ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জয় দিয়ে শুরুর আশা কোচ জেমির

প্রকাশিত: ০৮:০২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জয় দিয়ে শুরুর আশা কোচ জেমির

জাহিদুল আলম জয় ॥ দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে বাংলাদেশ সবসময়ই সমীহ জাগানিয়া দল। কিন্তু ফেবারিট হওয়া সত্ত্বেও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বেশিরভাগ সময় ব্যর্থ হতে হয়েছে লাল-সবুজের দেশকে। আগে হওয়া ১১ আসরের মধ্যে মাত্র একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। এবার ‘সাফ সুজুকি’ কাপের ১২তম আয়োজনের স্বাগতিক হয়ে দ্বিতীয়বার মুকুট জয়ের স্বপ্ন বুনছে কোচ জেমি ডে’র দল। এ লক্ষ্যে ভুটান পরীক্ষা দিয়ে আজ শুরু হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব পুনরুদ্ধারের মিশন। ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচটি সন্ধ্যা সাতটায় মাঠে গড়াবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। এর আগে বিকেল ৪টায় একই গ্রুপের নেপাল-পাকিস্তান ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে এবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের। টুর্নামেন্টে এই চার দেশ ছাড়াও ‘বি’ গ্রুপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সর্বাধিক সাতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত, একবার করে শিরোপাজয়ী শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। বুধবার ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ দিয়ে এই গ্রুপের ময়দানী লড়াই শুরু হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছেলেদের ফুটবলে বাংলাদেশের সাফল্য নেই বললেই চলে। সঙ্গী হয়েছে শুধু হতাশা। বিশেষ করে ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে ভুটানের কাছে ৩-১ গোলে হেরে মানসম্মান বিসর্জন দেয় বাংলাদেশ। থিম্পুতে ওই হারে একেবারে তলানিতে চলে যায় দেশের ফুটবল। এখন সাফে যখন বাংলাদেশ শিরোপা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন বুনছে তখন শুরুতেই সামনে সেই ভুটান। যাদের কাছে আগে কোনদিন না হারলেও দুই বছর আগে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ নিতে হয়েছে। এ পর্যন্ত ১২ বারের দেখায় বাংলাদেশ জিতেছে আটটিতে, ভুটানীদের জয় মাত্র একটি। আর ড্র হয়েছে তিন ম্যাচ। কিন্তু সবশেষ লড়াইয়ে যে হারের তিলক লেপ্টে আছে লাল-সবুজদের। এর চেয়েও বড় কথা, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভাবনীয় উন্নতি করেছে ভুটান। সেখানে বাংলাদেশ শুধু পিছিয়েই গেছে। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ যেখানে ১৯৪তম অবস্থানে, সেখানে ভুটানের অবস্থান ১৮৩। অথচ একসময় এই ভুটানকে বলে কয়ে হারিয়েছে বাংলার ছেলেরা। শুধু তাই নয়, জয়ের ব্যবধান হতো আট, দশ কিংবা বারো গোলে। সময়ের বিবর্তনে সেই দলটিই এখন বাংলাদেশকে হুঙ্কার দেয়! তবে সদ্য শেষ হওয়া এশিয়ান গেমস ফুটবলে সাফল্যের পর স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। কাতারের মতো পরাশক্তিতে হারিয়ে প্রথমবারের মতো গেমসের নকআউট পর্বে খেলেছেন জামাল, সুফিলরা। সুফিলদের এই সাফল্যের সাফেও সফল হওয়ার আশা ২০০৩ আসরের চ্যাম্পিয়নদের। তবে এ লক্ষ্যে বাস্তববাদী বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে। ইংলিশ এই কোচ ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে চান। সোমবার তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগিয়ে যেতে চাই। আগেই সেমিফাইনাল বা ফাইনাল নিয়ে ভাবছি না। প্রথম ম্যাচ জিতলে শেষ চারে খেলা সহজ হয়ে যাবে। তখন আমরা পরবর্তী স্টেজ নিয়ে ভাবব।’ জেমি ডে আরও বলেন, ‘ছেলেরা পরিশ্রম করছে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে আছে তারা। ওরা চায় শুরুটা জয় দিয়ে করতে। আশা করছি সেটা হবে’। তবে টুর্নামেন্টের অন্য দলগুলোকেও সমীহ করছেন বাংলাদেশ কোচ, ‘এটা ঠিক আমার দলে কোয়ালিটি আছে। কিন্তু এটাও সত্যি অন্যদের তুলনায় আমরা পিছিয়ে আছি।’ নিজ দেশে শিরোপা ছাড়া অন্য যে কোন ফলাফলকে ‘ব্যর্থতা’ বলা হবে এটা ভালভাবেই জানেন কোচ। আগের তিন আসরে গ্রুপ পর্বে বাদ পড়া বাংলাদেশ তাই স্বাগতিক হলেও চাপে থাকছে। এজন্যই এশিয়ান গেমসের দল থেকে কয়েকজন তরুণকে বাদ দিয়ে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ফুটবলারকে দলভুক্ত করেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে জেমি ডে বলেন, ‘সাতজন অভিজ্ঞ ফুটবলারকে দলে রেখেছি। এশিয়ান গেমসের ১১ জন আছে তাদের সঙ্গে। প্রতিটি ফুটবলারের জন্য সমান সুযোগ রাখতে চেয়েছি আমি। সাফের মতো আসরে অভিজ্ঞতাকে এড়ানো যায় না। এরা তরুণদের সাহায্য করবে বলে আমার বিশ্বাস। বাংলাদেশে খেলা বলে সবাই শিরোপা জেতার আশা করবে।’ মাঝমাঠের অভিজ্ঞ ফুটবলার ও সাবেক অধিনায়ক মামুনুল বলেন, ‘আমাদের প্রথম ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ। এই ম্যাচ জিতলে চাপ অনেকটাই কমে যাবে। তখন পরের ম্যাচগুলোতে ভাল করা সহজ হবে। আমরা মাঠে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে খেলব।’ যে ২০ ফুটবলারকে অনুশীলন করিয়েছেন অবশেষে তাদেরকে রেখেই চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ কোচ। সোমবার বাফুফে ভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাফ সেনাদের বেছে নেন তিনি। চূড়ান্ত দল বেছে নিলেও এখনো অধিনায়কের নাম ঘোষণা করা হয়নি। আজ জানা যাবে কাপ্তানের নাম। ধারণা করা হচ্ছে, এশিয়ান গেমস ফুটবলে নেতৃত্ব দেয়া জামাল ভূঁইয়াই হতে চলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সাফের নিয়ম অনুসারে ২০ সদস্যের দলে গোলরক্ষক থাকতে হবে তিনজন। জেমি ডে আগে থেকেই রেখেছেন দুই গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা ও শহীদুল আলম সোহেলকে। তৃতীয় গোলরক্ষক হিসেবে সুযোগ দিয়েছেন আনিসুর রহমান জিকোকে। গতকালের অনুশীলনের শেষ দিকে মাঠ ছোট করে দুই ভাগে ভাগ হয়ে অনুশীলন করেছেন জামাল-মামুনুলরা। এক দিকের গোলপোস্টের সামনে আশরাফুল, রক্ষণে তপু, বিশ্বনাথ, বাদশা ও ওয়ালী। মাঝমাঠে মাসুক মিয়া, বিপলু ও ফাহাদ, জামাল ভূঁইয়া। ফরোয়ার্ড লাইনে দেখা গেছে সুফিল ও সাদ উদ্দিনকে। এরাই ঘুরে ফিরে খেলেছেন এশিয়ান গেমসের একাদশে। ধারণা করা হচ্ছে এই একাদশ নিয়েই ভুটান পরীক্ষায় নামছে বাংলাদেশ। মাঠের লড়াইয়ে স্বাগতিক বাংলাদেশকে সমীহ করলেও জয়ের জন্য খেলবে ভুটান। দলটির কোচ ট্রেভর মরগান বলেন, ‘বাংলাদেশ ভাল দল। ওরা এশিয়ান গেমসে ভাল করেছে। তবে আমার ছেলেরাও জয়ের জন্য খেলবে’। ভুটানের অধিনায়ক কর্ম শেদ্রুপ শেরিংও জয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
×