ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছাড়পত্রবিহীন নোংরা পরিবেশে ওষুধ উৎপাদন

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ছাড়পত্রবিহীন নোংরা পরিবেশে ওষুধ উৎপাদন

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ নেই উৎপাদন লাইসেন্সের মেয়াদ, ফায়ার সার্ভিসের সনদও নেই, নেই পরিবেশ ছাড়পত্র, তারপরও নোংরা পরিবেশে ওষুধ উৎপাদন করছে ইউকে হেলথ কেয়ার ল্যাবরেটরিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। শ্রীনগর নওপাড়া সড়কের উত্তর পাশে ছোট তারাটিয়া (হাসারগাঁও) নামক স্থানে অবস্থিত সাইনবোর্ডবিহীন একটি দ্বিতল আবাসিক ভবনে চলছে এই ওষুধ তৈরির কাজ। সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, নিচতলার স্যাঁতসেঁতে ছোট ছোট কয়েকটি কক্ষে বসানো হয়েছে ক্যাপসুল ও ট্যারলেট তৈরির মেশিন। অপরিচ্ছন্ন রুমের পাশাপাশি মেশিনগুলোতেও রয়েছে ধূলা-ময়লা। এমন অবস্থার কারণ জানতে চাইলে, স্বত্বাধিকারী জাকির হোসেন বলেন, কনস্ট্রাকশনের কাজ চলতেছে তো তাই এ অবস্থা। কিছুদিন পর রংচং করলেই ঠিক হয়ে যাবে। দোতলায় গিয়ে দেখা যায়, আয়া-বুয়ার মতো কয়েকজন মহিলা ময়লা কাপড় পড়ে ওষুধের কৌটায় আঠা দিয়ে লেবেল লাগাচ্ছে। আর পুরাতন ময়লার বস্তার ভেতর ভরছে। এছাড়াও বাথরুমে রাখা হয়েছে ওষুধ তৈরির কাঁচা মাল। মোট কথা উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠানটির লিকুইড সেকশন, ট্যাবলেট সেকশন, ক্যাপসুল সেকশন, কোটিং সেকশন ও কিউ,সি ইকুইপমেন্ট সেকশনসহ সর্বত্রই দেখা গেছে নোংরা পরিবেশ। পরিবেশ সার্টিফিকেটের বিষয়ে জানতে চাইলে, মালিক জাকির হোসেন বলেন, ছোট খাটো প্রতিষ্ঠান তাই পরিবেশ ছাড়পত্র প্রয়োজন হয় না। উল্লেখ্য, উৎপাদন সার্টিফিকেটের ২য় লাইনে ইউনানি লেখাটি ফ্লুইড দিয়ে মুছে আয়ুর্বেদিক লেখা হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ এই সার্টিফিকেটে উৎপাদন কর্মকর্তা হিসেবে কবিরাজ মোঃ হায়দার আলী রেজিঃ নং-এ-৬০৬ এবং মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা হিসেবে মোঃ গোলাম মোস্তফা বি ফার্ম এর নাম রয়েছে। বাস্তবে এদের কাউকেই ইউ কে হেলথ্ কেয়ার ল্যাবরেটরিজে গিয়ে পাওয়া যায়নি। জানা যায়, এই কোম্পানির উৎপাদন অফিসার মোঃ সোহেবের শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে অষ্টম শ্রেণী। আর মান নিয়ন্ত্রণ অফিসারের তালিকায় রয়েছেন মালিকের ছোট ভাই মোঃ জাহিদুল ইসলাম (ব্যবসায়ী)। ইউ কে হেলথ কেয়ার ল্যাবরেটরিজের (আয়ুর্বেদিক) উৎপাদিত ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউ কে সেনেগ্রা-৫০০, ইটো সেক্স-২৫০ মিঃ গ্রাঃ, এ্যারাকটিন, নরকট, বেবী ২, বি,জি গোল্ড, বি,জি ভিট, স্যানবোন-ডি, স্যাকল-এম, কনভিট প্লাস, সঞ্জীবনী, ডোসা-১০, ইটোরেক্স গোল্ড, অমৃত রস, হিমোনিক ও ব্রুনবেটসহ মোট ৭০ প্রকার ওষুধ। এসব ওষুধ ঢাকা মিটফোর্ডসহ সারাদেশে সরবরাহ করা হয় বলে সূত্রমতে জানা গেছে। এসব ওষুধ কতটা মানসম্মত জানতে চাইলে, মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জন বলেন, বিষয়টি ড্রাগ সুপারের অধীনে, তবে কোনভাবেই প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র বিহীন কিংবা নোংরা পরিবেশে ওষুধ উৎপাদন সমর্থনযোগ্য নয়। অন্য কোন বিষয়ে অনিয়ম হলে আমরা তা দেখব। জেলা পরিবেশ কর্মকর্তা বলেন, শ্রীনগরে এ ধরনের কোন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। এদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিসসহ যথা শীঘ্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষা ও জীবন বাঁচাতে প্রয়োজন ওষুধ। সে ওষুধ তৈরিতে যদি কোন অনিয়ম থাকে, তবে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×