ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির প্রতি কোন আস্থা নেই জনগণের ॥ কাদের

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  বিএনপির প্রতি কোন আস্থা নেই জনগণের ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপির প্রতি দেশের জনগনের কোন আস্থা নেই জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির কাছে তিন প্রশ্নের জবাব জানতে চেয়েছেন। শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদকম-লীর এক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রতি এই তিনটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির কাছে আমি তিনটি প্রশ্নের জবাব চাই। আমার প্রথম প্রশ্নটা হচ্ছে- ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হত্যাকারীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে ইনডেমনিটির কুখ্যাত অধ্যাদেশ জারি এবং এরপর এই অধ্যাদেশকে ৫ম সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কি ব্যাখ্যা জাতির সামনে আছে বিএনপির ? এটা আমি জানতে চাই। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এর ব্যাখ্যা আমি জানতে চাই। অধ্যাদেশে খুনীদের রক্ষা করতে আবার সেটাকে আইনী স্বীকৃতি দিতে আমাদের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হলো কোন যুক্তিতে এবং কেন? আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে- বিনা পয়সায় সাবমেরিন ক্যাবল প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে দেশকে পিছিয়ে দেয়ার যে কাজটি তারা করেছেন এর ব্যাখ্যা এবং তৃতীয় প্রশ্ন হচ্ছে- তড়িঘড়ি করে বেগম খালেদা জিয়ার রায়ের আট দিন আগে বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে কেন ৭ ধারা বাতিল করে দেয়া হয়েছে ? এর ব্যাখ্যা বিএনপির কাছ থেকে আমরা জানতে চাই। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বিএনপি বর্তমান সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছে? এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রথম বিষয়টি সংবিধান সম্মত নয়। আর দ্বিতীয় বিষয়টি আইনী বিষয়। তারা যদি মামলা মোকাবেলা করে আইনী প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আনতে পারে, ওয়েলকাম। সরকার যদি বাধা দিত, সরকার যদি বিচার বিভাগকে কোন প্রকারে প্রভাবিত করতে চাইত, তাইলে বেগম জিয়া এতগুলো মামলা থেকে জামিন পেত না। প্রায় ৩০টি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন, সরকার যদি হস্তক্ষেপ করত তাহলে কিভাবে এসব মামলা থেকে জামিন পেল? আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি সরকারের পক্ষ থেকে মামলার বিষয়ে, বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে আইনীভাবে কোন প্রকার বাধা, কোন প্রকার হস্তক্ষেপ হবে না। আইনী প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়- ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের এমন বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রশ্ন রেখে বলেন, মওদুদ আহমেদের কাছ থেকে আইনী প্রক্রিয়া শিখতে হবে? তিনি এমনও বলেছেন সংবিধানের বাইরে গিয়েও নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যায়। তারা যেসব দাবি সংবিধান বাইরে গিয়ে মেনে নেয়ার দাবি করেছেন। যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে, আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় আসে-এটা তাদের পক্ষেই বলা সম্ভব। মওদুদ সাহেব নিজেই আইন লঙ্ঘন করেন, তিনি মৃত ব্যক্তির নামে ভুয়া সার্টিফিকেট আদালতে জমা দিয়ে ৪০ বছরের দখল করা বাড়িটা রক্ষা করতে পারেননি। যিনি অপচেষ্টার দালাল। তার পক্ষের এ ধরনের দাবি আমরা সেভাবে নিচ্ছি না। খালেদা জিয়াকে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করা হবে- বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজপথে সরকারে দশ বছর হয়ে গেল। এই দশ বছরের বারে বারে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, সবই সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক ছোটখাটো আন্দোলনের ডাক নয়। বেগম খালেদা জিয়াও সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে কী হয়েছে তা দেশের মানুষ সবই দেখেছে। দশ বছরে একটা দিনও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার মতো কোন আন্দোলন বিএনপি নামক বিরোধী দল করতে পারেনি। আমরা চাপ অনুভব করেছি এমন কোন আন্দোলন বিএনপি করতে পারেনি। আসলে বাংলাদেশের ইতিহাসে এত ব্যর্থ অপজিশন, এত ব্যর্থ রাজপথের বিরোধী দল বাংলাদেশে আসেনি। এই ব্যর্থতার জন্য বিএনপির ‘টপ টু বটম’ সকল নেতার পদত্যাগ করা উচিত। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ফখরুল ইসলাম, মওদুদ আহমদ, খন্দকার মোশাররফ সাহেবরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাইক দিয়ে কয়েকজনকে নিয়ে আওয়াজ দিলেই কি সরকার হটে যাবে? এই সরকারের গণভিত খুবই শক্তিশালী, এই সরকারের গণভিত বাংলাদেশের মাটির অনেক গভীরে প্রথিত। আমাদের শিকড় অনেক গভীরে আমরা হঠাৎ করে এসে জনসমর্থহীনভাবে সরকারে আসিনি। এটা যেন তারা ভুলে না যায়। জনগনের রায়ের ওপর আস্থা নেই বলে সরকার ইভিএমে নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে- বিএনপির এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইভিএম আমাদের নতুন কোন দাবি নয়। সারা দুনিয়ায় আধুনিক স্বচ্ছ এবং স্বল্প সময়ে ভোট প্রদান গণনা এবং ফলাফল। এটা সর্বশেষ প্রযুক্তি। তিনি বলেন, বিএনপির ভয় হচ্ছে ইভিএমে ভোট হলে বিএনপি আর কেন্দ্র দখলের পুরোনো অভিযোগ আনতে পারবে না, ভোট জালিয়াতির কথা বলতে পারবে না। ভোট কারচুপির কথা বলতে পারবে না। বিএনপি আর পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার পুরোনো অভিযোগ আনতে পারবে না। এ কারণেই বিএনপি ইভিএম চায় না। শরিকদের ৭০ আসন দেবে আ’লীগ ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জাতীয় নির্বাচনের প্র্রস্তুতি আমরা নিতে শুরু করেছি। এ মাসেই আমাদের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করব। জোট নিয়েও আমরা পরোক্ষভাবে আলাপ-আলোচনা করেছি। যারা আমাদের এতদিনের শরিক তাদের বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। অনেকে আসতে চাচ্ছে তাদের সঙ্গেও আমরা কথাবার্তা বলতে শুরু করেছি। তিনি বলেন, আমাদের জোটে আলাপ আলোচনা চলছে, এ মাসের শেষ দিকে ফাইনাল সেপ দিবে। বেশিদূর গেলে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত যেতে পারে। আমাদের জোটের জন্য ৬৫ থেকে ৭০ সিট ছেড়ে দেয়ার চিন্তাভাবনা আছে। এখানেও কথা আছে এটা কোন বাইন্ডিং বিষয় না। ভাল প্রার্থী হলে আমরা এক্সসেপ্ট করব। উইনেবল প্রার্থীকে আমরা মনোনয়ন দিব। এলায়েন্সের যে কোন দলেরই হোক আমরা তাদের এক্সসেপ্ট করব, প্রার্থী উইনেবল হলে আমরা মনোনয়ন দিব। তিনি বলেন, দেশের সর্বশেষ অবস্থা এবং আমাদের সংগঠনের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে সম্পাদকম-লীর সভায় আলাপ আলোচনা করেছি। জেলা পর্যায়ে তৃণমূলে আমাদের পার্টির অবস্থা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সামনে ট্রেনে করে উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মণি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একেএম এনামুল হক শামীম, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
×