ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক নিরাপত্তায় ৫ দফা

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সড়ক নিরাপত্তায় ৫ দফা

শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ডিএমপি কমিশনারের দফায় দফায় নির্দেশ জারি ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ সত্ত্বেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা কমছে না কিছুতেই। যানবাহন ধ্বংস ও ভাংচুরসহ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিও হচ্ছে বিস্তর। সত্যি বলতে কি রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিদিনই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। এতে শুধু নারী-শিশু-ছাত্র-ছাত্রী, সাধারণ মানুষই নয় এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও বাদ যাচ্ছে না দুর্ঘটনার ছোবল থেকে। দুর্ঘটনার পর জব্দকৃত বাস থানায় নিতে গিয়ে রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানার সামনে রবিবার নিহত হন পুলিশের এক এসআই। তিনি ঢাকার রূপনগর থানায় কর্মরত ছিলেন। দুঃখজনক হলো, অধিকাংশ দুর্ঘটনার জন্য অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে চালকের বেপরোয়া গতি, অদক্ষতা ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন। সার্বিক অবস্থা ও পরিস্থিতি যখন অসহনীয় হয়ে উঠেছে, তখন সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা হয়েছে ৫ দফা নির্দেশনা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চলমান অবস্থায় যানবাহনের দরজা বন্ধ রাখা, স্টপেজ ছাড়া গাড়ি না থামানো, যানবাহনের দৃশ্যমান দুটি স্থানে চালক ও সহকারীর ছবিসহ নাম মোবাইল নম্বর প্রদর্শন, দূরপাল্লার যানবাহনে চালক ও যাত্রীর সিটবেল্ট বাঁধা নিশ্চিত করা ইত্যাদি। এর পাশাপাশি মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী সর্বোচ্চ দুজন আরোহীকে মাথায় অবশ্যই হেলমেট পরতে হবে। আশার কথা এই যে, একটি আধুনিক নিরাপদ পরিবেশবান্ধব ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সড়ক পরিবহন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য জাতিসংঘের ঘোষণায় অনুসমর্থনকারী হিসেবে বাংলাদেশ ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা বর্তমানের অর্ধেকে নামিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। তারই ধারাবাহিকতায় এতসব প্রচেষ্টা, উদ্যোগ ও পরিকল্পনা। ‘নিরাপদ সড়ক চাই-এর দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীদের সফল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধের বিষয়টিকে প্রাধিকার দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে সড়ক নিরাপত্তা উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছে ২০ দফা নির্দেশনা। ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং তিন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এসব বিষয় নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য। এবার সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতায় লামানো হচ্ছে প্রায় ১৭ লাখ স্কাউটস ও গাইডস সদস্যকে। গোটা সেপ্টেম্বর মাস ধরে চলবে এই কার্যক্রম। এতে যুক্ত করা হচ্ছে শিক্ষক সমাজ এবং অভিভাবকদেরও। তাদের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোসহ বাস্তবায়ন করা হবে ২৪টি কার্যক্রম। এর জন্য ইতোমধ্যে ট্রাফিক বিভাগের সরবরাহকৃত ‘গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইন’ এবং স্কাউটস সদস্যদের প্রণীত ‘নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতকরণে আমাদের দায়িত্ব’ শীর্ষক লিফলেটও প্রস্তুত করা হয়েছে, যা দেশব্যাপী মানুষের দ্বারে দ্বারে বিতরণ করা হবে। মালটিমিডিয়ার মাধ্যমে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের শেখানো হবে ট্রাফিকের নিয়মকানুন। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষই ট্রাফিক আইন মানে নাÑ এক সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত ডিএমপি কমিশনারের এই বক্তব্যটি সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সেই সঙ্গে তিনি হতাশাও ব্যক্ত করেছেন এই বলে যে, সেক্ষেত্রে ৯০ শতাংশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য অসম্ভব কাজ। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্যক উপলদ্ধি করে মন্ত্রিসভার জরুরী বৈঠক ডেকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর অনুমোদন দেন। তবে দুঃখজনক হলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, পরিস্থিতির উন্নতি তো দূরের কথা ন্যূনতম শৃঙ্খলা নেই কোথাও। জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, দেশে বর্তমানে যানবাহনের তুলনায় দক্ষ চালকের অভাব প্রকট। ৮ম শ্রেণী পাস ড্রাইভার এবং ৫ম শ্রেণী পাস হেলপার পাওয়া তো আরও দুঃসাধ্য। এমনকি রাজধানীতেও অনেক কিশোর বয়সী চালকের সন্ধান মেলে। তাদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে নৈশ বিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার পাশাপাশি তৈরি করতে হবে পেশাদার দক্ষ চালক। তাদের শুধু গরু-ছাগল-মানুষ চিনলেই হবে না, নিজেদেরও মানুষ ও মানবিকবোধসম্পন্ন হতে হবে। তাহলেই তৈরি হবে দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন চালক। কমবে সড়ক দুর্ঘটনা।
×