ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিকে গর্বিত করেছে ইংল্যান্ডের ফুটবলাররা

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জাতিকে গর্বিত করেছে ইংল্যান্ডের ফুটবলাররা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বকাপ এমন একটি মঞ্চ যেখানে ভিলেন থেকে নায়ক বনে যায় কেউ, আবার কেউ নায়ক থেকে হয়ে যান ভিলেন। জর্ডান পিকফোর্ডের ক্ষেত্রেই এই উদাহরণটি প্রযোজ্য হয়েছে এবার রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপে। ২৪ বছর বয়সী ৬ ফুট ১ ইঞ্চি উচ্চতার পিকফোর্ড ক্লাব পর্যায়ে বেশ সমালোচিত ছিলেন। কিন্তু এবার জাতীয় দলের হয়ে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে সব সমালোচনাকে কবর দিতে পেরেছেন তরুণ গোলরক্ষক। ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন। তিনি যেন ইংল্যান্ডের ‘জাতীয় বীরে’ পরিণত হন। ‘শেষ ষোলো’তে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে টাইব্রেকারে গোল রুখে দিয়ে ইংল্যান্ডকে জেতান পিকফোর্ড। কোয়ার্টার ফাইনালে সুইডেনের বিপক্ষে ম্যাচে তিনটি নিশ্চিত গোল হওয়া থেকে রক্ষা করেন। সঙ্গে ৯টি বল সেভ করেন। নিজে যতটা না গর্বিত তারচেয়ে পিকফোর্ড মনে করেন ইংল্যান্ডের এই দলটি দেখিয়েছে আন্তর্জাতিক ফুটবল কেমন হওয়া উচিত। তার দাবি এবার ইংল্যান্ড ফুটবল দল জাতিকে গর্বিত করেছে। ৩ বিশ্বকাপে এর আগে নকআউট পর্বে টাইব্রেকারে হেরে গিয়েছিল ইংলিশরা। পেনাল্টি শূটআউটে বারবার ভাগ্যাহত হওয়ার দুঃসহ স্মৃতিটা এবার রাশিয়া বিশ্বকাপেও বারবার হানা দিয়েছিল। কিন্তু গোলরক্ষক পিকফোর্ড এবার সেই নির্মম ইতিহাসকে কবর দিয়েছেন দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে। তিনি এখন ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করতে সক্ষম হয়েছেন নিজেকে। এভারটনের এ গোলরক্ষকের তাই এবার ক্লাব পর্যায়ে মর্যাদা বেড়েছে। তাকে পেতে মরিয়া চেলসি ও বেয়ার্ন মিউনিখসহ বেশকিছু বড় ও মর্যাদাপূর্ণ ক্লাব। কারণ তিনি দলকে ও দেশকে গর্বিত হওয়ার মতোই কিছু উপহার দিতে পেরেছেন। পিকফোর্ড বলেন, ‘কারণটা (জাতিকে গর্বিত করা) খুবই চমৎকার। আমরা আমাদের কাজ করেছি এবং মানুষের মুখে হাসি এনে দিতে পেরেছি। আর এমনটাই আন্তর্জাতিক ফুটবল হওয়া উচিত। আমি যতদিন পারি ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে খেলতে চাই। এরচেয়ে ভাল অনুভূতি আর নেই। নেতৃস্থানীয়রা আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। কিন্তু সবাই ফুটবলে মাত্র একটাই সুযোগ পায় নিজেকে বড় কিছু প্রমাণ করার জন্য। আমার সেটাকে আঁকড়ে ধরা প্রয়োজন ছিল। আমি সবগুলো পেনাল্টি শটগুলোর ঠিক জায়গায় যেতে পেরেছিলাম এবং আমি যেভাবে চেয়েছিলাম সবগুলোই সেভাবে করতে পেরেছিলাম। নিজেকে খুব ভারমুক্ত মনে হচ্ছিল এবং আমার মনে হচ্ছিল যে দেশের জন্য আমি এটা করতে সক্ষম হব।’ স্পট কিকে ¯œায়ুচাপটা কার ওপরে বেশি থাকে? যে শট নেয় নাকি যে গোলরক্ষককে শট ঠেকাতে হয়? পিকফোর্ড বলেন, ‘আমার মনে হয় শট যে নিচ্ছে তারচেয়ে অনেক কম চাপ থাকে গোলরক্ষকের ওপর। কিন্তু আমি আমার সর্বোচ্চ মানসিক শক্তিতে ছিলাম যে কোন আক্রমণ ঠেকাতে, আত্মবিশ্বাসীও ছিলাম। আমি জানতাম আমার কোথায় যেতে হবে, কিন্তু সেটা কখনও কাউকে বলতে যাব না।’ কলম্বিয়ার সঙ্গে ম্যাচটির পর পিকফোর্ড সুইডেন ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচগুলোয় নিজেকে আরও বেশি মেলে ধরতে পেরেছিলেন। সুইডেনের বিপক্ষে তিনি দুর্দান্ত ৯টি সেভ করেন। ক্রোয়েশিয়ার ফরোয়ার্ড মারিও মানদুকিচের একটি শট ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের একজন মহাতারকার মাধ্যমেই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন পিকফোর্ড। তিনি বলেন, ‘আমি পিটার স্মেইখেলের ভিডিওগুলো দেখে দেখেই বেড়ে উঠেছি। সুতরাং তার কিছু হয়তো এবার বিশ্বকাপে আমার মধ্যে ছাপ পড়েছিল। তাছাড়া সান্ডারল্যান্ডের ভক্ত হিসেবে আমি খুব পছন্দ করতাম টমি সোরেনসেনকে। আমি নিয়মিত ফুটবল দেখতাম, অথচ অন্য বাচ্চারা বেশি পছন্দ করতো রাস্তায় নেমে লুকোচুরি খেলতে। আমি নুড়ি বিছানো রাস্তায় ফুটবল খেলতাম এবং ঝাঁপিয়ে পড়ে বল আটকানোর অনুশীলন করতাম। একজন গোলরক্ষক হিসেবে অবশ্যই নিজের মধ্যে সবধরনের যোগ্যতার মিশ্রণ থাকা প্রয়োজন। যে কেউ কৌশলগতভাবে অনেক বড় হতে পারেন, কিন্তু বলকে জালে জড়াতে না দেয়ার মতো যোগ্যতা আর কিছুই নেই। সে জন্য অবশ্যই যথেষ্ট সাহস থাকা জরুরী।’ অথচ বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বে বেলজিয়ামের কাছে গোল হজম করার জন্য ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন পিকফোর্ড। কিন্তু পরবর্তীতে নিজের যোগ্যতা মেলে ধরেই সবকিছুর জবাব দিতে পেরেছিলেন এ তরুণ গোলরক্ষক। তিনি বলেন, ‘খেলায় আমার মানসিক দিকটা খুবই শক্ত। কোনকিছুই আমাকে প্রভাবিত করতে পারেনি। যে কেউ আমাকে চাইলে সমালোচনা করতে পারেন যদি আমি ভাল কিংবা খারাপ খেলি। আমি সবসময় আমার বাবাকে এ বিষয়গুলো নিয়ে জিজ্ঞেস করি এবং তিনি আমাকে সোজাসাপ্টা কথাই বলেন। অন্য মানুষের কথাতে আমি বিন্দুমাত্র প্রভাবিত হই না। এটাই আমাকে ভাল হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এখনও আমি আমার বৃদ্ধ গোলকিপার কোচ মার্ক প্রুধোকে ডাকি এবং তিনি আমার সঙ্গে সবসময় বাস্তবটাই বলেন। আদনান জানুজাজের গোলটি ছিল স্বাভাবিক এক প্রবৃত্তির অংশ। তার অবিশ্বাস্য দক্ষতাপূর্ণ কৌশল ছিল সেটা। আমার প্রতিক্রিয়া অবশ্যই ভাল ছিল। আমি যদি সেটাকে বাঁচাতে পারতাম, সবাই বলতো কি দুর্দান্ত সেভ। মানুষ আমার সমালোচনা করে, কারণ আমি শীর্ষ পর্যায়ের। আমিতো এমন অবস্থানেই আসতে চেয়েছিলাম।’
×