ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুফতি হান্নান সদলবলে হাওয়া ভবনে তারেকের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেন ॥ একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  মুফতি হান্নান সদলবলে হাওয়া ভবনে তারেকের সঙ্গে  শলাপরামর্শ করেন ॥ একুশ আগস্ট গ্রেনেড  হামলা

বিকাশ দত্ত ॥ একুশে আগস্ট ভয়াবহ বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলার মামলার বিচার এখন একবারেরই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে শীঘ্রই এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করা হবে। আগামী ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে আইনী পয়েন্টের উপর যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। তাদের যুক্তিতর্ক শেষ হলেই রাষ্ট্রপক্ষ আইনী পয়েন্টের উপর যুক্তিতর্ক পেশ করবেন। রাষ্ট্রপক্ষের চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমরা আশা করছি অচিরেই রায় ও আদেশ হবে। যারা অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করেছে এবং এই ষড়যন্ত্রের কার্যকর ভূমিকা রেখেছে, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে তারা মাস্টার মাইন্ড। আশ্বাসের সঙ্গে ষড়যন্ত্রমূলক সভা এবং পরিকল্পনায় তারেক রহমান, আব্দুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিজ চৌধুরী, কায়কোবাদ তৎকালীন এনএসআই, ডিজিএফ আইয়ের ডিজি, পুলিশের আইজি এবং সিআইডির এসএসপিসহ অন্য কর্মকর্তাবৃন্দ সবাই জাড়িত ছিলেন। অন্যদিকে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দায়ের করা দুটি মামলায় আসামিদের মধ্যে জঙ্গী মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সি স্বীকারোক্তিমূলক যে দুটি জবানবন্দী পেশ করেছিলেন, সেই জবানবন্দীকে সমর্থন করে রাষ্ট্রপক্ষের ১২ জন সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করেন তা থেকে এসব বিষয়গুলো উঠে এসেছে। সেখানে সাক্ষীগণ জবানবন্দীতে বলেছেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামালায় তারেক রহমান, আবদুস সালাম পিন্টু, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অন্য আসামিরা ছিলেন। গ্রেনেড হামলার পূর্বে মুফতি হান্নান অন্য শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের নিয়ে তারেক জিয়ার হাওয়া ভবনের অফিসে উপস্থিত হন। তারেক জিয়া, মুফতি হান্নান ও নেতাদের আশ্বাস দেন যে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করলে তাদের নিরাপত্তা প্রদান করা হবে, হামলার পর তারা নিরাপদে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে পারবে। আর্জেস গ্রেনেড হামলায় দেশী-বিদেশী পাঁচ জঙ্গী সংগঠন সম্পৃক্ত ছিল। সংগঠনগুলো হচ্ছেÑ হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ, কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদি, তেহরিক জিহাদ-ই ইসলাম, লস্করই তৈয়বা এবং মিয়ানমার আরাকানের সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২৯ আগস্ট লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে অষ্টম দিনে সাক্ষ্য তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ করেছেন তার আইনজীবী নজরুল ইসলাম। