ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতিকর শব্দদূষণ

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ক্ষতিকর শব্দদূষণ

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে একইভাবে শব্দদূষণ অব্যাহত থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ কানে কম শুনবে। বয়স্ক এবং অসুস্থরা এই শব্দদূষণের বড় শিকার। এছাড়া শব্দদূষণের ফলে সড়কে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। কারণ শব্দদূষণে মেজাজ খিটখিটে হয়, মনোযোগ নষ্ট হয়। শব্দের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৬০ ডেসিবেল। সেখানে ঢাকা শহরের বেশিরভাগ এলাকায় এখন শব্দের সার্বক্ষণিক গড় মাত্রা ১০০ ডেসিবেল। শব্দদূষণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এটা অনেকেই জানেন না। তবে এটাও মানতে হবে এখন জনস্বার্থে সরকারী প্রচারণার কল্যাণে রাজধানীবাসীসহ বহুসংখ্যক মানুষ শব্দদূষণের ক্ষতিকর বিষয়ে সচেতন হচ্ছেন। দুঃখজনক হলো সচেতন হলেও সতর্ক নন, আবার অনেকেই শব্দদূষণের জন্য দায়ীও বটে। শব্দদূষণ সৃষ্টি করা হলে যিনি এটা করেন তিনিও একই ক্ষতির শিকার হবেন। বলাবাহুল্য, উচ্চ শব্দে বা জোরে আলাপচারিতা চালানোর প্রবণতা রয়েছে বহু মানুষের ভেতর। এটা যে শ্রুতি ও মস্তিষ্কের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে এমন কথা উচ্চারিত হলে হয়ত তারা হেসেই উড়িয়ে দেবেন। পাবলিক প্লেসে চেঁচিয়ে সেলফোনে কথা বলার মতো বদভ্যাস থেকে মুক্ত নয় অনেক শহুরে শিক্ষিত মানুষও। এমন একটি সামাজিক পরিস্থিতিতে শব্দদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনা চ্যালেঞ্জই বটে। বর্তমানে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের প্রেক্ষাপটে মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে ‘শব্দদূষণ’। বিশেষ করে শব্দদূষণের কারণে নতুন প্রজন্ম মানসিক ও শারীরিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শব্দদূষণের ফলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া, বধিরতা, হৃদরোগ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হওয়া, ঘুমের ব্যাঘাতসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় শব্দদূষণের মাত্রা বিপদসীমার উর্ধে বহুদিন ধরেই। উত্তরোত্তর তা ভয়াবহ মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজধানীর প্রধান সড়কসমূহ তো বটেই, বিভিন্ন অলিগলির বাসিন্দা ও পথচারীদের জীবনও অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে। এমনকি নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত স্কুল-কলেজ-হাসপাতালগুলোয়ও উচ্চমাত্রার শব্দদূষণ ঘটছে ভীষণ মাত্রায়। একবার পরিবেশ ও বনমন্ত্রী বলেছিলেন, পৃথিবীর অন্যান্য এলাকার চাইতে এ উপমহাদেশে শব্দদূষণ বেশি। এখানে প্রায় সবাই হর্ন বাজায়। কিন্তু অনেক দেশে গাড়ির হর্ন বাজালে অভদ্রতা হিসেবে দেখা হয়। শব্দদূষণ যে ক্ষতিকর তা বাংলাদেশের মানুষ ক্রমান্বয়ে বুঝতে পারছে। এ সম্পর্কে এখন অনেকেই সচেতন। উল্লেখ্য, হাইড্রোলিক হর্ন না বাজানোর জন্য আইন আছে। কিন্তু অনেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে এই হর্ন বাজাচ্ছেন। তবে আমাদের হতাশ হলে চলবে না। এ অবস্থার পরিবর্তন হবে। শব্দদূষণ রোধে আইনের কোন কার্যকর প্রয়োগ দেখা যায় না। ২০০২ সালে উচ্চ আদালত থেকে হাইড্রোলিক হর্ন এবং বিকট শব্দ সৃষ্টিকারী যে কোন ধরনের হর্ন গাড়িতে সংযোজনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ক্ষমতাবলে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদন্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদন্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই আইনের তেমন প্রয়োগ দেখা যায় না। এখন সময় এসেছে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের।
×