ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের ডিজিটাল জয়যাত্রা

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশের ডিজিটাল জয়যাত্রা

(গতকালের পর) ফলে দুষ্ট কোষের পাশাপাশি সুস্থ কোষও মারা যায়। কিন্তু ন্যানো-প্রযুক্তির ফলে এমন সব ন্যানো-কৌশল আবিষ্কৃত হয়েছে যা দিয়ে শুধু আক্রান্ত টিসু্যুতেই ওষুধ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। এভাবে ইলেকট্রনিক্স ও বায়োটেকনোলজির যুগপৎ সম্মিলনে চিকিৎসাক্ষেত্রে দারুণ ফলাফল হাতে পাচ্ছে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাক্ষেত্রে ন্যানোর প্রয়োগ বায়োটেকনোলজির বিষয়। এই খাতে আছে ন্যানোর অভিনব সব সম্ভাবনা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। ন্যানো-প্রযুক্তির এসব যুগান্তকারী অবদান আমাদের জীবনযাত্রাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। . ব্যাংকিং সেবায় ডিজিটাল বিপ্লব আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ব্যাংক ব্যবস্থা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দেড় দশকে দেশের ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। এর ফলে অনেক বেশি সংখ্যক গ্রাহককে ব্যাংকিং সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে, একই সঙ্গে বেড়েছে কর্মদক্ষতা ও মুনাফা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যাংক খাতের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া এক মুহূর্তের জন্য ব্যাংকিং কর্মকা- পরিচালনার কথা ভাবা প্রায় অসম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশের সবচেয়ে উজ্জ্বল প্রকাশ আমাদের ব্যাংকিং খাত। এখানে যাবতীয় লেনদেন হিসাব-নিকাশ, অর্থ স্থানান্তরসহ সব কাজই এখন ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমেই সম্পন্ন হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রথাগত ব্যাংকিং মাধ্যমের লেনদেনকে ছাড়িয়ে গেছে অনলাইনভিত্তিক লেনদেনে। বেশিরভাগ গ্রাহক অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন, এর ফলে ব্যাংক খাতের সামগ্রিক কর্মদক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা, মুনাফা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। অনলাইন ব্যাংকিং পরিষেবা এমন সুবিধে দেয় যাতে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে টাকা এক এ্যাকাউন্ট থেকে অন্য এ্যাকাউন্টে বা এমনকি অন্য কোন ব্যাংকে বা আর্থিক সংস্থায় স্থানান্তর করা, লেনদেনের তথ্য দেখা ও প্রিন্ট নেয়া যায়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার সরকার ২০১১ সালে মোবাইল ব্যাংকিং নীতিমালা বাস্তবায়ন করেছিল। সারাদেশের বিস্তৃত মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পল্লী এলাকায় ব্যাংকিং সেবাবঞ্চিতদের, ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে সুরক্ষিত অনলাইন ব্যাংকিং পরিষেবা, এ্যাকাউন্টের তথ্য, বিল পরিশোধ, অর্থ স্থানান্তর, নিকটবর্তী এটিএম থেকে নগদ অর্থ উত্তোলন সম্ভব হচ্ছে। যেসব দুর্গম অঞ্চলে যাতায়াত সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল, সেসব অঞ্চলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বহুল ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় প্রদত্ত ভাতা ও প্রণোদনা, উপবৃত্তি, বিল পরিশোধ, কৃষি ভর্তুকি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রেরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে দৈনিক ৬৯০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়। সারাদেশে