ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ই-পেমেন্টে নয়া আইন

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ই-পেমেন্টে নয়া আইন

দেশের ইলেক্ট্রনিক পরিশোধ বা ই-পেমেন্ট ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এই ব্যবস্থাকে আরও বেশি সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো আইন করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত আইনের একটি খসড়া তৈরি করে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল ও দশ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় ইলেক্ট্রনিক আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিতে হবে। পরিশোধ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি নিরসনের লক্ষ্যে নতুন আইন করার উদ্যোগ অবশ্যই গুরুত্ববহ। বিশৃঙ্খলা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ সহজতর হবে। ব্যাংকের সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক পরিশোধ, মোবাইল ব্যাংকিং ও ই-ওয়ালেটসহ এ জাতীয় লেনদেন ইলেক্ট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেম আইনের আওতায় থাকবে। প্রত্যাশিত খসড়ায় বলা হয়েছে, এসব মাধ্যমে কোন অননুমোদিত লেনদেন হলে তার দায়ভার নিতে হবে প্রতিষ্ঠানকে। অর্থাৎ গ্রাহকের অনুমোদন ছাড়া কোন লেনদেন হলে প্রতিষ্ঠানকে নিতে হবে দায়। আবার একবার পরিশোধের নির্দেশ দেয়ার পর তা বাতিল করা যাবে না। এর মানে কারও অনুকূলে পরিশোধের নির্দেশনাটি ভুল প্রমাণিত হলে অন্য পরিশোধের সঙ্গে তা সমন্বয় করা যাবে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে এক এ্যাকাউন্ট থেকে অন্য এ্যাকাউন্টে লেনদেন ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ বা এ্যাপভিত্তিক অর্থ পরিশোধ ব্যবস্থাই হচ্ছে ই-পেমেন্ট। ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে এ্যাপভিত্তিক অর্থ রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে ই-ওয়ালেট। যেখানে টাকা জমা রেখে অনলাইনে লেনদেন করা যায়। ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থেকে অনলাইনে লেনদেন করতে হলে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা থাকতে হয়। অথবা ওই এ্যাকাউন্টের বিপরীতে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড থাকতে হয়। ওয়ালেটে তার দরকার হয় না। মোবাইল ফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপে নির্দিষ্ট এ্যাপের মাধ্যমে এক এ্যাকাউন্ট থেকে অন্য এ্যাকাউন্টে গ্রাহক নিজেই অর্থ স্থানান্তর করতে পারেন। আর বিকাশ, রকেটসহ এ জাতীয় মাধ্যম ব্যবহার করে পরিচালিত লেনদেন মোবাইল ব্যাংকিং হিসেবে পরিচিত। প্রস্তাবিত আইনে অবশ্য বলা হয়েছে, ইলেক্ট্রনিক পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনাকারী ও সেবাদানকারীর লাইসেন্স প্রদান ও তদারকির ক্ষমতা বর্তমানের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতেই থাকবে। অবশ্য এরই মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের দায়-দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরিশোধ ব্যবস্থার কার্যক্রম, আউটসোর্সিং, এজেন্ট নিয়োগ এবং ফি ও চার্জ নির্ধারণের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠান কোন্ প্রক্রিয়ায় লেনদেন করবে, তহবিল স্থানান্তরের শর্ত এবং চেক ক্লিয়ারিংসহ সার্বিক বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। এটা তো বাস্তব যে, অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ, দুর্নীতিসহ অপরাধমূলক লেনদেন কমাতে, নগদ লেনদেন কমাতে বদ্ধপরিকর সরকার। বর্তমানে কার্ড ও এ্যাকাউন্টে স্থানান্তরভিত্তিক লেনদেন বাড়ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কেনাকাটায় টাকাও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ ব্যবস্থা চালু করেছে। চাহিদা বিবেচনায় এরই মধ্যে আন্তঃব্যাংক ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু করেছে। ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তঃলেনদেন চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া আরটি জিএস, ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ এবং ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে লেনদেন হচ্ছে। এসব মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যবসা ও বাণিজ্য প্রসার হলেও লেনদেনের নানা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এসব বিবেচনায় নিয়েই আইন করা হচ্ছে। বর্তমানে রেগুলেশন অন ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ২০১৪ এবং বাংলাদেশ পেমেন্ট এ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস রেগুলেশন-২০১৪ এর মাধ্যমে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা হচ্ছে। সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনে বাংলাদেশ ব্যাংককে পেমেন্ট পদ্ধতি পরিচালনা, বিচার, প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদানের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের ক্লিয়ারিং ব্যবস্থা বা পেমেন্ট পদ্ধতির সুষ্ঠু পরিচালনার স্বার্থে এ সংক্রান্ত যে কোন কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সাধারণভাবে সব বা কোন বিশেষ ব্যাংক কোম্পানিকে নির্দেশ প্রদানের বিধান রয়েছে। আলাদা এই আইন করা হলে সার্বিক বিষয় সামনে আসবে বলে ধারণা করা যায়। দ্রুত আইনটি তৈরি ও পাস করে বিশৃঙ্খলা রোধ জরুরী।
×