ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে ফখরুলের পাঁচ শর্ত

খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না উল্লেখ করে সরকারকে উদ্দেশ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র মুক্তির জন্য অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহার করে কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। তা না হলে এর সকল দায়দায়িত্ব আপনাদেরই নিতে হবে। শনিবার বিকেলে বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিরাট সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে তিনি ৫টি শর্ত পূরণের দাবি জানান। এগুলো হচ্ছে- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে এবং নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এর আগে সকালে শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন সরকারকে হটিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই বিএনপির কাছে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সমাবেশে সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, আর বিলম্ব নয়, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকে মুক্ত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। তাই আসুন বৃহত্তর ঐক্য করে এ সরকারকে পরাজিত করে গণতন্ত্রকে মুক্ত করি। তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ছাড়াও স্পর্শকাতর মামলার আসামি ও বিএনপি নেতা তারেক রহমান, আব্দুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, শিমুল বিশ্বাস, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আসলাম চৌধুরী ও মফিকুল হাসান তৃপ্তিসহ দলের সকল নেতার মামলা প্রত্যাহার এবং সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবি করেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষ আর আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে পারবে না। তাই তারা ইভিএম মেশিনে ভোট নিয়ে তারা রক্ষা পেতে চায়। কিন্তু ইভিএমও তাদের রক্ষা করতে পারবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী গুম হয়েছে, খুন হয়েছে। তাদের রক্ত ছুঁয়ে শপথ করতে হবে আমরা দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করবই। বিএনপির সিনিয়র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়িয়ে সাজা দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এই ষড়যন্ত্র দেশের মানুষ মেনে নেবে না। তিনি বলেন, বিএনপি একটি জনপ্রিয় দল। তাই দলের আজকের জনসমুদ্র প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ আবার জেগে উঠেছে। ফখরুল বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আজ নির্জন কারাগারে। বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্যই খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। তিনি খুবই অসুস্থ। আমরা বার বার বলার পরও তাঁকে উন্নত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। তাই বুকে বল নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা খালেদা জিয়াকে আর কারাগারে দেখতে চাই না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন একটি দেউলিয়া রাজনৈতিক দল। তাই বিএনপি, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ভীতিতে তাদের ঘুম হয় না। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। এ ছাড়া লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। সরকার ইভিএম মেশিনে ভোট নিক আর যাই করুক ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন আর দেশের মানুষ হতে দেবে না। বিএনপি ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এরশাদের সময় এবং ওয়ান-ইলেভেনের সময় বিএনপি ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র হয়েছিল কিন্তু তা সফল হয়নি। তাই এ সরকারের আমলেও বিএনপি ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র সফল হবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকারের কলাকৌশলের কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তি হয়নি। আইনী লড়াইয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না, আন্দোলন করেই তাকে মুক্ত করতে হবে। জাতীয় ঐক্যের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, সকলে মিলে এ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। তিনি বলেন, ঈদের আগে ও পরে অর্থাৎ ১৬ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬৯ জন নিহত ও ৯৬০ জন আহত হয়েছে। প্রতিদিন ২০ জন করে মানুষ নিহত হয়েছে। এর দায় নিয়ে সড়ক পরিবহন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের ৯০ দিন আগে সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, বরকতউল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, জয়নাল আবদিন, ডাঃ জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, মসিউর রহমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুইয়া, আতাউর রহমান ঢালী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ। জিয়ার মাজারে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের দিনে আমাদের শপথ হবে দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে দলের কারাবন্দী চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। আজ আমাদের কোন উৎসবের দিন নয়, ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করছি। কারণ আমাদের দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কারাগারে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও মিথ্যা মামলায় নির্বাসিত। তাদেরকে ছাড়াই আমরা আজ এখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছি। আওয়ামী লীগ সরকারকে ফ্যাসিস্ট সরকার বলে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এরা গণতন্ত্র বিরোধী ও সমাজ বিরোধী সরকার। যারা দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক সব অধিকার কেড়ে নিয়েছে। রাষ্ট্রের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। এই সরকার জবরদস্তিমূলকভাবে ক্ষমতায় বসে মানুষের সকল অধিকার হরণ করেছে। তাই আজকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমাদের শপথ এই সরকারকে অপসারণ করা। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আমাদের যে সংগ্রাম তা অব্যাহত থাকবে। জিয়ার মাজারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আযম খান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, তৈমুর আলম খন্দকার, ফরহাদ হালীম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব খাইরুল কবির খোকন, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান প্রমুখ।
×