ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্ষিতীন্দ্রের দূরপাল্লার সাঁতার শুরু হচ্ছে আজ

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টির লক্ষ্যে ক্ষিতীন্দ্রের দূরপাল্লার সাঁতার শুরু হচ্ছে আজ

সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা থেকে ॥ বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রখ্যাত সাঁতারু ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের ১শ ৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দূরপাল্লার একক সাঁতার প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আজ সোমবার। সকাল ৬টায় শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার ভোগাই নদীর ব্রিজ থেকে সাঁতার শুরু করবেন তিনি। টানা (বিরামহীন) তিনদিনে ভোগাই, নেতাই, কংস ও মগড়া নদী পাড়ি দেয়ার পর বুধবার নেত্রকোনার মদন উপজেলার দেওয়ান বাজারে মগড়া নদীর ঘাটে এ প্রদর্শনী শেষ হবে। মদন উপজেলা নাগরিক কমিটি ও নালিতাবাড়ি পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ সাঁতার প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন নালিতাবাড়ি উপজেলার ইউএনও আরিফুর রহমান। মুক্তিযোদ্ধা সাঁতারু ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য গত বছরের (২০১৭) আগস্টে মাত্র ৪৩ ঘণ্টায় ১শ ৪৬ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এবার নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙ্গতে যাচ্ছেন তিনি। ৬৭ বছর বয়সী প্রবীণ এ সাঁতারু জনকণ্ঠকে জানান, গিনেজ রেকর্ড বুকে স্থান পেতে এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন তিনি। বিরামহীন সাঁতার প্রদর্শনী চলাকালে এক মিনিটের জন্য কোথাও থামবেন না। নদীতে সাঁতার অব্যাহত রেখেই গ্রহণ করবেন তরল জাতীয় খাবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ক্ষিতীন্দ্র চন্দ্র বৈশ্যের বাড়ি নেত্রকোনার মদন উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামে। বর্তমানে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এএনএস কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত। ১৯৭০ সালে সিলেটের ধুপাদীঘি পুুকুরে সাঁতারু অরুণ কুমার নন্দীর বিরামহীন ৩০ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনী দেখে তিনি সাঁতারে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। পরে একই বছর মদনের জাহাঙ্গীরপুর উন্নয়ন কেন্দ্রের পুকুরে ১৫ ঘণ্টার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে আলোচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে সিলেটের রামকৃষ্ণ মিশন পুকুরে ৩৪ ঘণ্টা, সুনামগঞ্জের সরকারী হাইস্কুলের পুকুরে ৪৩ ঘণ্টা, ১৯৭৩ সালে ছাতক হাইস্কুলের পুকুরে ৬০ ঘণ্টা, সিলেটের এমসি কলেজের পুকুরে ৮২ ঘণ্টা এবং ১৯৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুরে ৯৩ ঘণ্টা ১১ মিনিট বিরামহীন সাঁতার প্রদর্শন করে রেকর্ড সৃষ্টি করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি জগন্নাথ হলের পুকুরে ১শ ৮ ঘণ্টা ৫ মিনিটব্যাপী সাঁতার প্রদর্শন করে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জগন্নাথ হলের পুকুর পাড়ে একটি স্মারক (ফলক) নির্মাণ করে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ঢাকা স্টেডিয়ামের সুইমিং পুল, মদন উপজেলা পরিষদের পুকুর এবং নেত্রকোনা পৌরসভার পুকুরে তার একাধিক সাঁতার প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ভারতেরও দূরপাল্লার সাঁতার প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। ১৯৮০ সালে মাত্র ১২ ঘণ্টা ২৮ মিনিটে মুর্শিদাবাদের ভাগিরথী নদীর জঙ্গিপুর ঘাট থেকে গোদাবরী ঘাট পর্যন্ত ৭৪ কিলোমিটার নদীপথ পাড়ি দেন। সাঁতার প্রদর্শনী ও রেকর্ড সৃষ্টির স্বীকৃতি হিসেবে অসংখ্য পুরস্কার-সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে গণভবনে ডেকে রূপার নৌকা উপহার দেন। একই বছর ডাকসু তাকে বিশেষ সম্মাননা সূচক স্বর্ণপদক দেয়। এছাড়াও জগন্নাথ হল কর্তৃপক্ষ দুইবার এবং শামছুন্নাহার হল কর্তৃপক্ষ একবার তাকে সংবর্ধনা ও স্বর্ণপদক প্রদান করে। এছাড়াও বহু সংগঠন পুরস্কৃত করে তাকে।
×