বিভাষ বাড়ৈ ॥ আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠা বিএমআই রিসার্চের পর এবার ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিক ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে উঠে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য নানা দিক। আন্তর্জাতিক এ গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইনসাইড এ্যান্ড সার্ভের জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন দেশ সঠিক পথেই আছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর সন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারে আস্থাশীল অধিকাংশ মানুষ। তারা সন্তুষ্ট দেশের গণতন্ত্র, নিরাপত্তা, বিদ্যুত, যোগাযোগ ব্যবস্থায়।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে বলে সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপের পর এ প্রতিবেদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইনসাইড এ্যান্ড সার্ভে। প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের অর্থনীতি আশানুরূপভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের ৬২ ভাগ নাগরিক মনে করেন অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৬৯ ভাগ নাগরিক। জরিপের ফলের চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, ৬২ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন দেশ সঠিক পথেই আছে। ৬৯ শতাংশ মানুষ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর সন্তুষ্ট। ৬৮ শতাংশ মানুষ দেশের বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর সন্তুষ্ট। ৫৭ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন আগামী দিনগুলোতে দেশ আরও নিরাপদ হবে। ৪৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
এছাড়া অধিকাংশ মানুষ আস্থার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের ওপর। ৬৬ শতাংশ মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থাশীল, ৬৪ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর আস্থাশীল, ৪৯ মানুষ তাদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী। ৫১ শতাংশ মানুষ দেশের গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্ট। বর্তমান সংসদের ওপর আস্থাশীল ৫১ শতাংশ মানুষ। ৪৯ শতাংশ মানুষ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থাশীল। ৬৭ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সন্তুষ্ট। ৬৪ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থায় সন্তুষ্ট। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সন্তুষ্ট ৬১ শতাংশ মানুষ। আর ৮১ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন তারা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ৬৬ ভাগ নাগরিকের কাছে জনপ্রিয় শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের প্রতি ৬৪ ভাগ নাগরিকের সমর্থন রয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। আর সে কারণেই ৬৮ ভাগ নাগরিক জননিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট। এর মধ্যে ৫৭ ভাগ মনে করছেন, সামনে জননিরাপত্তা ব্যবস্থার আরও উন্নতি হবে। সরকারী বিভিন্ন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও জনসন্তুষ্টির পরিমাণ বেড়েছে।
দেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক আবহ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা। পার্লামেন্টের কার্যক্রমের ওপর তাদের আস্থা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। নাগরিকদের কাছে ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ৮১ ভাগ জানান, আগামী নির্বাচনে তারা ভোট প্রদান করবেন।
জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল ও মে মাসে এ জরিপ চালানো হয়। সেখানে দেশের মোট জনসংখ্যাকে কিছু স্তরে ভাগ করে কয়েকটি পর্বে বাছাই করা হয় (মাল্টি স্টেজ স্ট্রেটিফাইড প্রব্যাবিলিটি স্যাম্পল) এবং তাদের সঙ্গে সরাসরি অথবা বাসায় (ইন পারসন/ইন হোম) ফোন করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণার জন্য স্তরগুলো দেশের বিভাগ ও জেলা এবং গ্রাম ও শহর হিসেবে ভাগ করে নেয়া হয়। এই গবেষণার জন্য ৫ হাজার মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়; যাদের বয়স ১৮ বা তার বেশি এবং আগামী নির্বাচনে ভোট দেয়ার অধিকার রাখেন।
আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলকি ইনস্টিটিউট (আইআরআই)-এর গবেষণা প্রতিবেদনেও কাছাকাছি ফল পাওয়া গিয়েছিল। তাদের প্রকাশিত গবেষণা সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ৬৪ ভাগ নাগরিক মনে করে দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিল, এ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এবং ইউনিভার্সিটি অব লিবারাল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) যৌথ আয়োজনে হওয়া পরিসংখ্যানেও তেমনটাই বলা হয়। ওসব প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৭৫ ভাগ তরুণের মতে বাংলাদেশ আগামী ১৫ বছরে আরও উন্নতরাষ্ট্রে পরিণত হবে এবং তাদের মধ্যে ৬০ ভাগ তরুণ মনে করেন দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
