ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের শ্রেষ্ঠত্বে আজ পর্দা নামছে এশিয়ান গেমসের

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 চীনের শ্রেষ্ঠত্বে আজ পর্দা নামছে এশিয়ান গেমসের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ সব জল্পনা-কল্পনাকে পেছনে ফেলে সফলভাবেই এশিয়ান গেমসের ১৮তম আসর শেষ করতে চলেছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির দুটি শহর রাজধানী জাকার্তা ও সুমাত্রার বন্দর নগরী প্যালেমবাংয়ের ১১ ভেন্যুতে গত ১৮ আগস্ট ‘ফিল দ্য এনার্জি ফর এশিয়া’ স্লোগান নিয়ে এবারের এশিয়ান গেমস শুরু হয়েছিল। গত ১৫ দিনে ৪৫ দেশ ৪০টি ক্রীড়ায় ৪৬৫ ইভেন্টে ৪৭২ স্বর্ণের জন্য লড়াই করেছে। অংশ নিয়েছে প্রায় ১০ হাজার এ্যাথলেট। সবচেয়ে ঐতিহাসিক ব্যাপার ছিল দীর্ঘদিন যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত দুই কোরিয়ার সম্মিলিত দল হিসেবে অংশ নেয়া। এখনও একটি স্বর্ণের লড়াই বাকি, আজ সমাপনী উৎসবের আগেই ট্রায়াথলনের ফয়সালা হয়ে যাবে। ব্যতিক্রমী বৃহদাকার মঞ্চে যেভাবে ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ফুটে তোলা হয়েছিল একইভাবে আজ সমাপনী উৎসব আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পর্দা নামবে এবারের আসরের। জাকার্তার গ্যালোরা বাং কারনো স্পোর্টস কমপ্লেক্সেই হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। বরাবরের মতো শ্রেষ্ঠত্ব নিয়েই শেষ করছে ১২৯ স্বর্ণ জেতা চীন, ৭২ সোনা জিতে তাদের পেছনে জাপান এবং স্বাগতিকরা ৩১ স্বর্ণ জিতে চার নম্বরে থেকে শেষ করছে। জমকালো এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান আয়োজনের মধ্যে দিয়ে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইডোডো এ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ঘোষণা করেছিলেন। প্যারেডে অংশ নিয়েছিল দুই কোরিয়া একই সঙ্গে। দীর্ঘ সময় পর সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া একই সঙ্গে এশিয়াডের উদ্বোধনে প্যারেড করেছিল এবং লাইটওয়েট রোয়িং, ড্রাগন বোট রেসিং ও বাস্কেটবলে সম্মিলিতভাবে অংশ নিয়েছে দেশ দুটি। বিশেষভাবে তৈরি করা ১২০ মিটার দৈর্ঘ্য, ৩০ মিটার প্রস্থ ও ২৬ মিটার উচ্চতার উদ্বোধনী মঞ্চটি পর্বত সদৃশ পটভূমি সবার দৃষ্টি কেড়ে নেয় আলোক উজ্জ্বলতায়। একই মঞ্চ থাকবে সমাপনী অনুষ্ঠানেও। এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে মঞ্চে উঠে গান পরিবেশন করবেন ইন্দোনেশিয়ার বিখ্যাত শিল্পীরা। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন- সুপার জুনিয়র, বিসিএল, ইসাইয়ানা স্বরাসভাতি, আইকন, আরএএন, ডেনাডা, গিগি, দিরা সুগান্দি, উইঙ্কি উইরিয়াওয়ান, জেএফলো, লিয়া সিমানজুনতাক, সিদ্ধার্থ স্লাথিয়া, সিতি বাদ্রিয়াহ, জেভিন জুলিয়ান, ব্যামস, আলফি রেভ, ইরফান স্যামসনস ও এডে গোবিন্দ। মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন দেশের দুই বিখ্যাত ব্যক্তি রোনাল্ড স্টিভেন ও এডি এমএস। একো সুপ্রিয়ান্তো ও ডেনি মালিক নৃত্যগীতের কোরিওগ্রাফার হিসেবে ছিলেন। নাচ-গানের ফাঁকে ফাঁকে থাকবে ইন্দোনেশিয়ার কৃষ্টি, সংস্কৃতির বিভিন্ন প্রদর্শনী, আতশবাজি এবং ডিজিটাল ডিসপ্লে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মতোই সমাপনী আয়োজনের সার্বিক তত্ত্বাবধান করেছেন নেট মিডিয়াতামা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী বিষ্ণুতামা। তিনি এ দুটি আয়োজনের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। গত ২৮ আগস্ট থেকেই এই সমাপনী অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে টিকেট ছাড়া হয়েছে আগ্রহী দর্শকদের জন্য। অলিম্পিকের পর এশিয়ান গেমসই বিশ্বের সর্ববৃহৎ বহুমাত্রিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এবার ইন্দোনেশিয়ায় এ গেমস আয়োজন নিয়ে ছিল সন্ত্রাসবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তা, পরিবেশ দূষণ নিয়ে ভাবনা এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে মাথাব্যথা। কারণ যে কোন আসর আয়োজনের ক্ষেত্রে অন্তত ৬ বছর সময় দেয়া হয় আয়োজকদের। কিন্তু ২০১৪ সালে হুট করে ভিয়েতনামের হ্যানয় নাম প্রত্যাহার করে নিলে জাকার্তা ও প্যালেমবাং আয়োজক হতে এগিয়ে আসে। এরপরও আয়োজনের বাজেট ২০১৫ সালে পেয়েছে আয়োজক কমিটি। অতীতে দক্ষিণ এশিয়ান গেমস আয়োজনে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছিল। তাই এবারের এশিয়ান গেমস নিয়ে বেশ শঙ্কাই দেখা দিয়েছিল। তবে সবকিছুকে পেছনে ফেলে প্রায় নির্বিঘেœই সফলতার সঙ্গে শেষ করতে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। গত ১৫ দিন ধরে চলা বিভিন্ন ক্রীড়া ইভেন্টে বরাবরের মতোই দাপট ছিল চীনের। এবার অবশ্য সাঁতারে একক আধিপত্য ধরে রাখতে পারেনি তারা। জাপানের সাঁতারুরা ভাগ বসিয়েছে তাদের শ্রেষ্ঠত্বে। এরপরও সার্বিকভাবে চীনের এ্যাথলেটরাই কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে। আজ শেষদিনে ট্রায়াথলনের মাত্র একটি স্বর্ণপদকের লড়াই। সেটার ফলাফল যাই হোক কারও অবস্থানের পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ১৫তম দিন পর্যন্ত চীন ১২৯ স্বর্ণসহ ২৮৩ পদক নিয়ে একক আধিপত্য নিয়েই শেষ করতে চলেছে। দুইয়ে থাকা জাপান মাত্র ৭২ স্বর্ণসহ ২০০ পদক জিতেছে। আর আয়োজক ইন্দোনেশিয়া বরাবরের তুলনায় এবার বেশ ভাল নৈপুণ্য দেখিয়ে ৩১স্বর্ণসহ ৯৮ পদক জিতেছে।
×