মোট ৬ লাখ ৭১ হাজার এজেন্ট এ সেবা দিচ্ছে। ব্যাংক খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে দারুণ এক বিপ্লব ঘটে গেছে। আগের চেয়ে অনেক সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্য হয়েছে ব্যাংকিং কর্মকান্ড। দ্রুত ও অপেক্ষাকৃত কম সময়ে ব্যাংকিং লেনদেন সম্ভব হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে কিংবা বিদেশ থেকে দেশে পাঠানো রেমিট্যান্স অবিশ্বাস্য কম সময়ের মধ্যে প্রাপকের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমাদের ব্যাংক খাত সমৃদ্ধ হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের অগ্রভাগের সৈনিক দেশের তরুণ প্রজন্ম। ইন্টারনেটে বিশ্বের মুক্তবাজার থেকে কাজ খুঁজে নেন ফ্রিল্যান্সাররা, কিন্তু তাদের আয় দেশে আনা ও হাতে পাওয়া ছিল দুরূহ। অবশেষে ১৯ অক্টোবর ২০১৭ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উদ্বোধনের মাধ্যমে চালু করা হয়েছিল ইন্টারনেটভিত্তিক পেমেন্ট সিস্টেম পেপ্যাল-জুম এর কার্যক্রম। ফলে ফ্রিল্যান্সিং বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের পেমেন্ট পেতে আর ভোগান্তি পেতে হবে না। পাশাপাশি প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থও স্বল্পসময়ে পৌঁছে যাবে স্বজনদের কাছে। পেপ্যাল-জুম সেবা চালু হওয়ায় এখন থেকে আর কোন মধ্যস্বত্বভোগী বা হুন্ডি ব্যবসায়ী সুবিধা নিতে পারবে না। ডিজিটাল মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং বা ই-কমার্সের ধারণাটি দেশে নতুন হলেও ইতোমধ্যেই বদলে গিয়েছে কেনাবেচার প্রথাগত ধারণা। দেশে ইন্টারনেটের বহুল ব্যবহার এবং ব্যস্ততার কারণে নিজেদের প্রয়োজনীয় শপিংয়ের জন্য অনলাইন মার্কেট প্লেস হয়ে উঠেছে প্রধান মাধ্যম। ই-কমার্স বর্তমান সময়ের সব থেকে পরিচিত একটি নাম। ডিজিটাল বিপ্লবের প্রভাবে ব্যবসাবাণিজ্যের সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে জনপ্রিয় হচ্ছে ই-কমার্স। উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন আর স্বাবলম্বী হওয়ার সহজ একটি মাধ্যম এই ই-কমার্স। ই-কমার্স এমন একটি মাধ্যম যেখানে কোন ইলেকট্রনিক সিস্টেম বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা ক্রয় বা বিক্রয় হয়ে থাকে। ই-কমার্স পরিচালনার জন্য প্রয়োজন একটি ওয়েবসাইট, যা ব্যবহার করে ভোক্তারা পণ্য ও সেবা ক্রয় করবে। ই-কমার্স মূলত নির্ভর করে প্লাটফর্ম এবং ই-কমার্স ওয়েবসাইট কতটুকু সুসজ্জিত তার ওপর। ই-কমার্স ওয়েব সাইটকে এমনভাবে সুসজ্জিত করতে হবে যেন একজন ক্রেতা ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করলে কাক্সিক্ষত পণ্য- সেবাটি সহজে খুঁজে পায়। পণ্য-সেবাগুলোর সঠিক বিজ্ঞাপন ব্যবসাকে সফল করবে এবং মুনাফা বাড়াবে। মার্কেটিংয়ের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সংবাদপত্র, টিভিসহ অন্যান্য মাধ্যমে ই-কমার্স পণ্য-সেবা এবং ব্যবসা সম্পর্কে অবহিত করা সম্ভব। ই-কমার্স পণ্য-সেবা ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসা-থেকে-ব্যবসা (B2B), ব্যবসা-থেকে-ভোক্তা (B2C), ব্যবসা-থেকে-সরকার (B2G), গ্রাহক-থেকে-গ্রাহক (C2C), মোবাইল কমার্স (m-commerce), গ্রাহক থেকে সরকার (C2G) পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়ে থাকে। বর্তমানে ই-কমার্স সাইটগুলোতে চাল, ডাল ইলেক্ট্রনিক পণ্য, হাতের তৈরি গহনা, হাতের কাজ, প্রসাধনী, দেশের বিভিন্ন স্থানের বিখ্যাত খাবার, পোশাক থেকে জমি-ফ্ল্যাট কেনাবেচা পর্যন্ত সবকিছুই ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে। ই-কমার্স ওয়েবসাইট