এই গবেষণা প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে প্রায় ৭৩ ভাগ নাগরিক দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনার পক্ষে ‘ভাল মত’ প্রকাশ করেন। এই প্রতিবেদনেই ২৬ দশমিক ৬ ভাগ নাগরিক দেশ পরিচালনায় খালেদা জিয়ার পক্ষে ‘ভাল মত’ প্রকাশ করেন। ২০১৫ সালে আইআরআই প্রকাশিত অপর এক জরিপ অনুসারে, ৬৭ ভাগ নাগরিক দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখেন।
আইআরআইয়ের জরিপ রিপোর্ট শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কারণেই দল জনপ্রিয় বলে মত দেয়া হয়। এছাড়া বলা হয়, ক্ষমতায় থাকাকালে স্বৈরশাসন এবং ধর্মীয় চরমপন্থার জন্য আসন্ন সংসদ নির্বাচনে পিছিয়ে থাকবে বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থানে তারেক রহমান।
অন্যদিকে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিজনেস মনিটর ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চের (বিএমআই) প্রতিবেদনেও উঠে আসে বাংলাদেশের রাজনীতির নানা দিক। আইআরআইয়ের মতো বিএমআইয়ের প্রতিবেদনেও বলা হয়, জনসমর্থনে বিএনপির তুলনায় এগিয়ে আওয়ামী লীগ। বলা হয়, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনসমর্থনে এগিয়ে থাকবে। ‘দুর্বল নেতৃত্বের’ বিএনপি আওয়ামী লীগের সামনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারবে না।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া গত ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় কারাগারে যাওয়ার পর দলটির শক্তি অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা কয়েক মাস ধরে অনশন, মানববন্ধনের মতো যেসব রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করে আসছেন, তাতে চলতি বছরের শেষদিকে অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ওপর তেমন কোন প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না।
বিএনপিকে বর্তমান প্রেক্ষাপটের কারণে ‘দুর্বল নেতৃত্বের বিএনপি’ হিসেবে মন্তব্য করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলটির শক্তি অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে, পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে এবং দেশে বহু নেতা গ্রেফতার থাকায় বিএনপির নেতৃত্বে শক্তিশালী নেতার সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
তবে আগামী সংসদ নির্বাচনে গত নির্বাচনের আগে-পড়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কাও করছে বিএমআই। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোট করার দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। তাই আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আগের মতো সহিংসতার আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না।
অন্যদিকে তাদের নির্দলীয় সরকারের দাবি বরাবরই নাকচ করে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ফলে ২০১৪ সালের মতো এবারও বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে-পরে তাদের সহিংস আন্দোলনের আশঙ্কাও আমরা নাকচ করতে পারছি না। বলা হয়, রাজনৈতিক বাস্তবতার পাশাপাশি ভোটের বছরের বাজেটে গ্রামের কৃষিজীবী মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে, তার ফলও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে পাবে।
বিএমআই রিসার্চ তার এক প্রতিবেদনে ভবিষ্যতের যে ১০টি উদীয়মান বাজার চিহ্নিত করেছিল তার মধ্যে প্রথম ছিল বাংলাদেশ। সংস্থাটির মতে, আগামী ১০ বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তি হবে এই ১০ উদীয়মান বাজার। প্রবৃদ্ধি অর্জন ছাড়াও গার্মেন্টস এবং কৃষিভিত্তিক পণ্য রফতানি করে এ দেশ আগামী বছরগুলোতেও জোরালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে সংস্থাটির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। দ্বিতীয় দেশ মিসর, তৃতীয় ইথিওপিয়া, চতুর্থ ইন্দোনেশিয়া, পঞ্চম কেনিয়া, ষষ্ঠ মিয়ানমার, সপ্তম নাইজিরিয়া, অষ্টম পাকিস্তান, নবম ফিলিপিন্স, দশম উদীয়মান বাজারের সর্বশেষ দেশ ভিয়েতনাম।
আরআরআই জরিপ মতে, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব পছন্দ ৬৬ শতাংশের ;###;ক্ষমতায় থাকাকালে স্বৈরশাসন ও ধর্মীয় চরমপন্থার কারণে নির্বাচনে পিছিয়ে থাকবে বিএনপি-জামায়াত;###;বিএনপির দুর্বল নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারবে না
আস্থাশীল ৬৫ শতাংশ ॥ আওয়ামী লীগ সরকার প্রশ্নে জনমত জরিপ
শীর্ষ সংবাদ: