ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার বক্তব্যে পুরো জাতি হতাশ ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শেখ হাসিনার বক্তব্যে পুরো জাতি হতাশ ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে পুরো জাতি হতাশ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে আগামী নির্বাচন হোক, সরকারের সেই ইচ্ছা নেই। সামনে নির্বাচন। অথচ বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। আর এর মাধ্যমে তারা একটা নির্বাচন করতে চায়। এভাবে তো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না উল্লেখ করেন। সোমবার সুপ্রীমকোর্ট কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ ইয়ুথ পার্লামেন্ট ২০১৮ আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরও উল্লেখ করেন, এখন সবচেয়ে বড় সঙ্কট হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, এটা জনগণের দাবি। এই দাবিকে তিনি সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধান তো মানুষের তৈরি করা। দলের সুবিধা মতো সংবিধান তো অসংখ্যবার তারা কাটছাঁট করেছেন। ফখরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন, দেশে গণতন্ত্র আছে, এটি কোন গণতন্ত্র? যেখানে বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন করা হবে, আর সরকারী দল নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাবে। জাতি আশা করেছিল, জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী একটি ইতিবাচক কথা বলবেন। সব দলের সমান সুযোগ সৃষ্টি করে একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু সেটি তিনি করতে পারেননি। এটার সম্পূর্ণ ব্যর্থতা তাদের, এর দায়দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, বিএনপি জনগণের দাবি নিয়ে লড়াই করছে। জনগণ চায় এমন একজন প্রতিনিধি আসবেন, যিনি প্রকৃতপক্ষে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবেন। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। সেই দাবি নিয়ে কথা বলছি, সংগ্রাম করছি ও দাবি জানাচ্ছি। এর জন্য আজ খালেদা জিয়া কারাগারে, তারেক রহমান দেশের বাইরে, হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়ে আছেন। এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য জনগণই ব্যবস্থা নেবে। জনগণই প্রতিবাদ করবে। নির্বাচন বাধা দেয়ার শক্তি কারও নেই প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, এ কথাগুলো বলেই তারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করছে। রাষ্ট্রীয় যন্ত্রগুলো ব্যবহার করে একদলীয় শাসন কায়েম করছে। তাই এসবের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, তাদের দাবিগুলো আদায় করে নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন যে পথে এগোচ্ছেন তা হলো, একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করার পথ। এখানে জনগণের রায় দেয়ার কোন পথ আমরা দেখছি না, আর জনগণের রায় নেয়ার কোন ইচ্ছে তার নেই উল্লেখ করেন। বিএনপির সঙ্গে কোন সংলাপ নয়, প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এর আগে ২০১২-১৩ সালেও সরকার সংলাপের দাবি উপেক্ষা করেছিল, পরে বাধ্য হয়েছে। নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে তাড়াহুড়া না করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে ফখরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি আগেই বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে। এদিকে পল্টন দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সারাদেশ আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বন্দীশালায় পরিণত হয়েছে। এক ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশে বিরাজমান। গুম-খুন, লুটপাট, অর্থ আত্মসাত ও দখলের মহাসমারহে গণতন্ত্রকে বন্দী করা হয়েছে। বন্দী করা হয়েছে গণতন্ত্র স্বীকৃত বিরোধী দলের অধিকার, মানুষের কথা বলার অধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে। দুঃশাসনের বিষাক্ত বলয়ে বন্দী দেশবাসী। এমতাবস্থায় আমরা সকলে তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস স্মরণ করছি। আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। দুঃশাসনের অবসানে তার অতিদ্রুত দেশে ফেরার জন্য দেশবাসীসহ সকলে প্রতীক্ষা করছি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান তারেক রহমানের ১১তম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, এমতাবস্থায় আমরা সকলে জননেতা তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবসকে স্মরণ করছি যেখানে সারাদেশ বন্দীশালায় পরিণত হয়েছে। আমি মনে করি তারেক কারামুক্ত নন, আসলে নির্বাসিত। এটা কারাবন্দী হওয়ারই আরেকটি নামান্তর। কারণ মিথ্যা মামলাগুলোতে তাকে দেশে আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে এটা পরিষ্কার। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক চক্রান্তে প্রতিহিংসামূলকভাবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে। এক এগারোর সরকার যে মামলার অভিযোগপত্রে তার নাম দিতে পারেনি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সম্পূরক চার্জশীট দিয়ে তারেক রহমানের নাম দেয়া হয়েছে। এটা সরকারের প্রতিহিংসার চরিতার্থের নামান্তর। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় পরপর তিনটি তদন্তে তারেক রহমানের নাম ছিল না। পরে এক ব্যক্তিকে দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি নেয়ার পর ‘কোন প্রমাণ না রাখার জন্য’ তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। কিন্তু ফাঁসির আগেই ওই ব্যক্তি তা অস্বীকার করে প্রত্যাহার করে নিলেও আদালত তা গ্রহণ করেনি। খালেদা জিয়ার সাজার প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, দেশে বিপুল জনপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে মিথ্যা একটি মামলায় বেআইনীভাবে কারাবন্দী। হাইকোর্ট তাকে জামিন দিলেও তাকে মুক্ত করা হচ্ছে না। প্রতিহিংসামূলক এই সরকার দেশনেত্রীকে হয়রানি করার জন্য পরিকল্পিত আইনী প্রক্রিয়ার নামে তাকে সাজা দেয়া হয়েছে। এক ব্যক্তির অদম্য ক্রোধ ও হিংসার চরম বহির্প্রকাশ ঘটেছে জাতীয়তাবাদী ঐক্যের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও জনাব তারেক রহমানের ওপর। তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করেন বিএনপি মহাসচিব। সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×