প্রতিনিয়ত ভোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের ফোন এবং জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হতে হয়। পণ্য বিক্রয় পরবর্তী পেমেন্ট নিশ্চিত করতে ক্রেতাকে সঠিক তথ্য সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে মোবাইল, টেলিফোন, ই-মেইল অথবা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এ সেবা নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে ক্যাশ অন ডেলিভারি, মোবাইল ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে রকমারি.কম, ক্লিকবিডি, বিক্রয়.কম, এখনি.কম, হটঅফারবিডি.কম, প্রিয়শপ.কম, উপহারবিডি, ই-বে, আমাজন, ইজিটিকেট, আইটিবাজার২৪ আরও অসংখ্য ই-কমার্স সাইট গড়ে উঠেছে। যা ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে। কৃষিতে ডিজিটাল বিপ্লব বর্তমান বিশ্ব তথ্য-প্রযুক্তির বিশ্ব। জীবন উন্নয়ন ও টেকসই বাংলাদেশ গড়তে তথ্য প্রযুক্তির সেবা আবশ্যক। বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। সে কারণে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা উন্নয়নে তথ্য-প্রযুক্তিভিত্তিক ই-কৃষি এনে দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। কৃষকের চাহিদামাফিক, সঠিক সময়োপযোগী ও আধুনিক তথ্য, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ, প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, মোবাইল-এর মাধ্যমে সরবরাহ করার ফলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং কৃষকের ভাগ্যোন্নোয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের কৃষকদের মধ্যে কৃষিভিত্তিক সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, সেবা এবং তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ২০১২ সনের জুন মাসে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালনায় দেশের প্রথম সরকারী কল সেন্টার হিসেবে ‘কৃষি কল সেন্টার’ এর পরীক্ষামূলক যাত্রা সূচিত হয়। আন্তর্জাতিক এনজিও প্র্যাকটিক্যাল এ্যাকশন, বাংলাদেশের সহায়তায় সেন্টারটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পাঁচ ডিজিটের একটি শর্ট কোড ১৬১২৩ এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সেন্টারটির কার্যক্রম চলছে। যে কোন অপারেটরের মোবাইল ফোন থেকে প্রতি মিনিটে ২৫ পয়সায় কল করে কৃষকরা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ে যে কোন সমস্যার তাৎক্ষণিক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ পাচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে কৃষি কল সেন্টারের এ সেবাটি দেয়া হচ্ছে; যা ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হবে। আন্তর্জাতিক বাজারনীতি, পরিবর্তিত জলবায়ু অর্থনীতি, বিপণন অবকাঠামো, জীব- বৈচিত্র্যের পরিবর্তন কৃষিকে হুমকির মুখে ফেললে ও কৃষকবান্ধব ই-কৃষি কনটেন্ট তৈরি ও ব্যবহার, কৃষি তথ্য যোগাযোগ কেন্দ্র (AICC), কৃষি আলাপনি (SMS/MMS), ওয়েব টিভি, প্রমোশনাল টিভি, ওয়েব বেতার, কমিউনিটি বেতার, ভিডিও কনফারেন্সিং, ইন্টার এ্যাকটিভ ভয়েস রেসপন্স (IVR), দেশের সর্ববৃহৎ কৃষি তথ্যভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল ও সার্ভার www.ais.gov.bd ওয়েবসাইট, টেরিস্ট্রিয়াল ও স্যাটেলাইট চ্যানেলে কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠানের সম্প্রচার ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবা তা কাঠিয়ে উঠতে সাহায্য করছে। চলবে... লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক [email protected]
×