ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষুদে ভাস্কর্য নিয়ে তরুণ অভি

প্রকাশিত: ০৮:১২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ক্ষুদে ভাস্কর্য নিয়ে তরুণ অভি

শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে ১৮তম এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল বাংলাদেশ ২০১৮। এই প্রদর্শনীর একটি বিশেষ প্রজেক্ট ‘বিন্দু বিসর্গ’। কিউরেটার বিশ্বজিৎ গোস্বামীর নির্বাচিত ১২ তরুণ শিল্পী তাদের শিল্পকর্ম নিয়ে অংশগ্রহণ করছেন এ প্রজেক্টে। এদেরই একজন কুতুবুল ইসলাম (অভি)। কুতুবুল ইসলাম ও তার শিল্প ভাবনা নিয়েÑ পপি দেবী থাপা তরুণ ভাস্কর কুতুবুল ইসলাম (অভি)। ভাস্কর্যে এক প্রতিশ্রুতিশীল তরুণের মুখ। বাবা শাহিনুল ইসলাম। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। মা ফাতিমা খাতুন কর্মরত একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনিই বড়। ছোট বেলা থেকেই শিল্পপ্রেমী। মাগুরা জেলায় জন্ম নেয়া এবং যশোরে বেড়ে ওঠা কুতুবুল ইসলাম আজীবন একজন ভাস্কর্য শিল্পী হিসেবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন। শৈশব থেকেই সব কাজের মাঝেও ভাস্কর্যের জন্য আলাদা সময় বেড় করে নিতেন তিনি। সবার চোখ এড়িয়ে কাঠ, পেরেক দিয়ে জুড়ে আবার কখনও সোলা কেটে বিভিন্ন ধরনের ফিগার বানানোর চেষ্টা করতেন। শিল্প সৃষ্টির নতুন ভাবনা এবং শিল্পের মাধ্যমে নিজের ভাব প্রকাশ তখন থেকেই শুরু। একজন ভাস্কর্য শিল্পী হয়ে গড়ে ওঠার পেছনে পরিবারে অনুপ্রেরণার তেমন কেউ ছিল না। এ বিষয়ে কাছের মানুষদের যে খুব সাপোর্ট পেয়েছেন তাও নয়। রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম নেয়া অভির শিশু বেলার ভাস্কর্য সৃষ্টি ছিল পরিবারের সবার আড়ালে। যশোর জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ অভি এখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। একাডেমিক শিক্ষায় ভাস্কর্য সৃষ্টির পাশাপাশি মিনিয়েচার ভাস্কর্য করার ঝোঁকটা তার বেশি। এ প্রসঙ্গে অভি বলেন ছোট বেলা থেকেই লুকিয়ে ভাস্কর্য তৈরি করতাম, বড় ভাস্কর্য করলে সবার চোখে পড়ে যেত। তাই হয়ত এটাই আমার সৃষ্টিতে বেশি করে ধরা দেয়। তবে বাবা-মায়ের দোয়া সঙ্গে নিয়েই আমি শিল্প সৃষ্টির সন্ধানে আজ এ পথে। তারা আমার শিল্পকে সামনাসামনি প্রশ্রয় না দিলেও মনে মনে যে সন্তানের কর্মে খুশি হন তা আমি বুঝি। আমার বিশ্বাস একদিন সংস্কারের জাল ছিন্ন করে তারাও আমার মতো করে আমার শিল্পকে কাছে টেনে নেবেন। সে আশায় আমার সৃষ্টির ধারা অব্যাহত থাকবে। কুতুবুল ইসলাম অভি কাজ করছেন বিভিন্ন ধরনের উপাদান দিয়ে। বিভিন্ন ধাতব পদার্থের পাশাপাশি যে কোন কিছু, যেটা সেপ দেয়া যায় সেটি দিয়েই তার ভাস্কর্য নির্মাণের প্রচেষ্টা থাকে। কাঠ, দিয়াশলাই কাঠি, পেন্সিল, সাবান, মোমবাতি, চক, সোলা, এমনকি হওয়াই মিঠাই দিয়েও নির্মাণ করেছেন তার ভাস্কর্য। সুন্দরকে, নতুনকে সাদরে গ্রহণ করা অভি মনে করেন চিন্তাকে, ভাবনার বিষয়বস্তুকে সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরার জন্য যদি প্রযুক্তির ব্যবহার হয় তাহলে সেটা ভাল। তবে তিনি বিশ্বাস করেন, কাজের জন্য প্রযুক্তি কিন্তু প্রযুক্তির জন্য কাজ নয়। মিনিয়েচার ভাস্কর্য শিল্প নিয়ে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশ গ্রহণ করা অভি আমাদের দেশে ভাস্কর্য শিল্পের প্রথম বাধা হিসাবে দায়ী করেন সামাজিক কুসংস্কার, গোঁড়ামি, আর ভুল ধারণাকে। এক্ষেত্রে তিনি অভাব বোধ করেন সমাজে সঠিক শৈল্পিক শিল্প বোধের। ভাস্কর্য শিল্পী এবং শিল্পের বর্তমান অবস্থা নিয়ে তিনি বলেন এই সময়ে শিল্পের বিস্তার হচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন নান্দনিক ভাবনায় শিল্পের সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু এর আরও প্রসারের জন্য বেশি বেশি প্রদর্শনী দরকার। ভাস্কর্যের জন্য বড় এবং উন্নত মানের স্টুডিও দরকার। প্রয়োজন আরও বেশি সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা। তবে এর মধ্যে প্রথম বিষয় হচ্ছে আমাদের শিক্ষা। ছোট বেলা থেকেই শিশুদের পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিল্প বোধের উপর সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে সবাইকে মূর্তি এবং ভাস্কর্যের পার্থক্য বুঝতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে ভাস্কর্য কোনকিছুর সঙ্গে তুলনা করার জন্য নয়। এখানে কোন প্রাণ দেয়া-নেয়ার বিষয় নেই। এটা শিল্প। শিল্পীর ভাবনায় বাস্তব জীবন ও জগতের রূপ বিন্যাস। শিল্পীর কল্পনায় অতীত ও বর্তমানের ধারাকে অব্যাহত রেখে সুন্দর আগামীর রূপ রেখা সৃষ্টি। ‘বিন্দু বিসর্গ’ প্রজেক্টটিতে তার অংশগ্রহণ করা বিষয়টি হচ্ছে ‘ডে আফটার টুমরো’ এখানে মিনিয়েচার ভাস্কর্যের মাধ্যমে প্রকৃতির উপর মানুষের হস্তক্ষেপ ও তার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে গ্রাফাইট পেন্সিল। তার শিল্পের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন মোট ১৩টি ধাপের মাধ্যমে প্রকৃতির উপর মানুষের নিষ্ঠুরতাকে দেখানো হয়েছে। এখানে প্রকৃতি ধ্বংসের রূপক হিসাবে হাতিকে ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ পৃথিবীর স্থলভাগের সবচেয়ে শক্তিশালী, বৃহৎ প্রাণী হচ্ছে হাতি। বাংলাদেশের ভাস্কর্য শিল্প নিয়ে আশাবাদী কুতুবুল ইসলাম বিশ্বাস করেন সারা পৃথিবী একদিন বাংলাদেশের ভাস্কর্য নিয়ে গর্ব করবে।
×