ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গণদাবি উপেক্ষা করলে আন্দোলন তীব্র হবে ॥ রিজভী

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গণদাবি উপেক্ষা করলে আন্দোলন তীব্র হবে ॥ রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার পতনের মহালগ্ন এসে গেছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের গণদাবি উপেক্ষা করলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। আর কোন উপায় নেই তাদেরকে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে। মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। রিজভী বলেন, গণভবনে সংবাদ সম্মেলনকালে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দাপট থাকলেও চেহারায় ছিল দুঃশ্চিন্তার ছাপ। তিনি অভিযোগ করেন, দেশব্যাপী আবারও নতুন করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গত কয়েক দিনে প্রায় চার শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ‘জাতীয় ঐক্যের নামে সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে’ বলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আকস্মিকভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বক্তব্য অশুভ চক্রান্তের ইঙ্গিতবাহী। এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে নেমে পড়েছেন ওবায়দুল কাদের সাহেবরা। সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার সম্বলিত যে বিধান সংরক্ষিত আছে, ওবায়দুল কাদের সাহেবের বক্তব্য সেই অধিকারকেও বিপন্ন করার উস্কানি। রিজভী বলেন, জনসমাজে সাম্প্রদায়িক ঐক্য যখন অটুটবন্ধনে গ্রোথিত, তখন ওবায়দুল কাদেরের আচমকা সাম্প্রদায়িকতা টেনে আনা দেশের মানুষকে পরিকল্পিত বিভাজনের দিকে ঠেলে দেয়ার এক গভীর চক্রান্ত। শান্তি ও সহবস্থানের মধ্য দিয়ে ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে জনগণের নির্বিঘেœ বসবাসের ওপর ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার শামিল। ক্ষমতার মোহে মশগুল হয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা প্রলাপ বকতে গিয়ে এখন সাম্প্রদায়িকতাকে সামনে নিয়ে আসছে। তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্র সমাজের স্থিতিকে ভেঙ্গে ফেলতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। রিজভী বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় আসলে এক লাখ মানুষকে হত্যা করা হবে’ বলে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বক্তব্য দিয়েছেন। এ তথ্য কোন পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে সংগ্রহ করেছেন তিনি, তা জানতে চাই। এক লাখ লোক মারা যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কেন তোফায়েল আহমেদ? আপনাদের কোন অপকর্মের কারণে এ আশঙ্কা করছেন? কবে আর কোন উপায় নেই সরকারকে গদি ছাড়তেই হবে। রিজভী অভিযোগ করেন তোফায়েল আহমেদের এলাকায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দেখামাত্র আওয়ামী লীগ হামলা করে, জখম করে। তিনি বলেন, বিরোধী দল ও মতের যে কোন ব্যক্তিই ভোলা এলাকায় বসবাস করতে পারছে না। তাই নিজেদের অপকর্মের প্রতিশোধ হতে পারে, এ আশঙ্কায় কি তোফায়েল আহমেদ মানুষ হত্যার কাল্পনিক তথ্য দিচ্ছেন? আসলে ভবিষ্যতে ব্যাপক হত্যার ভীতি ছড়িয়ে জনসমাজে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি করছেন। বিরোধী দল দমনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করছেন? তবে বিএনপি প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি করে না। সরকার আতঙ্কে ভুগছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কাদায় আটকে পড়ে এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারের মাধ্যমে মরণ কামড় দিচ্ছে। পুরনো মামলা চালু করা এবং নাশকতার অভিযোগ এনে দেশব্যাপী নেতাকর্মীদের মামলায় জড়ানো হচ্ছে। সুতরাং মামলাগুলো যে পরিকল্পিত সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। রিজভী বলেন, গণমাধ্যমের সুবাধে দেখা গেছে পুলিশ ছাত্র ও যুবকদের পকেটে মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে হয়রানি করছে। একই কায়দায় ককটেল বা অন্যান্য বিস্ফোরক বস্তু দেখিয়ে বিএনপি নেতাদের নামে মামলা দেয়া হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে। ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে পুলিশ সারাদেশে ব্যাপক ধরপাকড় করছে অভিযোগ করে রিজভী জানান। মাত্র ৩ দিনে চারশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর মামলার আসামির সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে যাবে। পতনের আতঙ্ক থেকেই সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর এই দমনপীড়ন চালাচ্ছে। আমি সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করছি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, দলের কেন্দ্রীয় নেতা এম এ মালেক, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, মনির হোসেন প্রমুখ।
×