ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান ইইউর

ফিলিস্তিনী সংস্থায় মার্কিন সাহায্য বন্ধে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়বে

প্রকাশিত: ০৪:০২, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 ফিলিস্তিনী সংস্থায় মার্কিন সাহায্য বন্ধে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বাড়বে

জাতিসংঘ ফিলিস্তিনী শরণার্থী সংস্থায় মার্কিন সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্তে শনিবার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিনের শরণার্থীরা। তারা সতর্ক করেছে যে, এতে মধ্যপ্রাচ্যে দারিদ্র্য, ক্ষোভ ও অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। এদিকে ফিলিস্তিনী শরণার্থীদের সহায়তা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। খবর ইয়াহু নিউজের। যুক্তরাষ্ট্র শুক্রবার ঘোষণা করে যে, তারা আর ইউনাইটেড ন্যাশন্স রিলিফ এ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেসটাইন রেফুজিস (ইউএনআরডব্লিউএ) সংস্থার সমর্থনে কাজ করবে না। তারা সংস্থাটিকে অনুদান দেবে না। সংস্থাটি তার আর্থিক সঙ্কটের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান বন্ধের সিদ্ধান্তে ফিলিস্তিনী নেতৃত্বের সঙ্গে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ৬৮ বছরের পুরনো ইউএনআরডব্লিউএ সংস্থাটি জর্দান, লেবানন, সিরিয়া, পশ্চিমতীর ও গাজা শহরের প্রায় ৫০ লাখ ফিলিস্তিনী শরণার্থীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যাদের অধিকাংশই ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে বাড়িঘর হারিয়েছে অথবা নিজেদের এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। ওই যুদ্ধে ইসরাইল সৃষ্টি হয় ও সাত লাখ ফিলিস্তিনী গৃহহীন হন। গাজার শরণার্থী নাশাত আবু এল-ওউন বলেন, পরিস্থিতি খারাপ হয়ে উঠেছে। এটি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে... মানুষের পক্ষে জীবনযাপন করা খুব কঠিন হয়ে উঠছে। যদি তারা উপার্জন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে তারা আইনবিরোধী কাজের কথা চিন্তা করতে শুরু করবে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র হিথার নুয়ের্ত শুক্রবার বলেন যে, ইউএনআরডব্লিউএ এখন ব্যবসায়িক মডেল হয়ে উঠেছে এবং এর আর্থিক দিকটি অবিশ্বাস্যরকমের ত্রুটিপূর্ণ। সংস্থাটি পরিশেষে একটি দ্রুততম সময়ে লাভবান প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ইউএনআরডব্লিউএ মার্কিন সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে। সংস্থাটির মুখপাত্র ক্রিস গানেস মার্কিন অনুদান কমানোর কাজকে জোর করে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন। জর্দান থেকে তিনি জানান, সেখানে ২০ লাখের বেশি নথিভুক্ত ফিলিস্তিনী শরণার্থী রয়েছে। যাদের মধ্যে দশটি শরণার্থী শিবিরেই তিন লাখ ৭০ হাজার শরণার্থী অবস্থান করছে। এটি খুবই দুঃখজনক সিদ্ধান্ত... এতে করে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত, প্রান্তিক ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর লোকদের ভোগান্তির সম্ভাবনা রয়েছে। ইউএনআরডব্লিউএ জর্দান, সিরিয়া, লেবানন, গাজা ও পশ্চিম তীরে পাঁচ লাখ ২৫ হাজার শিশুর জন্য স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত করছে। ইস্ট জেরুজালেমে ১৭ লাখ লোককে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। যার মধ্যে গাজায় দশ লাখ লোককে এই সহায়তার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংস্থাটির এখনই ২১ কোটি ৭০ লাখ অনুদান ঘাটতি রয়েছে। যেজন্য তারা দাতাদের আরও ও নতুন আয়ের উৎস খোঁজার কথা বলেছে। ইউএনআরডব্লিউএর সবচেয়ে বড় দাতা ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ বছরের শুরুর দিকে তারা অনুদান কমিয়ে দেন। তারা জানুয়ারি মাসে প্রথম কিস্তিতে মাত্র ছয় কোটি মার্কিন ডলার অনুদান দেয়। তখন তারা ছয় কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের অনুদান আটকে দেয়। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সারা বছরে তারা ৩৬ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার অনুদান দেবে। ওয়াশিংটন জানিয়েছে, সংস্থাটির অনির্দিষ্ট সংস্কার প্রয়োজন। পাশাপাশি তারা ফিলিস্তিনীদের ইসরাইলের সঙ্গে নতুন করে আবার শান্তি আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে। শুক্রবার মার্কিন সিদ্ধান্ত নিশ্চিত হওয়ার আগে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর প্রধান ফিলিপো গ্রান্দি বলেন, তার সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর ভূমিকা পালন করবে। ওই অঞ্চলে ফিলিস্তিনী শরণার্থীরা ইউএনআরডব্লিউএর দায়িত্ব।
×