ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সালাউদ্দিনের অধরা স্বপ্ন পূরণ হবে কি এবারই?

প্রকাশিত: ০৮:০২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সালাউদ্দিনের অধরা স্বপ্ন পূরণ হবে কি এবারই?

রুমেল খান ॥ যখন ফুটবলার (ফরোয়ার্ড) ছিলেন, তখন মাঠে নেমে গোল করেছেন অবলীলায়, ভূরি ভূরি। ঢাকা লীগে সবার আগে করেছিলেন গোলের সেঞ্চুরি। ক্লাব দলের হয়ে (১৯৬৯-১৯৮৪) জিতেছেন সাত শিরোপা (৫টি লীগ এবং ২টি ফেডারেশন কাপ)। দেশের প্রথম ফুটবলার হিসেবে ১৯৭৫ সালে খেলতে গিয়েছিলেন বিদেশী লীগে (১৯৭৫ সালে, হংকংয়ের এফসি ক্যারোলিনের হয়ে)। সবমিলিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল এবং জনপ্রিয় ফুটবলার হিসেবে তার নামটিই উচ্চারণ করে থাকেন বেশিরভাগ ফুটবলবোদ্ধা। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে খেলে (১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল এবং ১৯৭৩-১৯৮৩) কোন শিরোপা জিততে পারেননি তিনি (আসরগুলো ছিলÑ মারদেকা কাপ, আগা খান গোল্ডকাপ, প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপ, এশিয়ান গেমস ফুটবল)। তার অবসরের এক বছর পর (১৯৮৪) সাউথ এশিয়ান গেমস ফুটবল এবং ১৯৯৩ সাল থেকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়। কাজেই খেলোয়াড় হিসেবে এই দুটি টুর্নামেন্টেরও শিরোপা জেতার সৌভাগ্য হয়নি তার। এমনকি তিন দফায় (১৯৮৫, ১৯৮৮ ও ১৯৯৪) জাতীয় দলের কোচ হিসেবেও জিততে পারেনি সাফের শিরোপা। এখানেই শেষ নয়, ২০০৮ সালে তিনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) চেয়ারে বসার পর এ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দল এ পর্যন্ত মোট ৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছে। কিন্তু কোনটিতেই চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি লাল-সবুজ। ফলে খেলোয়াড়-কোচ-বাফুফে সভাপতি হিসেবেও এখনও সাফের শিরোপা জিততে পারেননি সালাউদ্দিন। বরং এই সময়ে বাংলাদেশের ফুটবল চলে গেছে তলানিতে। এই আসরে বাংলাদেশ প্রথম এবং শেষবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সেই ২০০৩ সালে, তখন অবশ্য বাফুফেতে ছিলেন না সালাউদ্দিন। ২০০৯ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের স্বাগতিক শেষবারের মতো হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার আবারও আয়োজক তারা। এবার কী পারবে লাল-সবুজরা? পারবে কি ১৫ বছর পর সাফের হারানো শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে? এ নিয়ে কি ভাবছেন বাফুফে বস? সোমবার বাফুফে ভবনে সাফের স্পন্সর পরিচিতি এবং লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি এ ফুটবলার বলেন, ‘একজন ফুটবলার এবং বাফুফে সভাপতি হিসেবে আমি প্রত্যাশা করি চ্যাম্পিয়ন হতে পারব। তবে কী হবে সেটা বলতে পারব না। সবকিছু নির্ভর করছে খেলোয়াড়দের ওপর।’ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ শুরু হচ্ছে সাফ। সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভুটান। সাফ চ্যাম্পিয়নশীপের জন্য জাতীয় দল অনেক দিন ধরে অনুশীলনের মধ্যে ছিল। ঘরোয়া লীগের পর ৩৫-৪০ ফুটবলারকে নিয়ে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ক্যাম্পের আয়োজন করে বাফুফে। কাতারে গিয়ে কন্ডিশনিং ক্যাম্প ছাড়াও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল ফুটবলাররা। সেখান থেকে ফিরে এসে আবার দক্ষিণ কোরিয়ায় গিয়ে ক্যাম্প করে। এরপর এশিয়ান গেমস খেলতে ইন্দোনেশিয়ায় যায় জেমি ডের দল। এশিয়ান গেমসে কাতারকে হারিয়ে প্রথমবার নকআউট পর্বে ওঠে ইতিহাস গড়েছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। অ-২৩ দলের সঙ্গে সিনিয়ররাও একসঙ্গে ছিলেন। এত প্রস্তুতির পর সালাউদ্দিনের বিশ্বাস এবার পারবে বাংলাদেশ, ‘সাফের জন্য যত কিছুর দরকার ছিল আমরা করেছি। আমি তো খেলে দিতে পারব না। আমার মনে হয় এখন খেলোয়াড় এবং কোচদের কাজ করার সময়। কাতার, ইন্দোনেশিয়া এরপর নীলফামারীতে প্রতি ম্যাচ খেলেছে। দলের প্রস্তুতিতে আমি খুশি। ফুটবল দলের জন্য যা কিছু দরকার আমরা সবকিছুই করেছি।’ সাফ নিয়ে এখনও খুব একটা উন্মাদনা দেখা যায়নি। টিপকটের জন্যও ভিড় দেখা যায় না। জাতীয় দলকে সমর্থন দেয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সালাউদ্দিন, ‘জাতীয় দলকে সমর্থন দিন। আশা করছি ভাল একটা রেজাল্ট পাব। এই রেজাল্ট পাওয়ার জন্য বাইরের দিক থেকেও সমর্থন প্রয়োজন।’ আয়োজক হিসেবে কত নাম্বার পাবে বাংলাদেশ, তা এখনোই বলা যাচ্ছে না। তবে দলগুলোর ভিসা, দলগুলোকে গ্রহণ করাসহ সবকিছু ভালভাবে সম্পন্ন করেছে বলে মনে করেন বাফুফে সভাপতি। এর আগে রবিবার হয়েছে সাফের ট্রফি উন্মোচন। অথচ টুর্নামেন্টের একদিন আগে হয়েছে লোগো উন্মোচন! সাফের কো-স্পন্সর এ্যানোটেক্স। স্পন্সর পরিচিতি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এ্যানোটেক্সের পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম ফেরদৌস, প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা শ্যামল দত্ত, এ্যাডটাচের সিইও এসএম নওয়াজ সোহাগ ও বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। টুর্নামেন্টের অন্যান্য তথ্য ॥ ভারত, পাকিস্তান এবং নেপাল দল থাকবে ঢাকার ওয়েস্টিন হোটেলে। বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কা দল থাকবে ফার্স হোটেলে। ম্যাচ অফিসিয়ালরা থাকবেন হোটেলে পূর্বাণী ইন্টারন্যাশনালে। দলগুলো অনুশলীন করবে ধানম-ির ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের মাঠে, ধানম-ির শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেড মাঠে, নেভি গ্রাউন্ড এবং উত্তরার এপিবিএম গ্রাউন্ডে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচের দিন ঢোকার নিয়ম হলোÑ গেট-১ দিয়ে ভিভিআইপি, অংশগ্রহণকারী দল ও ম্যাচ অফিসিয়ালরা, গেট-২ দিয়ে ভিআইপি ও স্পন্সররা, গেট-১৫ দিয়ে সাংবাদিকরা ঢুকবেন। চ্যানেল নাইনে খেলাগুলো সরাসরি সম্প্রচারিত হবে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ২৩ হাজার ধারণক্ষমতার গ্যালারির সাড়ে ১৭ হাজার টিকেট চলে যাবে বাফুফের এ্যাফেলিয়েটেড বিভিন্ন ক্লাব ও সংস্থার কাছে। প্রিমিয়ার লীগ থেকে শুরু করে পাইওনিয়ার, বিভিন্ন স্তরের ক্লাব থেকে শুরু করে প্রতিটি জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাকে টিকেট দেবে বাফুফে। আজ থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হবে। ভিআইপি গ্যালারি ১০০, সাধারণ গ্যালারি (ক্যাটাগরি-১) ৫০ ও ২০ টাকা (ক্যাটাগরি-২) করে টিকেট কিনতে পাবেন দর্শকরা। উল্লেখ্য, প্রায় এক দশক আগেও বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ছিল ৩৬ হাজার।
×