ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অনুমোদন পাচ্ছে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

অনুমোদন পাচ্ছে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অবশেষে অনুমোদন পাচ্ছে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম পরিকল্পনা ‘ডেল্টা প্ল্যান বা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার প্রেক্ষাপটে এ পরিকল্পনাটি তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। ২০১৪ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হওয়ার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর পরিকল্পনাটি অনুমোদন পাচ্ছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে আগামী মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর) এটি উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে এটি অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। বৈঠকে পরিকল্পনাটি উপস্থাপন করবেন জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। এর আগে, গত ২৭ জুন এই পরিকল্পনার সার-সংক্ষেপের খসড়া উপস্থাপন করা হয় প্রধানমন্ত্রীর সামনে। দীর্ঘ সময় তিনি এ পরিকল্পনার মূল বিষয়গুলো শুনে কিছু নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সেইসব সুপারিশ সমন্বয় করে এরইমধ্যে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সেসময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) আবুল কালাম আজাদসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনাটি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত জিইডি’র সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, ‘আগামী ১০০ বছরের টার্গেট করে ব-দ্বীপ পরিকল্পনাটি তৈরি করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তৈরি এ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে ডেল্টা তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই তহবিলের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বাংলাদেশ সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, পরিবেশ ও জলবায়ু সম্পর্কিত তহবিল বিশেষ করে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) এবং সরকারি-বেসরকারি (পিপিপি) বিবেচনা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ডেল্টা কমিশন গঠনের প্রস্তাব রয়েছে।’ জিইডি সূত্র জানায়, দেশের পানিসম্পদ নিয়ে ১০০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনার খসড়া তৈরিতে সহায়তা দিয়েছে নেদারল্যান্ড। পরিকল্পনা তৈরির জন্য ৪৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে দেশটি। জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮৮ কোটি টাকা। নেদারল্যান্ডের বাইরেও সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে এতে ব্যয় করা হয়েছে। এতে পানিসম্পদ, ভূমি, কৃষি, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ভূ-প্রতিবেশ খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনায় বাংলাদেশের ব-দ্বীপ ভূমিতে প্রাকৃতিক সম্পদ খাতের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন প্রশাসন সম্পর্কে একটি দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করার প্রচেষ্টা রয়েছে। সমন্বিত নীতি উন্নয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়নের সম্ভাব্য বাধা চিহ্নিত করা হয়েছে। তারপর করণীয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রোডম্যাপ তৈরি এবং সমন্বিত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় আনার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। ডেল্টা তহবিল গঠনের প্রস্তাবে বলা হয়, ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ বাস্তবায়নের জন্য ২০৩০ সাল নাগাদ প্রয়োজন হবে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। এজন্য জিডিপির ২.৫ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থায়ন সম্বলিত বাংলাদেশ ডেল্টা তহবিল গঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যার মধ্যে ২ শতাংশ নতুন বিনিয়োগ এবং ০.৫ শতাংশ পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় করা হবে। জিডিপির ২.৫ শতাংশের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ সরকারি তহবিল হতে এবং শতকরা ২০ ভাগ বেসরকারি খাত থেকে আসবে। এতে আরও বলা হয়, অর্থায়নের ক্ষেত্রে কস্ট রিকভারির জন্য বেনিফিসিয়ারিতে প্রিন্সিপাল অনুসরণ করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে বড় শহরগুলিতে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা খাতে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় আদায়ের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা কার্যকর করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে এবং তা পর্যায়ক্রমে সময়ের আবর্তনে অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হবে। ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা’য় ২০১৭ সাল থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগ সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- উপকূলীয় অঞ্চলে ২৩টি প্রকল্পের জন্য ৮৮ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা; বরেন্দ্র এবং খরাপ্রবণ অঞ্চলের ৯টি প্রকল্পের আওতায় ১৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা; হাওর এবং আকস্মিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের জন্য ৬টি প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য ৮ প্রকল্পের অনুকূলে ৫ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা; নদী এবং মোহনা অঞ্চলে ৭টি প্রকল্পের অনুকূলে ৪৮ হাজার ২৬১ কোটি টাকা এবং নগরাঞ্চলের জন্য ১২টি প্রকল্পের অনুকূলে ৬৭ হাজার ১৫২ কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রাক্কলন করা হয়েছে।
×