ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাইবার আক্রমণের ক্ষেত্রে বিবির প্রস্তুতি জানতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  সাইবার আক্রমণের ক্ষেত্রে বিবির প্রস্তুতি জানতে চেয়েছেন  অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ হ্যাকারদের নানামুখী অপতৎপরতায় সাইবার আক্রমণের ঝুঁকির মুখে পড়েছে দেশের ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। রিজার্ভ চুরির পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটারগুলোতে ম্যালওয়্যার স্থাপন করে হ্যাকাররা অনবরত তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। ঝুঁকিতে রয়েছে অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রম। সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা জানতে চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সূত্র মতে, সাইবার নিরাপত্তা ইস্যুতে সম্প্রতি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশ ব্যাংকের টিম গঠনে বিলম্ব হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি লিখেন। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আগস্টের মাঝামাঝি সময় ওই চিঠির ওপর নোট লিখে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবিরের কাছে এ বিষয়ে কি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। একইসঙ্গে সার্বিক বিষয়টিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিক্রিয়া কি সেটিও জানতে চাওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, চীন, জাপান, কাজাখস্তান ও রোমানিয়া এই চার দেশের হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটারগুলোতে ম্যালওয়্যার স্থাপন করে অনবরত তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। চিঠিতে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার বসিয়ে এভাবে তথ্য চুরির বিষয়টি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের স্থাপন করা সাইবার সেন্সরে ধরা পড়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে সতর্ক করা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজনীয় সাইবার সিকিউরিটি টিম না থাকার কারণে তথ্য চুরির ঘটনা বন্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। চিঠিতে মোস্তাফা জব্বার বলেন, সরকারী গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) কর্তৃক সাইবার নিরাপত্তা টিম গঠন করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাইবার সেন্সর স্থাপন করা হয়েছে। সেন্সর হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পরিলক্ষিত হয় যে, ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটারসমূহে সাইবার অপরাধীরা ম্যালওয়্যার স্থাপন করেছে যা ব্যবহারকারীর অগোচরে ব্যবহারকারীর পরিচয় ও পাসওয়ার্ড কাজাখস্তান, রোমানিয়া, জাপান ও চীনে চিহ্নিত সাইবার অপরাধীদের কাছে সংবেদনশীল তথ্য অনবরত প্রদান করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করা হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রয়োজনীয় সাইবার সিকিউরিটি টিম না থাকায় এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্বিত হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সাইবার নিরাপত্তা টিম গঠনসহ সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করছি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত মাসের শেষ দিকে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকতে নির্দেশ জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত একটি সতর্কবার্তা জারি করে দেশের সব বাণিজিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং গণমাধ্যমে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এক্ষেত্রে সাইবার অপরাধীরা পেমেন্ট সিস্টেমস হ্যাক করে দেশের ভেতরে এবং দেশের বাইরে থেকে এ অর্থ হাতিয়ে নেয়। উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশও এ ধরনের সাইবার সিকিউরিটি এবং হ্যাকিং সংক্রান্ত নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে। এই বাস্তবতায় সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণের ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থার নিরাপত্তা বাড়াতে হবে। প্রসঙ্গত, গত ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রাখা বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। তবে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে মার্চের শুরুতে। পরে ১৫ মার্চ এ ঘটনায় রাজধানীর মতিঝিল থানায় মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ ও তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) যাওয়া টাকার একটি বড় অংশ পরে ফিলিপাইনের একটি জুয়ার টেবিলে চলে যায়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার। শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে। চুরি হয়ে ফিলিপাইনে চলে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি ডলার ইতোমধ্যে ফেরত পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে বাকি প্রায় সাড়ে ৬ কোটি ডলার ফেরতের বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে নিউইয়র্কের একটি আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।
×