নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, ২ সেপ্টেম্বর ॥ ‘আর কিছু নাই যে ভাঙ্গবে, যা আছিল সব লইয়্যা গেছে তেতুইলায় (তেঁতুলিয়ায়)। চাইরবার ঘর ভাঙ্গছে, জমি ক্ষেত, হালের বলদ সব শ্যাষ এহন আর কিছুই নাই। রাস্তার পাশে ঝুপড়ি বানাইয়া পোলাপান লইয়া কোনমতে আছি। এই রাস্তাও মনে হয় টেকবে না। এরপর কই যামু আমরা? আমনেরা সরকার’রে কন, এমপিরে কন আমাগো লইগ্যা কিছু করতে। এভাবেই কান্না জড়িত কণ্ঠে কথা বলছিলেন তেঁতুলিয়ার ভাঙ্গনে গৃহহীন জালাল মিয়া (৪৫)। শুধু জালাল মিয়াই নয় এমনই আর্তনাদ করেন বাউফলের ধুলিয়া ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। এ ইউনিয়নের ধুলিয়া পুরান বাজার, নতুন বাজার, বারদিপাড়া, উত্তর ঘুচরাকাঠি ও মঠবাড়িয়া অংশ। ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে শতাধিক ঘর বাড়ি। ধুলিয়া-হোসনাবাদ সড়কটির একাংশ নদীতে বিলীন হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ধুলিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের কয়েক হাজার মানুষ। তেঁতুলিয়ার এই অব্যাহত ভাঙ্গনে হুমকির মুখে রয়েছে ধুলিয়া দাখিল মাদ্রাসা, ধুলিয়া এনকে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মঠবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি ধর্মীয় উপাসনালয়। এছাড়াও হুমকির মুখে রয়েছে ভাষা সৈনিক সৈয়দ আশরাফের সমাধিস্থল। ধুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রব বলেন, এই ভাঙ্গন এভাবে অব্যাহত থাকলে অচিরেই ধুলিয়া বাজার নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি ৩টি মসজিদ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিদিনই গৃহহীন হচ্ছে এখানকার মানুষ। অচিরেই এই ভাঙ্গন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান তিনি।
তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙ্গনরোধে করণীয় সম্পর্কে বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার পীযুষ চন্দ্র দে বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তাৎক্ষণিকভাবে এই ভাঙ্গনরোধে দুই কিলোমিটার এলাকায় ব্লক ফেলা গেলে সুফল পাওয়া যেত। বিষয়টি আমরা সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেছি। কিন্তু এই ভাঙ্গন রোধে দ্রুত কোন পদক্ষেপ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন উত্তর দিতে পারেননি পানি উন্নয়ন বোর্ডের পটুয়াখালী জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান। তিনি জানান, ধুলিয়ায় ভাঙ্গনরোধে আমাদের একটি প্রস্তাবনা দেয়া আছে। এই প্রকল্প অনুমোদন হলে এর কাজ শুরু করা যাবে। দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রকল্পের কথা শোনা যাচ্ছে কিন্তু এর বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমীক্ষাসহ আরও কিছু কাজ রয়েছে, এরপর প্রস্তাবনা যাবে মন্ত্রণালয়ে সেখান থেকে একনেকে। একনেকে পাস হওয়ার পর কিছু কাজ শুরু করা যাবে।