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ও ৫ সেপ্টেম্বর বুধবার মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছে আদালত। আসামি পক্ষের আইনী পয়েন্টে যুক্তিতর্ক শেষ হলে রাষ্ট্রপক্ষ আইনী পয়েন্টের উপর যুক্তিতর্ক পেশ করবেন। রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে একুশে আগস্টের ঘটনায় আনা পৃথক মামলায় একই সঙ্গে বিচার চলছে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ১২ সাক্ষী জবানবন্দীতে কারা গ্রেনেড সরবারাহ করেছিল, কোন জায়গা থেকে গ্রেনেড আনা হয়, কারা প্রশাসনিক ও আর্থিক সহযোগিতা করেছিল, কার নির্দেশে ওই হামলা করা হয়, তাদের কি টার্গেট ছিল তা উঠে এসেছে। সাক্ষীরা বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলাসহ সব গ্রেনেড মামলায় মুফতি হান্নান জড়িত ছিলেন। মুফতি হান্নান স্বীকার করেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলাসহ সব গ্রেনেড মামলায় তিনি জড়িত। এসব হামলায় তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন ও পরিচালনা করেছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামালায় আবদুস সালাম পিন্টু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং তারেক রহমান জড়িত ছিলেন। মুফতি হান্নানের দুটি জবানবন্দী সমর্থন করে যে সব সাক্ষী জবানবন্দী দিয়েছেন তারা হলেনÑ ডিজিএফআইয়ের সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব) মোঃ সাদিক হাসান রুমি, আবু হেনা মোহাম্মদ ইউসুফ (রমনা বটমূলের তদন্তকারী কর্মকর্তা), লে. কমান্ডার (এক্স) মিজানুর রহমান (নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও সাবেক ডিজিএফআই কর্মকর্তা) মেজর (অব) মোঃ আতিকুর রহমান (সাবেক র‌্যাবের পরিচালক), মোঃ আজিজ সরকার (র‌্যাবের সাবেক ডিজি), নাহিদ লালনা কাকন (মাজেট ভাটের স্ত্রী) মোঃ মোসাদ্দেক বিল্লা (আহসান উল্লাহ কাজলের সাবলেট), মোঃ গোলাম রাব্বানী (মুফতি হান্নান যে বাসায় থাকতেন), মেজর (অব) সৈয়দ মনিুরুল ইসলাম (ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা), মোঃ তারেক আযম (আহসান উল্লা কাজলের ভাড়াটিয়া), মোঃ সাদেরক হোসেন, মোঃ মকবুল হোসেন (সাদেকের ভাই)। রাষ্ট্রপক্ষের যে ১২ সাক্ষী মুফতি হান্নানের জবানবন্দীকে সমর্থন করেছেন নিম্ন তাদের জবানবন্দী সংক্ষিপ্ত আকারে দেয়া হলো। আবু হেনা মোহাম্মদ ইউসুফ ॥ আবু হেনা মোহাম্মদ ইউসুফ (পি ডাব্লিউ-৬২) জবানবন্দীতে বলেন, ২০০৫ সালের অক্টোবর মাসে মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সি র‌্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারের পর বিভিন্ন মামলায় পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার ঢাকা রুহুল আমিন ২১ আগস্ট ২০০৪- গ্রেনেড হামলা মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান এবং আমি বিভিন্ন সময় মুফতি আ. হান্নান মুন্সিকে রিমান্ডে থাকাবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদকালে মুফতি আ. হান্নান মুন্সি জানান যে, তিনি হরকাতুল জেহাদের একজন নেতা। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোটালিপাড়া সভাস্থল এবং হেলি প্যাডের কাছে বোমা পেতে রাখে ২০০০ সালে (আপত্তি)। মুফতি আ. হান্নান আরও জানান, সিলেট হযরত শাহজালালের (র.