ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তিন চ্যাম্পিয়নের বিদায়

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তিন চ্যাম্পিয়নের বিদায়

শুরু থেকেই একের পর এক অঘটন দেখেছে ইউএস ওপেনে। মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের প্রথমপর্ব থেকেই বিদায় নেন সিমোনা হ্যালেপ। যিনি চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট ফ্রেঞ্চ ওপেনের শিরোপা জিতেছিলেন। হ্যালেপের পর অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের চ্যাম্পিয়ন ক্যারোলিন ওজনিয়াকিও ছিটকে পড়েন। তারপর উইম্বলডনের চ্যাম্পিয়ন এ্যাঞ্জেলিক কারবারও বিদায় নেন ইউএস ওপেন থেকে। এর ফলে বছরের তিন গ্র্যান্ডস্লাম জয়ী তারকাকে হারিয়ে ফেলে মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেন। সিমোনা হ্যালেপের ইতিহাস তবে সেটা লজ্জার। রোমানিয়ান এ টেনিস তারকা প্রথম নারী শীর্ষ বাছাই যিনি কিনা ইউএস ওপেনের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছেন। ১৯৬৮ সালে পেশাদার যুগে প্রবেশের পর হ্যালেপের আগে আর কোন নারী টেনিস খেলোয়াড় ইউএস ওপেন থেকে শুরুতেই বিদায় নেননি। নিউইয়র্কের ফ্লাশিং মিডোসে বছরের শেষ গ্র্যান্ডসøামের প্রথমদিনই লজ্জার ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হওয়া হালেপ ৬-২, ৬-৪ সেটে হেরে যান ৪৪তম বাছাই এস্তোনিয়ার কাইয়া কানেপির কাছে। গত বছরও ইউএস ওপেনের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিলেন ২৬ বছর বয়সী এক নম্বর টেনিস তারকা। আর্থার এ্যাশ স্টেডিয়ামে তাকে হারিয়েছিলেন মারিয়া শারাপোভা। নারী এককে অঘটনের শুরু। এ বছরই জিতেছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম ট্রফি। ফ্রেঞ্চ ওপেনের সাফল্যের পর উইম্বলডনে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিলেন হালেপ। ইউএস ওপেনেও অন্যতম ফেবারিট ছিলেন তিনি। কিন্তু প্রথমদিন কানেপির সঙ্গে পেরে ওঠেননি। প্রথম সেটে ৬-২-এ হারলেও দ্বিতীয় সেটে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ান রোমানিয়ার এ সুন্দরী। এক পর্যায়ে ৪-৪ করে ফেলেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পেরে ওঠেননি। প্রথম রাউন্ড থেকে অপ্রত্যাশিত বিদায়ের জন্য হ্যালেপ দায়ী করছেন অতিমাত্রার কোলাহল ও ভিড়কে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় খুব বেশি কোলাহল আর ভিড় এরজন্য দায়ী। সবকিছু মিলিয়ে মাত্রাটা বেশি হয়ে গিয়েছিল। কারণ আমি খুবই শান্তিপ্রিয়। তবে আমার এখানে ভাল ফল রয়েছে। তাই বলে আমি অভিযোগ করছি না।’ এক নম্বর খেলোয়াড় হ্যালেপের পর দ্বিতীয় রাউন্ডে ৩৬তম বাছাই লেসিয়া সুরেনকোর কাছে ৬-৪, ৬-২ গেমে পরাজিত হয়েছেন বিশ্বের দুই নম্বর নারী টেনিস তারকা। লুই আর্মস্ট্রং স্টেডিয়ামে এদিন ওজনিয়াকিকে দেখা যায় ভিন্ন রূপে। পুরনো সেই ছন্দের দেখা মেলেনি। তাতে প্রথম সেটেই ব্যবধান গড়ে দেন ইউক্রেনের তারকা। দ্বিতীয় সেটের শুরুতে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিলেও শেষ পর্যন্ত পারেননি নিজেকে মেলে ধরতে। অথচ ক’দিন আগেও এই ওজনিয়াকি ছিলেন বেশ উজ্জ্বল। বছরের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে নেমেই বাজিমাত করেন সাবেক এই নাম্বার ওয়ান। তুলে নেন নিজের প্রথম মুকুট। স্বপ্নের মতো বছর শুরু করা ওজনিয়াকির জন্য বিধাতা শেষ আঁচড়টা এভাবে দেবেন কে