ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২১ আগস্ট মামলা- রায়ের দিন সারাদেশে নাশকতার ছক

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

২১ আগস্ট মামলা- রায়ের দিন সারাদেশে নাশকতার ছক

শংকর কুমার দে ॥ একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায়কে সামনে রেখে শুরু হয়েছে ‘লন্ডন ষড়যন্ত্র’। লন্ডন ষড়যন্ত্র করছে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে তারেক রহমান। একুশে আগস্ট মামলার রায়ের দিন দেশব্যাপী নাশকতা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ছক কষা হচ্ছে। আর এর জন্য মদদ দিচ্ছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই কানেকশনে ষড়যন্ত্র মেতে উঠেছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায়কে সামনে রেখে নাশকতার ছক কষছে তারেক রহমান। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে রাজনৈতিক তৎপরতার আড়ালে জঙ্গী তৎপরতা, উগ্র মৌলবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগসহ নানামুখী ষড়যন্ত্রের চাল দিচ্ছেন তিনি। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দী হওয়ার পর থেকেই আইএসআইয়ের শলাপরামর্শ অনুযায়ী তিনি বিএনপির নীতি নির্ধারণীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এ ধরনের ষড়যন্ত্র ও ছক কষার বিষয়টি ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই লন্ডনে বসে তারেক রহমানের নাশকতার ছক কষার বিষয়টি ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভারতের সংবাদ মাধ্যমেও সম্প্রতি লন্ডনে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে বন্দী হওয়ার পর লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হওয়ার পরই তার সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই কানেকশন বেড়ে যায়। আইএসআই কানেকশন বেড়ে যাওয়ার কারণেই লন্ডনে বাংলাদেশের দূতাবাসে সহিংসতা ঘটিয়ে তার নেতৃত্ব জানান দেন তিনি। এমনকি বিএনপির নীতি নির্ধারণীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সাহায্য-সহযোগিতা করে চলেছে আইএসআই। তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হওয়ার পর উপমহাদেশের সক্রিয় মৌলবাদী ও জঙ্গী নেতাদের সঙ্গেও নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই আইএসআইয়ের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশ কার্যত মৌলবাদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল। সেই মৌলবাদ-জঙ্গীবাদের উত্থান শুধু বাংলাদেশকে এখনও জঙ্গীবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হতাহতের মতো ভয়াবহ পরিণতির ঝুঁকি নিয়ে সামনের দিকে এগুচ্ছে। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন নিয়মিত পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন এবং তাদের নির্দেশনাগুলোই দলের নেতাদের জানাচ্ছেন, যা দলীয় নেতারা আঁচ করতে পারছেন না বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়কে সামনে রেখে লন্ডনে বসে তারেক রহমান ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। রায় ঘোষণার পর দেশব্যাপী নাশকতা ছড়িয়ে দেয়ার ছক কষার মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। ছাত্রদের কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নাশকতার উস্কানি দিতে লন্ডন থেকে টেলিফোনে বিএনপির নেতা ও পেশাজীবীদের সঙ্গে কথা বলে উস্কানি দিয়েছে, যার অডিও টেপ হস্তগত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের দেয়া পরামর্শ পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশে নাশকতার ষড়যন্ত্র করছে লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসিত তারেক রহমান। বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের যোগাযোগের ঘটনা ফাঁস হয় একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনার তদন্তে। তবে চিকিৎসার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লন্ডনে আইএসআইয়ের সঙ্গে বৈঠকের খবরটি ছড়িয়ে পড়ে, যা নতুন করে তারেক রহমানের আইএসআইয়ের কানেকশন আলোচনায় আসে। খুব গোপনীয়ভাবে সেন্ট্রালন্ডনে একটি হোটেলে আইএসআইর শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন তারেক রহমান যেখানে উপস্থিত ছিলেন লন্ডনে পালিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দীন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছেন আরেক যুদ্ধাপরাধী আশরাফুজ্জামান এবং লন্ডনের জামায়াতের কয়েকজন নেতা। এসব অভিযোগের তথ্যের তদন্ত পর্যায়েই লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন অফিসে হামলা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুর, একাত্তর টিভির সাংবাদিকের ওপর হামলা ও ক্যামের ছিনতাই, সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়ে মিছিলসহ সন্ত্রাসী কর্মকা-ে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের যেসব নেতা, কর্মী, ক্যাডার সংগঠিত করে সন্ত্রাস চালানোর ঘটনাটিতে আইএসআই কানেকশন বিষয়ে তথ্য পায় গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দী হওয়ার পর লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের ওপর দেশী-বিদেশী গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী লন্ডনের পাকিস্তান এম্বাসিতে কর্মরত জুনায়েদ নামের এক ব্যক্তি যিনি সম্ভবত পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর আন্ডার কাভার একজন অফিসার, তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। জুনায়েদের এর মাধ্যমে পাকিস্তানের আইএসআইর পূর্বাঞ্চল গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা রিয়াজ আশফাক ও দেখা করেছেন। লন্ডনে পাড়ি জমান এবং বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। জুনায়েদ এবং রিয়াজ এর সঙ্গে লন্ডনের সেইন্ট জেমস কোর্ট এরিয়াতে অবস্থিত একটি হোটেলে বৈঠক করেছেন তারেক রহমান। এর আগে থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ নিবিড় রয়েছে আইএসআইর এই দুই গোয়েন্দা কর্মকর্তার। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতির সাজা মাথায় নিয়ে লন্ডনে বসে তারেক রহমানের ষড়যন্ত্রের খবর পাওয়ার পরই সরকারের নীতি নির্ধারক মহল নড়ে চড়ে বসে। লন্ডনে বসবাসকারী বিএনপির নেতা, কর্মী, ক্যাডারদের তারেক রহমানের নেতৃত্বেই সংগঠিত হয়ে বিভিন্ন সময়ে লন্ডনে সন্ত্রাসী কর্মকা- করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করে চলেছে আইএসআইর ইশারায়। এরপরই তাকে ফিরিয়ে এনে কারাগারে বন্দী করার প্রশ্নটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয় সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্য সরকারের কাছেও লন্ডনে বসে তারেক রহমান দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থেকে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানোর বিষয়গুলোর তথ্য প্রমাণ তুলে ধরা হয়। এখন আবার একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায়কে সামনে রেখে নাশকতার ছক কষছেন লন্ডনে স্বেচ্চা নির্বাসনে তারেক রহমান। গোয়েন্দা অভিযোগের এমন তথ্যের ভিত্তিতেই সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে সাজা কার্যকর করার বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×