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাই-কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা করে, সিলেটের মেয়র বদরউদ্দিন কামরানের সমাবেশে তার ওপর গ্রেনেড হামলা করে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে। এছাড়াও মুফতি আ. হান্নান জানান যে, তৎকালীন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসায় মুফতি হান্নান, মাওলানা তাইজুদ্দিন, মাওলানা আব্দুস সালাম ও জান্দাল এবং আরও নেতাকর্মী ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাস্থল ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করেন। মুফতি হান্নান আরও জানান যে, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পূর্বে তিনি অন্য শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের নিয়ে তারেক জিয়ার হাওয়া ভবনের অফিসে উপস্থিত হন। তারেক জিয়া তাকে ও নেতাদের আশ্বাস প্রদান করেন যে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করলে তাদের নিরাপত্তা প্রদান করা হবে, হামলার পর তারা নিরাপদে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে পারবে। এই আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে মাওলানা তাইজুদ্দিন থেকে আসামি মুফতি হান্নান গ্রেনেড সংগ্রহ করে উল্লিখিত হামলার জন্য নেতাকর্মীদের কাছে গ্রেনেড সরবরাহ করে। পূর্বের হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড মুফতি আ. হান্নান মুন্সি আসামি মাওলানা তাজুদ্দিনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে। আসামি তারেক জিয়া আসামি মুফতি হান্নানকে আশ্বাস দেয়ার বিষয়টি সম্পর্কে তৎকলীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে নির্দেশ দিয়েছিল বলে জানায়। সাদিক হাসান রুমী ॥ মেজর জেনারেল (অব) মোঃ সাদিক হাসান রুমী (পি ডাব্লিউ -৬৫) জবানবন্দীতে বলেন, মওলানা আবদুস সালামের মাধ্যমে তার তথ্যের ভিত্তিতে ডিজিএফআই সিলেট থেকে বিপুল নামীয় একব্যক্তি, যে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলা মোকদ্দমার অন্যতম আসামি, তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলাসহ সব গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত এবং অন্য হুজি নেতারাও জড়িত এবং মুফতি আবদুল হান্নান তাকে গ্রেনেড সরবরাহ করেছে বলে। মুফতি হান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে মুফতি হান্নান বিপুলের দেয়া তথ্য হুবহু স্বীকার করেন। মুফতি হান্নান আরও স্বীকার করেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড মামলাসহ সব গ্রেনেড মামলায় তিনি জড়িত এবং তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন ও পরিচালনা করেছেন। গ্রেনেডগুলো মুফতি হান্নান মাওলানা তাইজুদ্দিনের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন। মুফতি হান্নান আরও জানান তাইজুদ্দিন তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই। টিএফআই সেলে মুফতি হান্নান আরও স্বীকার করেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামালায় আবদুস সালাম পিন্টু, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং তারেক রহমান জড়িত ছিলেন। (আপত্তি)। টিএফআই সেলে মুফতি হান্নান আরও বলেন, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সরকারী বাসভবনে আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, মওলানা তাইজুদ্দিন, মওলানা আবু তাহের এবং অন্য হুজি নেতারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রস্তুতিমূলক মিটিং করেন। সেখানে আবদুস সালাম পিন্টু ও লুৎফুজ্জামান বাবর প্রশাসনিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। মিজানুর রহমান ॥ লে. কমান্ডার মিজানুর রহমান (পি ডব্লিউ ৬৮) জবানবন্দীতে বলেন, মুফতী হান্নানকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি আগস্ট ১৮ বা ১৯, ২০০৪ সালে মওলানা আবু তাহের, মুফতি হান্নানকে মোহাম্মদপুরে যেতে বলেন। মুফতি হান্নান জিজ্ঞাসাবাদে আরও বলেন, সে মতে সে নিজেও তার একজন সহযোগীসহ মোহাম্মদপুর যান। মওলানা আবু তাহের, তৎসহযোগী ও মুফতি হান্নান তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাড়িতে যান। মুফতি হান্নানের ভাষ্য মতে তারা গিয়ে দেখেন আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় তার ভাই মওলানা তাইজুদ্দিন পূর্ব থেকেই অবস্থান করছিলেন। সেখানে তার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে আলাপ আলোচনা করেন মর্মে আসামি মুফতি হান্নান জিজ্ঞাসাবাদে জানান। মুফতি হান্নানের ভাষ্য মতে জানতে পারি মাওলানা মনির, আরও একজন সহযোগীর মাধ্যমে মুফতি হান্নানের কাছে টাকা ও গ্রেনেড সরবরাহ করা হয়। মুফতি হান্নান আরও জানায় টাকা ও গ্রেনেড পেয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে তারা গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করে। আতিকুর রহমান ॥ মেজর (অব) মোঃ আতিকুর রহমান (পি ডব্লিউ -৭২) জবানবন্দী তে বলেন, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী বোমা হামলার রহস্য উন্মোচনের সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া বোমা স্থাপনের মূল নায়ক মুফতি হান্নানের নাম জানতে পারি। মুফতি হান্নানের নাম জানার পর কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মুফতি হান্নানকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা কার্যক্রম ও অভিযান পরিচালনা করি। বিগত ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর আমার নেতৃত্বে র‌্যাব গোয়েন্দা শাখার একটি দল টঙ্গী স্টেশন রোডের একটি বাসা থেকে মহিবল্লাহ ওরফে অভিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। অভিকে সঙ্গে নিয়ে একই দিনে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে আনন্দনগর মেরুল বাড্ডা ঢাকা থেকে মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করি। জানতে পারি অভি ও মুফতি হান্নান আপন দুই ভ্রাতা। গোয়েন্দা শাখার পরিচালক প্রয়াত কর্নেল গুলজারের কাছ থেকে জানতে পারি যে, মুফতি হান্নান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে। সে তথ্যের মধ্যে মুফতি হান্নান উল্লেখ করেছে যে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পূর্বে মফতি হান্নান, মাওলানা তাইজুদ্দিন, আহসান উল্লাহ কাজল, হাফেজ আবু তাহের, আবু জান্দাল ওরফে মুফতি মঈন গণ, তাইজুদ্দিনের আপন ভাই তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সরকারী বাস ভবনে মিটিং করেছে। কর্নেল গুলজারের কাছে আরও জানতে পারি যে, মুফতি হান্নান আরও বলেছেন উক্ত মিটিং-এ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত সব সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদ কালে মুফতি হান্নান জানায় যে, মাওলানা তাইজুদ্দিন কাশ্মীরভিত্তিক একটি জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল মুজাহিদিনের নেতা ও বাংলাদেশের সমন্বয়কারী। তাইজুদ্দিন পাকিস্তান থেকে আর্জেস গ্রেনেড নিয়ে এসে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে কাশ্মীরে মুজাহিদদের প্রেরণ করত। এই তাইজুদ্দিনই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ব্যবহৃত সব গ্রেনেড সরবরাহকারী বলে মুফতি হান্নান জানায়। নাহিদ লায়লা কাকন ॥ নাহিদ লায়লা কাকন (পি ডব্লিউ-৭৩) জবানবন্দীতে বলেন, সুমন, সুমনের আম্মা, মাওলানা ইদ্রিস যিনি সুমনের দুলাভাই, সুমনের বাড়ির ভাড়াটিয়া মাওলানা তাইজুদ্দিন এরা সবাই মাজেদ ভাটের সঙ্গে আমার বিয়ের প্রস্তাব দেন। তারা আমার বাবা মাকে বলেন মাজেদ ভাট পাকিস্তানী কিন্তু তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন। তারা সবাই আমার মায়ের সঙ্গে মাজেদ ভাটের পরিচয় করিয়ে দেয়। আমি ও আমার আম্মা সিরাজগঞ্জে চলে যাই। এর কয়েক দিন পর সুমন, সুমনের আম্মা, সুমনের দুলাভাই, মাওলানা তাজউদ্দিন ও মাজেদ ভাট সবাই আমাদের সিরাজগঞ্জের বাসায় যায় এবং সেদিন সবার উপস্থিতিতে আমার বাবা মায়ের উপস্থিতিতে ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসের ৩ তারিখে ধর্মীয় বিধানুসারে মাজেদ ভাটের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়।’ কিছুদিন যাওয়ার পর লক্ষ করি বাসায় মাওলানা তাইজুদ্দিন, সাতক্ষীরার গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম, মুফতি হান্নান, সুমনের দুলাভাই মাওলানা ইদ্রিস, মাওলানা মুনির আমাদের বাসায় আসা যাওয়া করছে। আমি আমার স্বামী মাজেদ ভাটকে জিজ্ঞেস করি তারা কেন আমাদের বাসায় আসে আর কিইবা আলাপ আলোচনা করে। মাজেদ ভাট আমাকে বলে মূলত আমি পাকিস্তানী লোক নই, আমাকে মিথ্যা বলা হয়েছিল, আমি মূলত ভারতের কাশ্মীরের লোক। (আপত্তি)। ভারতের কাশ্মীরে হিজবুল মুজাহিদি সংগঠনের নেতা সে বলে আমাকে জানায়। সে আরও বলে মুফতি হান্নান, মাওলানা ইদ্রিস, মাওলানা তাইজুদ্দিন, মাওলানা মুনির উক্ত হিজবুল মুজাহিদিদের লোক। মাওলানা তাইজুদ্দিনসহ সবাই সংগঠনের কাজে আমার স্বামী মাজেদ ভাটকে সহায়তা করে বলে মাজেদ ভাট আমাকে জানায়। আমি দেখেছি পাকিস্তান থেকে কিছু লোক এসে মাজেদ ভাটের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত করত। এই ঘটনার কিছুদিন পর দেখি মাজেদ ভাট এবং মাওলানা তাইজুদ্দিন এবং তাদের সঙ্গে আরও দুই পাকিস্তানী ব্যক্তি দুইটি কার্টনে কিছু ওজনদার বা ভারি জিনিস আমার বাসায় নিয়ে এসে রাখে এবং তারা চলে যায়। মাজেদ ভাট থাকে। আমি মাজেদ ভাটকে জিজ্ঞেস করি কার্টনগুলো কিসের। মাজেদ ভাট বলে কার্টনের ভেতর গ্রেনেড ও গুলি রয়েছে। সে আরও বলে গ্রেনেড ও গুলি তাদের সংগঠনের কাজের জন্য আনা হয়েছে। কয়েকদিন পর মাওলানা তাইজুদ্দিন, মাওলানা ইদ্রিস, মুফতি হান্নান ও মাওলানা মুনির এরা আমার বাড়িতে আসে এবং উল্লিখিত কার্টনগুলো সঙ্গে নিয়ে চলে যায়। এভাবে তারা কয়েকবার আমার বাসায় গ্রেনেড ও গুলি আনা নেয়া করে। তারা প্রায়ই আমাদের বাসায় এসে আলাপ-আলোচনা করত। কয়েক দিন পর তারা আমাদের বাসায় অনেকক্ষণ আলাপ-আলোচনা করে ও টেলিফোনে বিভিন্ন জায়গায় কথাবার্তা বলে। তাদের আলাপ-আলোচনায় এইটুকু বুঝতে পারি যে, তারা আওয়ামী লীগের উপর ভীষণ ক্ষুব্ধ। তারা যে কোন মূল্যে আওয়ামী লীগের অনেক বড় কোন ক্ষতি করতে চায়। তারা আমার বাসা থেকে চলে যাওয়ার পর আমি মাজেদ ভাটকে বলি তোমরা আওয়ামী লীগের ওপর এত ক্ষ্যাপা কেন। মাজেদ ভাট আমায় বলে এটি রাজনৈতিক বিষয় এগুলো নিয়ে তোমার চিন্তার কিছু নেই। আমাকে মাজেদ ভাট বলে এই বিষয় নিয়ে বাইরে আলোচনারও প্রয়োজন নাই। আমি মাজেদ ভাটকে আরও বলি এদের সঙ্গে থেকে আওয়ামী লীগের কিছু হলে তোমার কোন ক্ষতি হবে নাতো। মাজেদ ভাট আমায় বলে মাওলানা তাইজুদ্দিনের ভাই সরকারের একজন মন্ত্রী আমাদের কিছু হবে না। মোসাদ্দেক বিল্লাহ ॥ মোঃ মোসাদ্দেক বিল্লাহ (পিডব্লিউ-৭৪) জবানবন্দীতে বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি ২০০৪ সালে ঢাকা থেকে বরমী, শ্রীপুর, গাজীপুর যাওয়ার পথে বাসের মধ্যে মাওলানা লিটন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, আমার বাড়ি নরসিংদীর শিবপুর এবং আমি মুফতি কামাল সাহেবের ছোট ভাই। আমি জিজ্ঞাসা করি তিনি মুফতি কামালকে চিনেন কিনা। তখন তিনি বললেন মুফতি কামাল সাহেবকে চিনব না, তিনি আফগানিস্তানে যুদ্ধ করেছিলেন। উক্ত ব্যক্তি বাস থেকে নামার সময় একটি ঠিকানা দেয় ও বলেন আমাকে যাওয়ার জন্য। আমি ১০/১২ দিন পর ঐ ঠিকানা অনুযায়ী পূর্ব মেরুল বাড্ডা ঢাকাতে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল গোলাম রাব্বানীর বাসায় যাই। সেখানে যাওয়ার পর মাওলানা লিটন সাহেব কয়েকজন লোকের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়। তারা হচ্ছেন আহসান উল্লাহ কাজল, মুফতি হান্নান, আবু জান্দাল, মুত্তাকিন মুরসালিন, সবুজ ও আরও অনেকে- সবার নাম স্মরণ নেই। ২০০৪ইং সালের ২১ আগস্ট দুপুর ১২:০০ মিনিটের দিকে দোকান বন্ধ করে পশ্চিম মেরুল বাড্ডায় যাই। ম-৯৪ পশ্চিম মেরুল বাড্ডা বাসায় ১০/১৫ জন ব্যক্তিকে দেখি। উপস্থিতিদের মধ্যে মাওলানা লিটন, আহসান উল্লাহ, মুত্তাকিন মুরসালিন, আবু জান্দাল ও মুফতি হান্নানগণকে দেখি। যাওয়ার পর দেখি এরা কালো ব্যাগ থেকে গোল গোল কি যেন বেড় করছে। আমি উপস্থিত একজনকে জিজ্ঞেস করি সেগুলো কি জিনিস। সে বলল সেগুলো শেখ হাসিনার নাস্তা। সন্ধ্যার সময় লোকমুখে ও সংবাদে শুনতে পেলাম বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বোমা হামলা হয়েছে। তখন আমি বুঝতে পারি শেখ হাসিনার নাস্তা’ কথাটির অর্থ। গোলাম রাব্বানী ॥ মোঃ গোলাম রাব্বানী (পিডব্লিউ-৭৬) জবানবন্দীতে বলেন, ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে আহসান উল্লাহ কাজল নামে জনৈক ব্যক্তি নিজেকে লেখক ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আমার উল্লেখিত বাড়ির দ্বিতীয় তলায় উত্তর দিকে ৩ কক্ষ বিশিষ্ট ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন। ভাড়া নেয়ার পর ২০০৪ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি সে আমাকে বলে যে ভাড়া দেয়া তার পক্ষে অসুবিধা হয়ে পড়েছে আর্থিক সঙ্কটের কারণে। এরপর মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ নামে এক ব্যক্তিকে দুই কক্ষ সাবলেট দেয়ার জন্য প্রস্তাব করে আমাকে ও আমি তা গ্রহণ করি। ২০০৪ সালের জুন মাসের পর থেকে কাজলকে আর আমার উল্লেখিত ঠিকানার বাসায় দেখি নেই। খবর নিয়ে জানতে পারি সে পশ্চিম মেরুল বাড্ডায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে চলে গেছে। এরপর থেকে মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ ও আহসান উল্লাহ ভাড়া থাকাবস্থায় কিছু লোক ইসলামী লেবাজে আমার বাসায় যাতায়াত করতেন। তাদের সঙ্গে দেখা হলে আমার সালাম বিনিময় হতো। আজিজ সরকার ॥ মোঃ আব্দুল আজিজ সরকার (পিডব্লিউ-৮২) জবানবন্দীতে বলেন, ঐ সময় বিভিন্ন বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নানকে ০১.১০.২০০৫ সালে মেরুল বাড্ডা থেকে গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য, কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় বোমা পুঁতে রেখে তাকে হত্যাচেষ্টায় আনীত মামলায় তার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ছিল। মুফতি হান্নানের গ্রেফতারের বিষয়টি তৎকালীন আইজিপি মোঃ আব্দুল কাইয়ুম এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে ব্যক্তিগতভাবে অবহিত করি। লুৎফুজ্জামান বাবর এই গ্রেফতারের বিষয়ে সন্তুষ্ট হননি বরং কিছুটা বিরক্ত হন। তিনি এই গ্রেফতারের বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। এরপর মুফতি হান্নানকে টিএফআই সেলে ১৭ আগস্টের বোমা হামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি মুফতি হান্নান কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা ও ২০০১ সালে সিলেটে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা ও সিলেটে হযরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলার বিষয় স্বীকার করেন। (আপত্তি)। মুফতি হান্নানকে বিভিন্ন বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রিমান্ডে এনে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মুফতি হান্নানকে আরও নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায় যে তার সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বহু পূর্ব থেকেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যা করার চেষ্টা করে আসছিল। কারণ তাদের মতে শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে এবং আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ইসলামকে রক্ষা করা যাবে না এবং তাদের সংগঠনের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে। তাদের পরিকল্পনা মতে মুফতি হান্নান, মাওলানা তাইজুদ্দিন, মাওলানা তাহের ও অন্য নেতারা শেখ হাসিনাকে হত্যা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। মুফতি হান্নান আরও স্বীকার করে যে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পূর্বে সে মাওলানা তাইজুদ্দিন ও অন্যদের সঙ্গে কয়েকটি মিটিং করে। সে আরও জানায়, মাওলানা তাইজুদ্দিন তৎকালীন সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই, তাই সে এই হামলার বিষয় সরকারের সব প্রশাসনিক সহায়তা পাবে। মাওলানা তাইজুদ্দিনের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে মুফতি হান্নান মাওলানা তাইজুদ্দিনের ভাই আব্দুস সালাম পিন্টুর সঙ্গে তার সরকারী বাসভবনে একটি বৈঠক করে। এই বৈঠক চলাকালীন সময়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর আব্দুস সালাম পিন্টুর বাসভবনে উপস্থিত হয়ে বৈঠক করেন। সেখানে এ হামলার বিষয়ে পিন্টুসহ বিস্তারিত আলাপ হয়। বৈঠকে পিন্টু আশ্বাস দিয়ে বলেন, মাওলানা তাইজুদ্দিন নিজেই গ্রেনেড সরবরাহ করবে এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। সরকারের তরফ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক পিন্টু ও আবু তাহেরের উপস্থিতিতে পিন্টুর বাসভবনে তাইজুদ্দিন গ্রেনেডসমূহ সরবরাহ করে এবং আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করে। গ্রেনেডগুলো ২১ আগস্টের ঘটনায় ব্যবহৃত হয়। সৈয়দ মনিরুল ইসলাম ॥ মেজর (অব) সৈয়দ মনিরুল ইসলামের (পিডব্লিউ-৮৪) জবানবন্দীতে বলেন, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট অফিসাররা বিপুলকে জিজ্ঞাসাদ করে যেসব তথ্য পায় তা আমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অফিসারের কাছ থেকে শুনতে পাই। বিভিন্ন অফিসারের তথ্য মতে জানা যায় যে, আসামি বিপুল হুজির একজন সক্রীয় সদস্য। তিনি সিলেট ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলা পরিচালনাসহ সিলেটের অন্যান্য গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত। এসব গ্রেনেড হামলা বিপুল নিজেই পরিচালনা করেছেন। এছাড়াও আরও জানতে পারি যে, আসামি বিপুল এসব গ্রেনেড মুফতি হান্নানের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, মুফতি হান্নান তথা হুজির সদস্যগণ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে পরিচালনা করেন। ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের জনসভায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে উক্ত হামলা পরিচালিত হয়। ২১ আগস্ট ২০০৪-এর গ্রেনেড হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডসমূহ মুফতি হান্নানকে সরবারাহ করেছে বলে স্বীকার করে। এছাড়াও আসামি বিপুল সিলেটে যে গ্রেনেড হামলা করেছে সে সম্পর্কেও তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, ২১ আগস্ট ২০০৪ সালের বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যে গ্রেনেড হামলা হয় তা মুফতি হান্নান তথা হুজির সদস্যগণই পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন। তারেক আজম ॥ তারেক আজম (পিডব্লিউ-১৬৯) জবানবন্দীতে বলেন, আমি ২০০৩ সালে প্লট নং ৫৩, রোড নং ১২, ডিআইটি প্রজেক্ট, মেরুল বাড্ডার কর্নেল রব্বানী সাহেবের বাসার তিন তলায় দক্ষিণ পাশের ফ্ল্যাটে আমি ও আমার ফুফাতো ভাই আমিনুল ইসলাম ভাড়া নেই। তিন তলার উত্তর পাশের ফ্ল্যাটে আহসান উল্লাহ কাজল নামে এক ব্যক্তি ভাড়া নেয়। তার বাড়ি ছিল ফরিদপুরে। ২০০৪ সালের মাঝামাঝিতে জনৈক মোসাদ্দেক বিল্লাহ নামে একজন ব্যক্তি উত্তর পাশের ফ্ল্যাটে একটি মক্তব খুলেন দুটি রুমে। অন্য রুমে আহসান উল্লাহ বাস করত। মোসাদ্দেক বিল্লাহর বাড়ি নরসিংদী। ২০০৪ সালের শেষের দিকে তারা ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যান। মোসাদ্দেক থাকাবস্থায় আহসান উল্লাহর কাছে হুজুর শ্রেণীর অনেক লোক আসা যাওয়া করত। তারা কালো ব্যাগ নিয়ে আসত। পরবর্তীতে পেপার পত্রিকায় জানতে পারি কাজল, মোসাদ্দেক ও অন্য হুজুর যারা আসা যাওয়া করত তাদের মধ্যে অনেকে ২১ গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত। আরও জানতে পারি তারা জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। সাদেক হোসেন ॥ সাদেক হোসেনের (এ পিডব্লিউ-২০৮) জবানবন্দীতে বলেন, ২০০৪ সালের জুন মাসের শেষের দিকে আহসান উল্লাহ কাজল নামে এক ব্যক্তি আমাদের বাসার নিচতলা ভাড়া নেন। বাসাটি দুই রুম বিশিষ্ট ফ্ল্যাট। একটি বাথরুম ও একটি রান্না ঘর রয়েছে। তিনি ৩/৪ মাস আমাদের বাড়িতে ছিলেন। আনুমানিক ২০০৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ছিলেন। তার কাছে প্রায় সময় বিভিন্ন লোকজন আসতেন। আসা যাওয়ার পথে তাদের সঙ্গে দেখা হতো। বিস্তারিত কোন আলাপ হতো না। যারা আসত তারা ধর্মীয় পোশাকে ও ধর্মীয় রীতিতে চলত। তাদের দেখে কখনও কোন সন্দেহ হতো না। পরবর্তীতে বিভিন্ন পত্রিকা ও মিডিয়াতে জানতে পারি তারা জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। জঙ্গী সংগঠনের নাম হরকাতুল জিহাদ। মকবুল হোসেন ॥ মোঃ মকবুল হোসেন (পি.ডব্লিউ-২০৯) জবানবন্দীতে বলেন, ২০০৪ সালে জুন মাসের শেষ দিকে আহসান উল্লাহ কাজল আমাদের বাসার নিচতলায় গ্যারেজ সংলগ্ন দুই কক্ষ বিশিষ্ট রুম, বাথরুম, রান্না ঘরসহ ভাড়া নেয়। তিনি প্রায় ৫ মাস পর্যন্ত ঐ বাসায় অবস্থান করেন। তিনি আমাদের বাসায় অবস্থানকালে তার কাছে অনেক লোক আসতেন। যারা আসতেন তারা সবাই ধর্মীয় লেবাসে থাকতেন। আসা যাওয়ার পথে তাদের সঙ্গে দেখা হতো, শুধু সালাম বিনিময় হতো। পরবর্তীতে জানতে পারি তারা ধর্মীয় কর্মকা-ের আড়ালে ধর্মীয় জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের সঙ্গে জড়িত। আরও জানতে পারি তারা ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
×