ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আরও পরে ॥ সিইসি

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আরও পরে ॥ সিইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কিনা সে বিষয়ে আরও পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, ইভিএম ব্যবহার করা হবে কিনা তা নির্ভর করছে এই বিষয়ে আইন প্রণয়ন, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও সব মহলের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার ওপর। সরকার যদি আইন করে, ব্যবহার করার মতো যদি পরিবেশ থাকে তাহলে কিছু আসনে এটি ব্যবহার করা হবে, উল্লেখ করেন। সোমবার নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ইভিএম নিয়ে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গত ৩০ আগস্ট ইসির বৈঠকে ইভিএম ব্যবহারের জন্য আরপিও সংশোধন অনুমোদন করা হয়। এটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন শেষে সংসদে তোলা হবে। সংসদে পাস হলেই ইভিএম ব্যবহারের আইনী ভিত্তি পাবে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবারই এটি আইন মন্ত্রণালয়ের পাঠানোর কথা ছিল। অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের বিষয়টি রাজনৈতিক। এ বিষয়ে ইসি এখনও কেবল প্রস্তুতির পর্যায়ে রয়েছে। সেটাকে মাথায় রাখতে হবে। প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আইনী ভিত্তি পেলে রাজনৈতিক মহলসহ অংশীজনের সমর্থন নিয়ে ইভিএম ব্যবহার শুরু করা হবে। সেক্ষেত্রে ৩শ’ সংসদীয় আসনের মধ্যে দৈব চয়ন ভিত্তিতে কিছু আসন বা কেন্দ্র বাছাই করে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে। বলেন, ইভিএম ব্যবহার নিয়ে ভোটার ও রাজনৈতিক মহলে উৎকণ্ঠা থাকাই স্বাভাবিক। যে কোন নতুন উদ্যোগ বা আবিষ্কার বা নতুন প্রযুক্তি নিয়ে উৎকণ্ঠা থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। আমরা এটির ব্যবহার, উপকারিতা সম্পর্কে এখনও তাদের জানাতে পারিনি। পর্যায়ক্রমে তারা সব জানতে পারবেন। ইভিএম ব্যবহারের সুবিধা তুলে ধরে বলেন, বর্তমান নিয়মে নির্বাচন করতে হলে সুঁই, সুতা, মোমবাতি থেকে শুরু করে হাজার রকমের জিনিসপত্র লাগে। প্রযুক্তির ব্যবহার করা হলে এ সবের দরকার হবে না। ক্রমান্বয়ে নির্বাচনী ব্যয়ও কমে আসবে। এই কারণে নির্বাচন কমিশন মনে করেছে, ইভিএম গ্রহণযোগ্য হবে। আর ইভিএমের মাধ্যমে নির্ভুলভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আরও পরের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, এ বিষয়ে আমরা এখনও অনেক পেছনের পর্যায়ে রয়েছি। আইন কেবল সরকারের কাছে যাচ্ছে। কত ধাপ রয়েছে : অর্থ মন্ত্রণালয়ে যাবে আর্থিক সংস্থানের জন্য, কেবিনেটে যাবে, সংসদে যাবে। সরকার যদি মনে করে, সংসদ যদি মনে করে তাহলেই আইন সংশোধন হবে এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে। কোন ত্রুটি থাকলে তা ব্যবহার করা হবে না। ইভিএম ব্যবহারে আরপিও সংশোধন-অনুমোদনের পর রাজনৈতিক এবং সুশীল সমাজের পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা হচ্ছে প্রচুর। বিএনপি সরাসরি ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিয়েছে। তারা মনে করছে এর মাধ্যমে ডিজিটাল কারচুপির আশঙ্কা রয়েছে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ বলেছেন, ভোটিং মেশিন পদ্ধতি চালুর আগে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার ভাল। তার আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ভোটারদের ইভিএমের ব্যবহার শেখানো এবং জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন করাও জরুরী। এসব করতে অনেক সময় প্রয়োজন হবে। তারা বলেন, এটি ব্যবহারের অর্থ সাশ্রয়, স্বল্প সময়ের মধ্যে ভোট গ্রহণ এবং ফল পাওয়ার মতো ইতিবাচক দিক রয়েছে। ভারত-ব্রাজিলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইভিএমে ভোট নেয়ার নজির রয়েছে। সিইসি নুরুল হুদা তার বক্তব্যে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে বলেন, আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের যাতে স্বচ্ছতা নিয়ে কোন প্রশ্ন না ওঠে, ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বিষয় যাতে সেখানে না আসে; এ কারণে সেজন্য কিছু আসনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। আমাদের ইচ্ছের ওপর নয়, ৩০০ আসনের মধ্যে র‌্যানডমলি ব্যবহার করব। আমরা যদি মনে করি ২৫টা আসনে ইভিএমে ভোট করব, সেই ২৫টা আমাদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করব না। তিনি বলেন, ২০১০ সালে বাংলাদেশে ইভিএমের শুরুর পর্যায় থেকে এখন প্রযুক্তিগত দিক থেকে এ যন্ত্রের অনেক উন্নতি হয়েছে। আগামীতে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৩৩২টি পৌরসভা এবং ৪৯১টি উপজেলায় পর্যায়ক্রমে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের আইনগত কাঠামো আমাদের রয়েছে। এজন্যে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। জাতীয় সংসদে করার যদি আইন পাস হয়, তখন আমাদের প্রশিক্ষিত লোক যারা রয়েছেন তাদের সক্ষমতা যদি অর্জন হয়, ইভিএম যদি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়, কেবল তখনই যতখানি ব্যবহার সম্ভব ততখানি করা হবে। তিনি দাবি করেন, ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন আয়োজনে আর্থিক সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারবে না। ফলে এ পদ্ধতি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতাও পাবে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে আলোচনা চলছে, তা ইতিবাচক। এটা করতে গিয়ে অনেক প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। তারা অনেক কিছু জানতে চেয়েছেন। সেগুলো প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে ইটিআইয়ের মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুকের সভাপতিত্বে কর্মশালায় ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
×