ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সেই দুই কর্মীকে দেশে তলব

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সেই দুই কর্মীকে দেশে তলব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সৌদি প্রবাসী এক নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে বাংলাদেশ দূতাবাসের দুই কমর্চারীকে বরখাস্তের পর দেশে তলব করা হয়েছে। তারা হলেন-লোকমান ও গোলাম। দূতাবাসের অন্য দুই কর্মচারীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। গত শনিবার রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাথমিকভাবে এ শাস্তি প্রদান করে। এদিকে ভিকটিম রুনা লায়লা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ঢাকায় ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কীটনাশক পানে আত্মহত্যার চেষ্টা ও সহায়তার মামলায় এখনও কাশিমপুর কারাগারে আটক রয়েছে। উল্লেখ্য গত মঙ্গলবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় তলার টয়লেটে ঢুকে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান রুনা লায়লা। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে উদ্ধারের সময় তার কাছে একটি চিরকুটও দেখতে পায়। ওই চিরকুটে লেখা ছিল,‘আমার এ পরিণতির দরুন সৌদি দূতাবাসের লোকমান ও গোলামসহ মোট ৪ জন দায়ী। তাদের বিচার করতে হবে। এ ঘটনা দৈনিক জনকণ্ঠসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশের পর তোলপাড় হয়। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসে এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপরই সৌদি দূতাবাস এ পদক্ষেপ নেয়। এদিকে বিমানবন্দরে কীটনাশক পানের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রুনা লায়লা জানান তার জীবনে ঘটে যাওয়া করুণ কাহিনী। তিনি জানান-অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজ নেন। তবে সেখানে গিয়ে হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পরও মেলেনি খাবার। বেতন চাইতেই শুরু হয় নির্যাতন। দুই মাস পর আরেক বাসায় কাজ নিলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। চার মাস পর তিনি পালিয়ে সৌদিতে নারী কর্মীদের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান। সেখানে ৯ মাস নারী কর্মীদের সেবা করলেও দেশে কোন টাকা পাঠাতে পারেননি তিনি। দেশে থাকা স্বজনদের পরামর্শে যান সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে। তখনই দূতাবাসের কর্মী লোকমান, গোলাম মেহেদী ও ফাহাতের পরিচয় ঘটে। লোকমান আশ্রয়ের নামে অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে লোকমান। এ কাজ সহায়তা করে বাকি ৩ জন। এক পর্যায়ে রুনা বিয়ের চাপ দিলে তাকে বুঝিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেয় লোকমান। দেশে ফিরে মেয়েটিকে বিয়ে করবে বলেও আশ্বস্ত করে। এ অবস্থায় গত ২৮ জুলাই মেয়েটি দেশে ফিরে আসে। কিন্তু ঘটনাক্রমে তার শেষ সম্বল লাগেজটিও শাহজালাল বিমানবন্দরে হারিয়ে যায়। হারানো লাগেজ আনতে গিয়ে গত মঙ্গলবার তিনি চরম হতাশা, ক্ষোভ ও মনের দুঃখে বিমানবন্দরেই কীটনাশক পান করে বসেন। এ সময় কীটনাশকের দুর্গন্ধে নিরাপত্তাকর্মীরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় আত্মহনের চেষ্টার ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে তার বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস এ অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে ইতোমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। এতে প্রাথমকিভাবেই অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় লোকমান ও গোলামকে বরখাস্ত করা হয়।
×