ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওটিসির ২৪ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা উভয় সঙ্কটে

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  ওটিসির ২৪ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা উভয় সঙ্কটে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অস্তিত্বহীন কোম্পানিকে ঘিরে উভয় সঙ্কট তৈরি হয়েছে। একদিকে মামলা করা না হলে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি লিকুইড করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে মামলা করার মতো কোন বড় বিনিয়োগকারী বা পাওনাদার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া অস্তিত্বহীন এসব কোম্পানি অন্যত্র বিক্রি করায় মামলা করলে তার রায় অনুকূলে আসবে না। ফলে বিপুল পরিমাণ শেয়ার নিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের বসে থাকতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে অবস্থানরত ২৪টি কোম্পানি অস্তিত্ব সঙ্কটে রয়েছে। এসব কোম্পানি অনিয়মের চরম সীমায় উপনীত হয়েছে। তালিকাভুক্ত থাকা অবস্থায়ও এগুলোর সঙ্গে পুঁজিবাজারের কোন যোগাযোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে এগুলো লাপাত্তা রয়েছে বলে জানা গেছে। আরও জানা যায়, কোন রকম মিটিং বা এজিএম করছে না এসব কোম্পানি। অথচ আইন অনুযায়ী প্রতিটি কোম্পানির জন্য প্রতিবছর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বা অ-তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানিই এর আওতাভুক্ত। কিন্তু কোম্পানি আইন উপেক্ষা করে এ ২৫ কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে এজিএম করছে না। এছাড়া নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল না করা, দায়বদ্ধতা এড়িয়ে চলা ইত্যাদি অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছে এসব কোম্পানি। কিন্তু কোম্পানিগুলোকে দায়বদ্ধতার ভেতর নিয়ে আসতে নীরব ভূমিকা পালন করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অন্য কোম্পানির চেয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এজিএম না করে, বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড না দিয়ে, নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল না করে এবং পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট নিয়ম-কানুন না মেনে কোম্পানিগুলো আইন ভঙ্গের পাশাপাশি অনিয়মের চরম সীমায় উপনীত হয়েছে। এসব কোম্পানির জন্য অবিলম্বে তদন্ত কমিটি গঠন করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বর্তমানে ওটিসিতে অবস্থানরত ২৪ কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে এজিএম না করার পাশাপাশি বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, মেটালেক্স কর্পোরেশন, বেমকো, আমাম সি ফুড, টিউলিপ ডেইরি, রাসপিট ইনক, ঢাকা ফিশারিজ, মোনা সি ফুড, জার্মান বাংলা জেবি ফুড, সালেহ কার্পেট, ডায়নামিক টেক্সটাইল, মিতা টেক্সটাইল, বিডি ডায়িং, বিডি জিপার, এম হোসেন গার্মেন্টস, চিকটেক্স, ফার্মাকো ইন্টারন্যাশনাল, আজাদী প্রিন্টার্স, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, পারফিউম কেমিক্যালস, ম্যাক পেপার, ম্যাক এন্টারপ্রাইজ, রাসপিট ডাটা, বিডি লাগেজ, রোজ হেভেন বলপেন। তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, কোম্পানি আইন উপেক্ষা করে এসব কোম্পানি বহাল তবিয়তে চলছে। ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ৮১ ধারা মোতাবেক, প্রত্যেক কোম্পানি ইহার অন্যান্য সভা ছাড়াও প্রতি ইংরেজী পঞ্জিকা বছরে বার্ষিক সাধারণ সভা হিসেবে একটি সাধারণ সভা অনুষ্ঠান করবে এবং ওই সভা আহ্বানের নোটিসে ইহাকে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করবে। সেজন্য কোম্পানি আইন অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রত্যেকটি কোম্পানিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে হয়। কিন্তু এ আইন মানছে না কোম্পানিগুলো। এ বিষয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে সিকিউরিটি গার্ড ছাড়া কোন উর্ধতন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ২-১টি কোম্পানিতে নগণ্য পরিমাণ কর্মকর্তা পাওয়া গেলেও মালিকপক্ষের দোহাই দিয়ে কেউ কোন মন্তব্য করতে চাননি। কিছু কোম্পানির সাইনবোর্ড ছাড়া আর কিছুই নেই। আবার কোন কোন কোম্পানি বিক্রি করে দিয়ে মালিকপক্ষ গা ঢাকা দিয়েছে। তবে প্রতিটি কোম্পানিরই মালিকপক্ষ খুবই ক্ষমতাবান। দেখা গেছে, নিজেদের দুর্বল কোম্পানির দিকে দৃষ্টি না দিয়ে তারা অন্য কোম্পানি নিয়ে ব্যস্ত। পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে তারা তালিকাভুক্ত কোম্পানি উন্নত না করে অন্য কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করেছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী হাতে শেয়ার নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে বহাল তবিয়তে দিন কাটাচ্ছেন কোম্পানির মালিকপক্ষ।
×