ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

হোয়াইট হাউস এখন ক্রেজিটাউন ॥ উডওয়ার্ডের লেখা বইয়ে মন্তব্য

আসাদকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আসাদকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে হত্যা করতে চাইলেও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস তাতে সাড়া দেননি। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি প্রতিবেদনের জন্য খ্যাত সাংবাদিক বব উডওয়ার্ডের লেখা ‘ফিয়ার : ট্রাম্প ইন দ্য হোয়াইট হাউস’ বইয়ে এ কথা বলা হয়েছে। ট্রাম্পের উপদেষ্টারা প্রেসিডেন্টের অনেক আচরণকে ‘ধ্বংসাত্মক ও বিপজ্জনক’ হিসেবে দেখেন, যে কারণে তারা অনেক সময় প্রেসিডেন্টের আদেশ অমান্য করতেও দ্বিধা করেন না। বইয়ে দেয়া তথ্য সম্পর্কে তীব্র সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘এটি আরেকটি বাজে বই।’ বিবিসি ও গার্ডিয়ান। ফিয়ারে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ জন কেলি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যবহারে বিরক্ত ছিলেন। এ কারণে তিনি এক সময় ব্যক্তিগত কথাবার্তায় হোয়াইট হাউসের অন্য স্টাফদের সামনে ট্রাম্পকে একজন ‘ইডিয়ট’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। বব উডওয়ার্ডের লেখা বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে ছাড়ার আগেই এর একটি কপি গার্ডিয়ানের কাছে এসেছে। গত বছর সিরিয়ায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর রাসায়নিক হামলার পর ট্রাম্প আসাদকে হত্যা করতে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বলেছিলেন বলে বইটিতে দাবি করা হয়েছে। ম্যাটিস তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্পকে ‘এটাই ঠিক আছে’ বললেও পরে সিরিয়ায় স্বল্প আকারের বিমান হামলার পরিকল্পনা করেন এবং আসাদকে হত্যার দিকে যাননি। উডল্যান্ড ওয়াশিংটন পোস্টের সিনিয়র সাংবাদিক। তিনি ১৯৭১ সাল থেকে ওয়াশিংটন পোস্টে আছেন। বর্তমানে তিনি পত্রিকাটির এ্যাসোসিয়েট এডিটর। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য তিনি সুপরিচিত। সহকর্মী কার্ল বার্নস্টাইনকে নিয়ে তিনি ওই রিপোর্ট করেন। ওই রিপোর্টের প্রতিক্রিয়ায় রিচার্ড নিক্সন ১৯৭৪ সালে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ফিয়ার বইতে তিনি ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসের সরল বর্ণনা তুলে ধরেছেন। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্প খুবই উদ্বিগ্ন। রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষ এখন তদন্ত করছে। এ কারণে ট্রাম্প এখন স্বাভাবিক আচরণ করতে পারছেন না। হোয়াইট হাউসের ভেতরের পরিস্থিতিকে বিশৃঙ্খলাপূর্ণ বলে উডওয়ার্ড মনে করেন। তার ভাষায় হোয়াইট হাউস এখন এক ‘ক্রেজিটাউন’। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি নিয়ে এর আগে মাইকেল উলফ নামে আরেকজন সাংবাদিক একটি বই লিখেেিছলেন। ওই বই লেখার পর থেকে ট্রাম্প খুব নার্ভাস আছেন। ‘ফায়ার এ্যান্ড ফিউরি’ নামের মাইকেল উলফের ওই বইটি এ বছর জানুয়ারিতে বের হয়। ফিয়ার বইতে উডওয়ার্ড জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউসের অধিকাংশ স্টাফ ট্রাম্পকে নিয়ে হতাশ। তিনি এখানে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ অনেকের মন্তব্য উল্লেখ করেছেন। যেমন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস একবার তার সহযোগীদের ট্রাম্পের আচরণ ও বোঝার ক্ষমতা সম্পর্কে বলেছেনে যে তিনি পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রের মতো আচরণ করছেন। কেলি ও ম্যাটিস অবশ্য তাদের উদ্ধৃত করে বলা এসব কথা অস্বীকার করেছেন। পরপর দুটি বই প্রকাশের ঘটনায় হোয়াইট হাউস চিন্তিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্প বলেছেন, এটি আরেকটি বাজে বই। এতে ভুয়া তথ্য রয়েছে। তিনি দাবি করেন উডওয়ার্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সমস্যা আছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স বলেছেন, বইটিতে বানোয়াট গল্প ছাড়া আর কিছু থাকবে না। সাবেক হতাশগ্রস্ত স্টাফদের বিবৃতি এতে থাকবে। প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে খারাপ ধারণা তৈরি হয় এমন কথাই তারা বলবেন। ৪৪৮ পৃষ্ঠার বইটি সম্পর্কে উডওয়ার্ড বলেছেন, বইটি লেখার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেন। উডওয়ার্ড জানতে পারেন, নিজের সিনিয়র উপদেষ্টাদের সঙ্গেও ট্রাম্প খারাপ ব্যবহার করেছেন। যেমন সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টারকে ট্রাম্প এক সময় ‘অহঙ্কারে বুক ফুলিয়ে রাখা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন সম্পর্কে ট্রাম্প বলেছিলেন যে, তিনি একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত। তার একটি ছোট শহরেরও আইনজীবী হওয়ার মতো যোগ্যতা নেই। সদ্য প্রয়াত আরিজোনার সিনেটর জন ম্যাককেইন সম্পর্কে সম্প্রতি যে ভুল তথ্য ট্রাম্প দিয়েছেন সেটিও এ বইতে স্থান পেয়েছে। হোয়াইট হাউসের নৈশভোজে ট্রাম্প বলেন, ম্যাককেইন ভিয়েতনামে বন্দী থাকা অবস্থায় মুক্তির প্রস্তাব পেয়ে সবার আগে কাপুরুষের মতো বেরিয়ে আসেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ম্যাককেইনকে মুক্তির প্রস্তাব দেয়া হলেও সহযোদ্ধাদের মুক্তি ছাড়া বেরিয়ে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
×