ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি আস্থার অন্যতম কারণ

জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র অবকাঠামো বিনিয়োগে আগ্রহী

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র অবকাঠামো বিনিয়োগে আগ্রহী

এম শাহজাহান ॥ উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর বিদেশী উদ্যোক্তাদের আস্থার জায়গায় এখন বাংলাদেশের নাম। বিশেষ করে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তারা দেশের বড় অবকাঠামো খাতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে চায়। এ লক্ষ্যে এ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে জাপানের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ঢাকায় অফিস খুলেছে। অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস প্রথমবারের মতো কমার্শিয়াল উইং খুলে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। এছাড়া ভারত, চীন, সিঙ্গাপুর এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগ আনার চেষ্টা করছে সরকার। জানা গেছে, বিদেশী বিনিয়োগে কর অবকাশ সুবিধা, ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেবা কার্যক্রম চালু হওয়া, একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ, প্রতিটি দেশের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সুযোগ, সস্তা শ্রম এবং সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় বিদেশী উদ্যোক্তাদের আস্থা বেড়েছে। এছাড়া উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক স্বীকৃতি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও বেশি শক্তিশালী করবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। গত কয়েক দশকে বেড়েছে মাথাপিছু আয়, কমেছে দারিদ্র্যের হার, শক্তিশালী হয়েছে অর্থনৈতিক অবস্থানও। মাত্র ১শ’ ২৯ ডলার মাথাপিছু আয় দিয়ে পথচলা শুরু। এখন তা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬শ’ ১০ ডলারে। অর্থনৈতিকভাবেও এখন শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ। জনগণের জীবনযাত্রার মানও হয়েছে উন্নত। এসব দিক বিবেচনায় নিয়েই বাংলাদেশের বিষয়ে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা উৎসাহিত হয়ে উঠছে। জানা গেছে, জাপানের সজিত কর্পোরেশন দীর্ঘ ১৫ বছর পরে বাংলাদেশে ফিরেছে। এছাড়া হলি আর্টিজান ঘটনার পর জাপানীরা বাংলাদেশের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করলেও এখন দেশটির উদ্যোক্তারা বাংলাদেশ মুখী হচ্ছেন। ইতোমধ্যে সজিত কর্পোরেশন একটি কার্যালয় খুলেছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে চায় তারা। তাদের বিশেষ আগ্রহ মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে একটি শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠা করা। সজিত কর্পোরেশনের অটোমোবাইল, জ্বালানি, খনিজ সম্পদ, রাসায়নিক, খাদ্য কৃষি, বনজ সম্পদ, ভোগ্য, শিল্পপার্কসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা আছে। এই কোম্পানিটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অবদান রাখতে চায়। পাশাপাশি জ্বালানি ও সামাজিক অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ করবে। জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানটি গত ২০০৪ সালের দিকে বাংলাদেশে তাদের সরাসরি কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। এখন এ দেশে ব্যবসার সম্ভাবনা দেখে আবার ফিরেছে। ঢাকায় তাদের কার্যালয়টি গত আগস্ট মাসে উদ্বোধন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, জাপানী প্রতিষ্ঠানটি এ বিষয়ে একটি প্রাথমিক আবেদন করেছে। পরে চূড়ান্ত আবেদন করবে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে জাপানের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আসবে বাংলাদেশে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জাপানী কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগে আগ্রহ দেখছেন এ দেশের ব্যবসায়ীরাও। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, জাপান বরাবরই আমাদের পাশে ছিল। মাঝে হলি আর্টিজানের ঘটনায় উদ্যোক্তারা কিছুটা পিছুটান দিলেও এখন সেই অবস্থা নেই। দেশটির বড় উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আশা করছি, জাপানী বিনিয়োগ বাংলাদেশে বাড়বে। শুধু তাই নয়, এ দেশে ব্যবসা করার জন্য অংশীদার খোঁজা, সমীক্ষা ও অন্যান্য কাজ শুরু করেছে দেশটি। জাপান টোব্যাকো, হোন্ডা মোটর কর্পোরেশন, মিতসুবিশি কর্পোরেশন দেশের বেসরকারী খাতে যৌথ প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। এদিকে, টিকফা বৈঠক সামনে রেখে মার্কিন সরকারী বাণিজ্য প্রতিনিধিদল জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এ দেশে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। বাড়ানো হবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য। সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এশিয়া অঞ্চলের বাণিজ্য বিভাগের নির্বাহী পরিচালক জেমস গোলসেন বৈঠক করেন। ওই সময় গোলসেন বলেন, এ দেশের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় মার্কিন দূতাবাসে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল উইং খোলা হবে। বাংলাদেশ এখন আর তলাবিহীন ঝুঁড়ি নয়। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মডেল। এ দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে মার্কিন উদ্যোক্তাদের আগ্রহ রয়েছে। প্রসঙ্গত, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি জেনারেল ইলেক্ট্রিক (জিই) যৌথভাবে ৪৪০ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ৩৬ হাজার ৮১৫ কোটি ব্যয়ে মহেশখালীতে তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি চালিতবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এটি বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সরাসরি মার্কিন বিনিয়োগ। এদিকে, বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে নীতি সংস্কারসহ বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নতির তাগিদ দিয়েছেন উন্নয়ন সহযোগীরা।
×