকার চিত্র না। অন্য শহরগুলোতেও একই অবস্থা। কারণ স্মার্টফোন এখন শিশুর নাগালেই থাকে। আর নবম বা দশম শ্রেণীতে পড়া একটা শিশু অনায়াসেই স্মার্টফোন হাতে পায়। সেই সঙ্গে ইন্টারনেট সুবিধা। এটা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং আমাদের সংস্কৃতির জন্য, শিক্ষাব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ। বলা যায় দীর্ঘদিন ধরে বাড়তে বাড়তে আজ এই হারে এসে পৌঁছেছে। এবং এখনই না থামাতে পারলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। শুধু এই সংস্থার তথ্যেই নয় বরং বিভিন্ন মিডিয়ায় বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের ওপর প্রচারিত প্রতিবেদনেও পর্নোগ্রাফির বিষয়টি উঠে এসেছে। এই জরিপে ঢাকার ৫০০ স্কুলগামী শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত এ জরিপে পর্নোগ্রাফি নিয়মিত দেখার বিষয়টি নজরে এসেছে। এরা সুস্থ যৌন শিক্ষার বিপরীতে একটি অসুস্থ এবং বিকৃত যৌন রুচির পরিচয় পাচ্ছে। যা পাওয়ার জন্য এসব শিক্ষার্থীদের খুব কষ্ট করতে হচ্ছে না। হাতের মুঠোর মধ্যে থাকা সস্তা, দামী প্রায় সব মোবাইলেই রয়েছে ইন্টারনেট সুবিধা। আর এই সুযোগের অপব্যবহার করে নিজের মনের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করছে। আামাদের হাতের নাগালে প্রাপ্য এসব ডিভাইসে ইচ্ছা করলেই ইন্টারনেটে ঢুকে যে কোন সময় এসব অশ্লীল ভিডিও চিত্র দেখতে পারে, সেগুলো নেট থেকে নামাতে পারে এবং পরবর্তীতে দেখার জন্য সংরক্ষণ করতে পারে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগে আমরা প্রযুক্তিকে পেছনে দিতে পারি না। সব প্রযুক্তিই মানুষের ভালর জন্যই আসে। আমরা আামাদের মানসিকতার জন্য তা খারাপ কাজে ব্যবহার করি। হাতে হাতে মোবাইল কিন্তু কোন নেতিবাচক ঘটনা নয় বরং এই সুযোগে যদি নিজেকে খারাপ দিকে নিয়ে যাই তবে সে দোষ কার? প্রযুক্তির? এখন অনেকে তাই দেই। কিন্তু সেটা ঠিক বলে মনে হয় না। কারণ দোষারোপ করে প্রযুক্তির অগ্রযাত্রাকে আটকানো যাবে না। তার চেয়ে বরং নিজেদের মনটাকে পাল্টে ফেলি। এটা অনেক সহজ, কার্যকর ও স্থায়ী। স্কুলে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের মনোজগত হয় আবেগ প্রবণ। এদের মনের অংশটাই জটিল। তাই এদের নিয়ন্ত্রণ করাও কষ্টসাধ্য। এসব শিক্ষার্থীর মনে থাকে অগাধ কৌতূহল। আর কোনভাবে একবার এ পর্নো দেখা শুরু হলে তা মনের বড় ক্ষতি করবে এতে আর সন্দেহ কি। লেখাপড়ার ব্যাগে, অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে বিদ্যালয়েই মোবাইল ফোন নিয়ে আসে অনেক শিক্ষার্থী। তারপর তার অপব্যবহার করে। এটা আমাদের জন্য চিন্তার বিষয়। সন্তানকে সঠিক পথে রাখার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। দূরত্ব তৈরি করে নয় বরং ভালবেসে কাছে টেনে এ কাজটি করতে হবে। পাবনা থেকে . প্রযুক্তি ও প্রবঞ্চনা নূরজাহান নীরা ॥ জীবনের প্রয়োজনেই ছুটে চলা প্রতিনিয়ত। এই চলার মাঝেই দেখা হয় কত প্রকৃতি, কত জন, কত সভ্যতা, কত সংস্কৃতির পরিবর্তন। জানার আগ্রহ না থাকলেও অনেক কিছুই সামনে এসে যায় প্রকৃতির নিয়মে। গ্রাম, শহর, শহরতলী একেক এলাকার মানুষের জীবন ব্যবস্থা একেক রকম। তবে পরিবর্তনের ধারায় মানুষ প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে অনেকটা। কিছু মানুষ আছে যারা এখনও সেকেলে ধারায় চলার চেষ্টা করে তবে অধিকাংশই প্রযুক্তিনির্ভর। আর এই বিজ্ঞানের আশীর্বাদে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় মুখোশ পরাটা খুব সহজ ব্যাপার। মিথ্যা, প্রতারণা, প্রবঞ্চনা, নোংরামি অহরহ হচ্ছে। বিবেকের কাছে কোন প্রকার দায়বদ্ধতা মানুষের আছে, এটা এখন আর মনে হয় না। যেমন পথে ঘাটে প্রায় ফোনালাপ শোনা যায়- ভাই আমি তো কমলাপুর আছি, অথচ আছে নারায়ণগঞ্জে। একদিন রিক্সায় যাচ্ছি পাশাপাশি আরেক রিক্সায় এক ভদ্রলোক ফোনে বলছেন, ভাই আমি রাজশাহী আছি, আসতে দুদিন লাগবে, অথচ আছেন পঞ্চবটি ও চাষাঢ়ার মাঝামাঝি, জামতলায়। মোবাইল ফোন। এই ছোট্ট যন্ত্রটি মানুষের জীবনকে কত সহজ করে তুলেছে। দূর-দূরান্তে, দেশে-বিদেশে এই মোবাইলের মাধ্যমে আমরা প্রয়োজনীয় কথা বলতে পারি। একটা সময় ছিল, যখন প্রয়োজনীয় কথা চিঠিতে লিখে ডাকে পোস্ট করলে পৌঁছাতে কয়েকদিন সময় লেগে যেত। কোন জরুরী সংবাদ হলে লোক মারফতে খবর পৌঁছাতে হতো। দূর-দূরান্তে সশরীরে উপস্থিত হওয়াটা খুব কষ্টের, সেখানে সময়, অর্থ, শ্রম সবই দিতে হতো। আর যে সব জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হতো না, তারা খবর পেতো চিঠির মাধ্যমে, দেরিতে। কিন্তু প্রযুক্তির উন্নয়নে আমরা এখন মুহূর্তে সব খবর পৌঁছাতে পারি। বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। এর ভাল দিকও যেমন আছে, মন্দ দিকও তেমন আছে। অনেকের অনেক বছর আগে যোগাযোগ ছিন্ন হওয়া পরিচিত জনদের খুঁজে পাচ্ছেন। পুরনো সম্পর্কগুলো নতুন করে ফিরে পাওয়ার এ দিকটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। মুহূর্তে ঘটে যাওয়া খবরাখবর ফেসবুকের মাধ্যমে জানা যায়। টিভি চ্যানেল বা পত্রিকায় খবর প্রকাশ হওয়ার আগেই ফেসবুকে সব খবর ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে কবি, লেখকেরা ফেসবুকে নিজেদের লেখা লিখেন তাতে অনেকেই সে লেখা পড়ার সুযোগ পান। অনেক লেখা আছে যেগুলো পড়ে পাঠকগণ নিজেদের জ্ঞানকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারেন। লেখকগণও খুব সহজে নিজেদের লেখা পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারেন। তেমনি ভুয়া বিভিন্ন খবরে বিভ্রান্তিরও সৃষ্টি করে। ভুয়া আইডি খুলে সমাজে সম্মানিত বিভিন্ন ব্যক্তির নামে অপপ্রচার চালানো হয়। সুশীল মানুষকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলা হয় নানান ধরনের ছবি দিয়ে। ফেসবুকে অশ্লীল ছবি প্রকাশ করায়, আত্মসম্মান ক্ষুণেœর ভয়ে অনেকের আত্মহত্যার খবরও শোনা গেছে। হতে পারে একটা মানুষ মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মারা গেছে এক বাবার স্বপ্ন, এক মায়ের স্বপ্ন, একটা পরিবারের, এমনকি একটা সমাজের স্বপ্ন। সম্প্রতি ‘নিরাপদ সড়কের দাবি’তে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী কোমলমতি শিশুদের আন্দোলন নিয়েও ফেসবুকে হয়েছে নোংরামি। ছাত্রছাত্রীদের নামে অশ্লীল ভাষায় প্লেকার্ড দিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়। ছাত্রী ধর্ষণ এবং খুন নিয়েও চলেছে নানান গুজব। কেউ কেউ এমন ছবি পোস্ট করছেন, দেখে মনে হবে সত্য। আবার কেউ কেউ তার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রমাণসহ বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। সত্য-মিথ্যার পার্থক্য খোঁজা অনেকের পক্ষে সম্ভব না। এই যে নোংরামি, এটা শুধু ব্যক্তিজীবন নয়, সমাজ এবং রাষ্ট্রের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে মারাত্মকভাবে। ঘটে যেতে পারে অপ্রীতিকর কিছু। এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল সাধারণ মানুষ। ব্যক্তিগত ব্যাপারে মতানৈক্য হলেই কারও বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়। সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চলে। তাই আমাদের সবার উচিত খুব সতর্কতার সঙ্গে, সংযতভাবে ফেসবুকে কিছু লেখা। গীবত নামের মহাপাপের হাত থেকে নিজেদের বাঁচানো। প্রযুক্তি হোক মানুষের কল্যাণে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোক সত্য ও সুন্দরের বার্তাবাহক। নারায়ণগঞ্জ থেকে . অদৃশ্য অপরাধী আনসারী মুহম্মদ তৌফিক ॥ ইন্টারনেট নামক এক বিস্ময়কর সমাজ ব্যবস্থার উত্থান ঘটেছে। আমরা হোমো সেপিয়েন্স, মনুষ্য প্রজাতি, একাকী টিকতে পারি না। তাই সর্বাবস্থায় কোন না কোন সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে থাকতে চাই। বলা হয়ে থাকে যে, সমাজ হচ্ছে সম্পর্কের সেই জাল বিশেষ। অধুনা ইন্টারনেট নামক এক নতুন ধরনের সমাজ উন্মোচিত হয়েছে আমাদের সামনে। যে সমাজে মানুষের দেহগত অবস্থান নেই, যেখানে কেউ কাউকে ছুঁতে পারে না। তারপরও সেই অস্পৃশ্য জগতে ব্যক্তি তার অস্তিত্ব ঘোষণা করছে, নিত্যই কথা বলছে, শুনছে, দেখছে। রক্ত মাংসে গড়া মানুষের অবস্থান ও অস্তিত্ব ঘোষণা করছে কিছু ইলেকট্রনিক উপাদান। বিস্ময়কর নয় কি? অবাক ব্যাপারই বটে। বিস্ময়ের ঘোর কাটতেই দেখা মিলবে এর বেশ কিছু নেতিবাচক দিক। ইন্টারনেট নামক সমাজ বা যোগাযোগ ক্ষেত্রটি ইন্দ্রীয়গতভাবে অস্পৃশ্য হওয়ায় এখানে প্রতারণা বা মিথ্যার সুযোগ বেশি। এমন কোন অপরাধ নেই যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয় না। কারণ সামনাসামনি অপেক্ষা আড়ালে থেকে অপরাধ সংঘটিত করবার সুবিধা অধিক। ইন্টারনেট জগতে সবই ঘটে থাকে অস্পৃশ্যভাবে, সেখানে ব্যক্তির দেহগত অবস্থানের প্রয়োজন পড়ে না। ফেসবুক বা টুইটারে একটি ছবি আর মোবাইল নম্বর যোগ করলেই খোলা যেতে পারে বিশ্বের যে কারও নামের এ্যাকাউন্ট। একটি মিথ্যা এ্যাকাউন্টের বদৌলতে সাধারণ যে কেউ এক মুহূর্তে হয়ে যেতে পারছে গুরুত্বপূর্ণ কেউ। সুযোগসন্ধানী অপরাধী ব্যক্তিটি অন্য কারও নাম পরিচয় ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছে তার অপরাধ কার্যক্রম। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তো বটেই, সাধারণ নাগরিকগণও এই প্রতারণা চক্রের বাইরে নয়। যাতে একজন মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তোলা যায়। করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ থেকে
×