জানত। ইউএস ওপেনে দু’বার খেলেছেন ফাইনাল। একবারও ছোঁয়া হয়নি শিরোপা। এবার বোধ হয় সেই অতীত দুঃস্মৃতিটা লাঘবের আশায় ছিলেন ওজনিয়াকি। কিন্তু এবার তো আরও বড় বিপর্যয়। ফাইনাল দূরে থাক, দ্বিতীয় কদমেই খেতে হলো হোঁচট। এত তাড়াতাড়ি বিদায়, মানতে পারছেন না ওজনিয়াকি। তাই তো হারের পর তার কণ্ঠে হতাশার সুর, ‘এতটা খারাপ হবে চিন্তা করিনি। তবে ক্রেডিটা লেসিয়াকে দিতেই হয়। সে চমৎকার খেলেছে, অন্তত আমার চেয়ে ভাল। বিশেষ করে শট বলের যুতসই ব্যবহার করেছে সে। যখন শট বল পেয়েছে বাড়তি জোর দিয়েছে। আমার উচিত ছিল আরও খাপ খাইয়ে নেয়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচটা ফসকে গেছে। আমি সেটা করতে পারিনি।’ হ্যালেপ-ওজনিয়াকির পথে হেঁটেছেন এ্যাঞ্জেলিক কারবারও। উইম্বলডনের চ্যাম্পিয়ন কারবারকে হারিয়ে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন ডোমিনিকা সিবুলকোভা। শনিবার স্লোভাকিয়ার এই টেনিস তারকা ৩-৬, ৬-৩ এবং ৬-৩ গেমে হারান এ্যাঞ্জেলিক কারবারকে। জার্মান তারকার বিদায়ের ফলে এ মৌসুমের কোন গ্র্যান্ডস্লাম জয়ী-ই রইলো না আর ইউএস ওপেনে। বছরের শেষ গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেনের প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেন ফ্রেঞ্চ ওপেনের শিরোপাজয়ী সিমোনা হ্যালেপ। রোমানিয়ান তারকার পথে হেঁটেছেন মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ী ক্যারোলিন ওজনিয়াকিও। ইউক্রেনের লেসিয়া সুরেঙ্কোর কাছে হেরে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই বিদায় নেন ডেনমার্কের এই টেনিস তারকা। অবশেষে শনিবার হ্যালেপ-ওজনিয়াকির পথে হেঁটে ইউএস ওপেনের তৃতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেন উইম্বলডনের চ্যাম্পিয়ন এ্যাঞ্জেলিক কারবারও। তবে বিদায়ঘণ্টা বেজেই চলেছে তারকা খেলোয়াড়দের। সোমবার যেমন ছিটকে গেছেন সাবেক চ্যাম্পিয়ন মারিয়া শারাপোভাও। রাশিয়ান গ্ল্যামারগার্ল ৬-৪, ৬-৩ গেমে হেরেছেন স্পেনের কার্লা সুয়ারেজ নাভারোর কাছে। নিজের জন্মদিনের দিনই শারাপোভাকে হারিয়ে চমক দিলেন কার্লা সুয়ারেজ। তার আগে বেলারুশের এরিনা সাবালেঙ্কার কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছেন পেত্রা কেভিতোভা। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাবালেঙ্কা এদিন ৭-৫ এবং ৬-১ গেমে পরাজিত করেন দুইবারের কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট পেত্রা কেভিতোভাকে। পুরুষ এককেও অঘটন চলছে। সোমবার বিদায় নিয়েছেন ফেবারিট রজার ফেদেরারও। জন মিলিমানের র‌্যাঙ্কিং ৫৫। অস্ট্রেলীয় এই খেলোয়াড়ের কাছে হেরেই ইউএস ওপেন থেকে বিদায় নিলেন পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন রজার ফেদেরার। কোন গ্র্যান্ডস্লাম প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচ খেলতে নেমেই বাজিমাত মিলিমানের। মিলিমানের কাছে ফেদেরার হেরেছেন ৩-৬, ৭-৫, ৭-৬ (৯/৭), ৭-৬ গেমে। ২০১৩ সালে টমি রবার্তোর কাছে চতুর্থ রাউন্ডে হারের পর এটি ইউএস ওপেন থেকে ফেদেরারের সবচেয়ে দ্রুততম বিদায়। ম্যাচে ফেদেরার দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেটে সেট পয়েন্ট পেয়েছিলেন। কিন্তু সুইস তারকা গুলিয়ে ফেলেছেন সার্ভে। গোটা ম্যাচে ৭৭টি ‘এনফোর্সড এরর’ ২০ বারের গ্র্যান্ডস্লাম বিজয়ী তারকাকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে।
×