ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় চিত্র ও চারুকলার আসর বসেছে রাজধানীতে। শনিবার প্রায় মাসব্যাপী দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে গত ৩৭ বছর ধরে প্রতি দু’বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই প্রদর্শনী। এবার চলছে ১৮তম আসর। যোগ দিয়েছেন বিশ্বের ৭০টি দেশের চারুশিল্পী, যাদের অনেকেই স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিখ্যাত ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। দেশী-বিদেশী ৪৬৫ শিল্পীর ৫৮৩টি বিভিন্ন রকমের শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। প্রচলিত বিভিন্ন মাধ্যমের চিত্রকলার বাইরেও রয়েছে ভাস্কর্য, আলোকচিত্র, প্রাচ্যকলা, প্রিন্ট মেকিং, ভিডিও আর্ট, মৃৎশিল্প, পারফরমেন্স আর্ট, নিউ মিডিয়া, স্থাপনা শিল্প ইত্যাদি। বলতেই হয় যে, এটি একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। বহির্বিশ্বের সঙ্গে শিল্প ভাবনা বিনিময়ের অন্যতম মাধ্যম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ। দেশে দেশে মৈত্রী ও সম্প্রীতির সেতু ও মেলবন্ধনের অন্যতম একটি হাতিয়ার হতে পারে শিল্পকলার এই মাধ্যমটি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি যথার্থই বলেছেন, চারু ও শিল্পকলা দেশ-কাল-সময় ও সংস্কৃতি ভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবে এর নান্দনিক সৌন্দর্য ও আবেদন চিরন্তন, সীমাহীন, সর্বোপরি সর্বজনীন। প্রসঙ্গত স্মরণ করা যেতে পারে, বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের ইতিহাস-ঐতিহ্য সুপ্রাচীন এবং গৌরবোজ্জ্বল। এ প্রসঙ্গে সুদূর আফগানিস্তানের বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তির ভাস্কর্যের কথা স্মরণ করা যেতে পারে, যেগুলো সম্প্রতি তালেবান জঙ্গী কর্তৃক ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে উঠে এসেছে বৈশ্বিক আলোচনায়। এর পাশাপাশি ঐতিহাসিক সিন্ধু ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা, শিলালিপি, হস্তশিল্প, বিবিধ ভাস্কর্য ও চিত্রকলাসহ অজন্তা-ইলোরার কথা এসে যায় অনিবার্যভাবে। বাংলাদেশের পাহাড়পুর, ময়নামতি, মহাস্থানগড়ই বা কম কি? এক নজরে বরেন্দ্র মিউজিয়ামসহ ঢাকা মিউজিয়াম প্রত্যক্ষ করলেই সহজে হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব যে, কি অসাধারণ ও গৌরবজনক আমাদের চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের ইতিহাস। তারই ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠে বেঙ্গল ওরিয়েন্টাল আর্ট স্কুল, বিশ্বভারতী- শান্তিনিকেতন, ঢাকা আর্ট কলেজ, যেটি পরে পরিণত হয়েছে চারুকলা ইনস্টিটিউশনে। বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের অনেক বিখ্যাত চিত্রকর ও ভাস্কর আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক সুখ্যাতি পাওয়ার পাশাপাশি ভূষিত হয়েছেন নানাবিধ আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননায়। সত্য বলতে কি, এরই পরম্পরা বুঝি রক্ষা করে চলেছে এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী। এ কথা অনস্বীকার্য যে, বিশ্বব্যাপী জ্ঞানভিত্তিক ও প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণের অন্যতম হাতিয়ার শিল্প-সংস্কৃতি-চিত্রকলা-চারুকলা ইত্যাদি। দেশে দেশে মানুষে মানুষে সম্প্রীতি ও মৈত্রীর বন্ধন গড়ে তোলাসহ পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে শিল্পকলার অবদান ব্যাপক। এর পাশাপাশি শিল্পকলা একটি দেশ ও জাতিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গৌরব ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষ করে তরুণ ও যুব সমাজের মধ্যে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির পাশাপাশি নন্দনতাত্ত্বিক চেতনার উন্মেষ ও সুকুমারবৃত্তি গড়ে তোলায়ও প্রভূত সহায়ক। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সুমহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শিল্প সংস্কৃতির ইতিবাচক ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না কিছুতেই। চিত্রকলা, চারুকলা, ভাস্কর্য ইত্যাদি এই বৃহত্তর চেতনারই অংশবিশেষ। চিত্রকলা ও ভাস্কর্যে মূর্ত ও বিমূর্ত রীতি নিয়ে একটি বিতর্ক দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। অহেতুক তাতে অনুপ্রবেশ না করেও বলা যায়, শিল্পকর্ম শুধুই তাকিয়ে দেখার বস্তু নয়, বরং তা হৃদয়ঙ্গম তথা উপলব্ধি করার। বিশ্বায়নের কঠিন প্রতিযোগিতা, যুদ্ধবিধ্বস্ত, প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষকবলিত বর্তমানে, প্রবল অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও অস্বস্তিতে প্রতিনিয়ত কর্মব্যস্ত মানুষের জীবনে হৃদয়ানুভূতির সাক্ষাত আদৌ মেলে কিনা জানি না, তবে এটা তো সত্যি যে, শত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও যে কোন সুন্দরের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে বড় সাধ জাগে, বাহ্্ কী দারুণ!
×