ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর বাইরে খেলাধুলা

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 রাজধানীর বাইরে খেলাধুলা

বর্তমান সরকারের অন্যতম একটি সেরা সাফল্য এই যে, তারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলাধুলাকে শুধু রাজধানীতেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে না, বরং তা ছড়িয়ে দিতে চাইছে বিভাগীয় শহরসহ প্রত্যন্ত জেলাগুলোতে। বোধ করি এর সর্বশেষ উদাহরণ সাফ টুর্নামেন্টের প্রাক্কালে রংপুর ও নীলফামারীতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা। সেখানে জাতীয় দলের সিনিয়র খেলোয়াড়রা আশানুরূপ সাফল্য না পেলেও খেলাগুলো নিঃসন্দেহে বিপুলসংখ্যক দর্শকের উপস্থিতিতে সমৃদ্ধ হয়েছে। এ থেকে ধারণা করা চলে যে, বর্তমানে মোবাইল ও ইন্টারনেটসমৃদ্ধ তথ্যপ্রযুক্তির যুগেও সাধারণ মানুষের মধ্যে মাঠে গিয়ে খেলাধুলা দেখা ও উপভোগের আকাক্সক্ষা প্রবল। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, সেপ্টম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) আয়োজিত অনুর্ধ ১৯ এশিয়া কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। প্রথমত এর জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলাকে। টুর্নামেন্ট চলাকালীন বৃষ্টির পূর্বাভাসের কথা বিবেচনায় রেখে কক্সবাজারের পরিবর্তে কয়েকটি খেলা ঢাকার কাছে বিকেএসপিতে স্থানান্তরের চিন্তাভাবনা চলছে। অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় বঙ্গবন্ধু গোলকাপ টুর্নামেন্টও অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার বাইরে সিলেট ও নীলফামারীতে। এর আগে সরকার সিলেট ও খুলনায় একাধিক আন্তর্জাতিক ও আন্তঃদেশীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টসহ খেলাধুলার আয়োজন করেছে। এসবই খেলাধুলার প্রতি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও আনুকূল্য প্রদর্শনের ইতিবাচক দিক। তবে এটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। ক্রিকেট, ফুটবল, হকিসহ পর্যায়ক্রমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের খেলাধুলা এবং টুর্নামেন্ট আরও আয়োজন করতে হবে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বর্তমানে সঙ্কুুচিত হয়ে পড়ছে শিশু ও তরুণ প্রজন্মের শারীরিক বৃদ্ধি এবং মনোজগত, বিশেষ করে রাজধানী ও বড় বড় শহর-নগরে। খেলাধুলা, বিশেষত বাইরের খেলাধুলার সঙ্গে পরিচয় ও চর্চা না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে তাদের শারীরিক বৃদ্ধি এবং উচ্চতা। দখলদারদের দৌরাত্ম্যে রাজধানীর ফুসফুস বলে খ্যাত পার্কগুলো এবং ধমনী ও শিরা হিসেবে বিবেচিত খালগুলোর অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। আগে ছোট-বড় সব স্কুলে অন্তত একটি করে খেলার মাঠ ছিল। সেসব স্থানে এখন গড়ে উঠেছে বড় বড় বিল্ডিং। শিক্ষাঙ্গন সম্প্রসারিত হলেও সঙ্কুচিত হয়েছে খেলাধুলা ও বিনোদনের জগত। বর্তমানে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ বলে কিছু আর অবশিষ্ট নেই। পড়ালেখা ও নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষার বাইরে যেটুকু সময় পায় শিশুরা তাদের সেটুকু সময়ও কাটে টেলিভিশন দেখে অথবা কম্পিউটার কিংবা সেলফোনে গেম খেলে। কিন্তু সেখানেও কি শিশুরা প্রকৃতপক্ষে বিনোদন কিংবা শিক্ষামূলক কিছু আদৌ পাচ্ছে? এ বিষয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে বৈকি। বাস্তবে খেলাধুলা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রভূত সহযোগিতা করে থাকে। দুঃখ, বিষণœœতা থেকে দূরে থাকতেও সাহায্য করে বৈকি। অবশ্য শহর-নগরের পাশাপাশি গ্রামের অবস্থাও যে ভাল এমন বলা যাবে না। বড় বড় দালান-কোঠা এবং ছোট-বড় শিল্প-কারখানা প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে সেখানে। ফলে গোচারণ ভূমি এবং খেলার মাঠ বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও। তাই বলে এখনও যে কিছু অবশিষ্ট নেই তা নয়। উপজেলা সদর এবং বড়সড় গ্রামগুলোতে তো আছেই। আছে সরকারী খাস জমিও। সেসব সংরক্ষণ করে নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করা গেলে গ্রামের মানুষের একটি বিশুদ্ধ বিনোদনের ব্যবস্থা হতে পারে। ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, হকি, এমনকি হ্যান্ডবল খেলার জন্য তেমন ব্যয়বহুল উপকরণের প্রয়োজন পড়ে না। তদুপরি গোল্লাছুট, হা-ডু-ডু, ডাংগুলি, কানামাছি ইত্যাদি চিরায়ত খেলাধুলা তো আছেই। উদ্যোক্তার অভাবও হবে না। কেননা অনেক গ্রামেই ছোট-বড় শিল্পপতি এবং প্রবাসীর আয় আছে। গণমানুষকে নিয়মিত বিভিন্ন খেলাধুলায় সম্পৃক্ত করা গেলে নির্মল আনন্দ-বিনোদনের পাশাপাশি সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-মাদক ইত্যাদির ছোবল থেকে সুরক্ষা সম্ভব হবে তরুণদের। এতে করে নতুন নতুন প্রতিভাও উঠে আসবে সুনিশ্চিত।
×