ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঘাতক ট্রাক্টরের চাকায় ছিন্নভিন্ন একটি পরিবারের স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৬:১১, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ঘাতক ট্রাক্টরের চাকায় ছিন্নভিন্ন একটি পরিবারের স্বপ্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ট্রাক্টরের চাকায় দিনমজুর সাহেদুল মিয়ার সংসার যেন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। সারাদিনের দিনমজুরির টাকা দিয়ে চলছিল ৫ সদস্যের সংসার। টানাপোড়েন লেগেই থাকত সংসারে। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো তাদের। এর মাঝেও ছেলেদের লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করার স্বপ্ন দেখত সে। স্ত্রী রাশেদার কষ্টের মাঝেও যেন কোন আক্ষেপ নেই। বড় ছেলে রায়হান চরবজরা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণী আর ছোট ছেলে রাকিব খামারবজরা মধ্যপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ম শ্রেণীতে লেখাপড়া করে। সবার ছোট রিফাত (৩) এখনও স্কুলে যাওয়া শুরু করেনি। সোমবার বাবার লাশ যখন দাফন করার প্রস্তুতি চলছিল তখন বাড়িতে মাতম চলছিল। রিফাত শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে আছে বাবার প্রিয় মুখের দিকে। স্ত্রী রাশেদা বাকরুদ্ধ। কি হবে আগামী দিনগুলোতে। সব কিছুই যেন আজ শেষ হয়ে গেল। এভাবেই শেষ হল একটা দিনমজুর পরিবারের আগামীদিনের সব স্বপ্ন। ওরা তিন ভাই কি পারবে লেখাপড়া শিখে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে? সেটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতেই বলে দেবে। রবিবার রাত ৮ টা। কে জানত দানব ট্রাক্টর মুহূর্তে কেড়ে নেবে তাজা প্রাণ। শ্যালক নয়া মিয়া নতুন অটোরিক্সা কিনবেন। সাহেদুল মিয়া সঙ্গী হল তার। কুড়িগ্রাম শহরে রিক্সা কিনে তাকে সিটে বসিয়ে দিয়ে রওনা দেন উলিপুর অভিমুখে। যখন কুড়িগ্রাম-উলিপুর সড়কের হ্যালিপ্যাড নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন পাশ দিয়ে যাচ্ছিল একটি নাইট কোচ। হঠাৎ করে নাইট কোচের পিছনে থাকা দানবরূপী ট্রাক্টরটি ওভারটেক করতে গিয়ে ধাক্কা দেয় তাদের রিক্সায়। ছিটকে পড়ে সাহেদুল মিয়া। আর মুহূর্তে চাকায় পিষ্ট হয় সে। ঘটনার কথা বর্ণনা করে ডুকরে কেঁদে উঠে নয়া মিয়া। সব শেষ। এভাবেই শেষ হয়ে গেল সাহেদুলের জীবন প্রদীপ। সঙ্গে সঙ্গে পরিবারটাও নিঃস্ব হয়ে গেল। কিভাবে চলবে সাহেদুলের সংসার। এসব অনুমোদনহীন যানবাহন প্রতিনিয়তই কেড়ে নিচ্ছে তাজা প্রাণ। কিন্তু রাস্তা চলাচলের অনুমতি না থাকলেও কিভাবে চলে এসব নছিমন, করিমন,ভটভটি, ট্রলি আর ট্রাক্টর। সাহেদুল মিয়া উপজেলার বজরা ইউনিয়নের খামারবজরা গ্রামের ফুল মিয়ার পুত্র। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ৩ শতক বসতভিটেতেই সাহেদুল ৩ ভাই ও বাবা-মাসহ বসবাস করতেন।
×