ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ॥ বসবাস অযোগ্য চিকিৎসক বাসভবন

৫৬ বছরেও সংস্কার হয়নি

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

৫৬ বছরেও সংস্কার হয়নি

সমুদ্র হক ॥ চিকিৎসকদের জন্য নির্মিত আবাসিক ভবনগুলোর জরাজীর্ণ অবস্থা। পলেস্তারা খসে পড়েছে। ছাদ দিয়ে চুইয়ে পড়ে বৃষ্টির পানি। নড়বড়ে দরজা জানালা। আগাছা ও ঝাউবনে ঘিরে ফেলেছে চারদিক। সংস্কার হয়নি গত ৫৬ বছরেও। গত শতকের শেষের দিকেও কয়েকজন চিকিৎসক থাকতেন। এখন কেউ থাকতে পারেন না। ঝুঁকি আছে। কখন ছাদ ভেঙ্গে পড়ে। কয়েকটি ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে, তাও বিশ বছর আগে। নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি এখনও। এই হলো বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের চিকিৎসকদের জন্য নির্মিত বাসভবনের অবস্থা। এদিকে বিশ বছর আগে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের এয়ার মার্ক বাড়ি নির্মিত হয়েছে। আজও হস্তান্তর হয়নি। বগুড়া শহরের শেরপুর রোডের ধারে ১৯৬২ সালে জেলার জেনারেল হাসপাতাল স্থাপিত হয়। নামকরণ হয় মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল। ওই সময়ে হাসপাতালের রাস্তার ওপারে নির্মিত হয় চিকিৎসকদের জন্য ৮টি কোয়ার্টার। যেগুলো একতলা। রোগীদের সর্বক্ষণিক দৃষ্টিতে রাখা ও সেবার জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়। ষাটের দশকের শেষের দিকে জেনারেল হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৫০ করে মডার্নাইজড হাসপাতালে উন্নীত হয়। চিকিৎসকগণ তাদের এয়ার মার্ক (চিহ্নিত বাড়ি) বাসভবনে থাকেন। হাসপাতালও এক তলা থেকে বহুতলে রূপান্তরিত হয়। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুতে হাসপাতালের ধারে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি বহুতল ভবনে ৫০ আসনের বগুড়া মেডিক্যাল কলেজের যাত্রা শুরু হয়। এরপর প্রয়োজন হয় টিচিং হাসপাতাল। তখন মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা বাড়িয়ে আড়াইশ’তে উন্নীত করা হয়। স্ট্যাফ প্যাটার্নেও পরিবর্তন আসে। ১৯৯৮ সালে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের জন্য এয়ার মার্ক দ্বিতল বাসভবন নির্মিত হয়। যা গেল ২০ বছরেও তত্ত্বাবধায়কের কাছে হস্তান্তর হয়নি। দীর্ঘদিনে এই ভবন সংস্কারও হয়নি। এই বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ নুরুজ্জামান সঞ্চয় বলেন, চিকিৎসকদের ৮ টি বাসভবনের মধ্যে সবই বসবাসের অনুপযোগী। তিনটি কোয়ার্টার পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিছুদিন আগেও একজন চিকিৎসক থাকতেন। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তিনি থাকেন না। আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) সহ অন্য মেডিক্যাল অফিসারের বাসভবন ঝুঁকিপূর্ণ। তারা শহরে থাকেন। প্রয়োজনে দ্রুত হাসপাতালে আসেন। কোয়ার্টার সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের জন্য গণপূর্ত বিভাগকে জানানো হয়েছে। কোন ব্যবস্থা নেয়নি। হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের এয়ার মার্ক বাসভবন সম্পর্কে বলেন, জেনেছেন দ্বিতল বাড়িটি বিশ বছর আগে নির্মিত। হস্তান্তরের কাগজপত্র তিনি পাননি। বিষয়টি নিয়ে গণপূর্ত অধিদফতরের (পিডাব্লিউডি) নির্বাহী প্রকৌশলী বাকি বিল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করলে বলেন, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের চিকিৎসকদের ভবন পরিত্যক্ত হয়েছে এমনটি তিনি জানেন না। তা ছাড়া তত্ত্বাবধায়কের বাসভবন বিশ বছরেও কেন হস্তান্তর হয়নি তাও অবগত নন। ওপর মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেবেন। এদিকে ওই বাসভবনগুলোতে গিয়ে চোখে পড়ে, হাসপাতালের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কয়েকজন কর্মচারী কয়েকটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন। এ জন্য কোন ভাড়া গুনতে হয় না। তাদের কথা- কেউ যখন থাকে না তখন তারাই ঝুঁকি নিয়েই থাকছে। এতে ঘরগুলো রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়কের দুই ইউনিটের বাসভবনে থাকেন ওয়ার্ডবয় রেজাউল করিম ও সিভিল সার্জন অফিসের এক কর্মচারী। বললেন, বাড়িতে কেউ থাকে না বলে তারা বাড়িটি দেখাশোনা করছেন।
×