ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গোলটেবিলে আলোচনায় নসরুল হামিদ

অপরিকল্পিত শিল্প নগরে আর গ্যাস বিদ্যুত নয়

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 অপরিকল্পিত শিল্প নগরে আর গ্যাস বিদ্যুত নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অপরিকল্পিত শিল্পে এবং নগরে আর বিদ্যুত এবং গ্যাস দেবে না সরকার। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ শনিবার রাজধানীতে এক গোল টেবিল আলোচনায় এ কথা জানান। তিনি বলেন, শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের ক্ষেত্রে অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সে কারণে ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট শিল্পাঞ্চল ছাড়া অন্য কোথাও স্থাপিত শিল্পে বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আমরা জানি না কোথায় কি হতে যাচ্ছে। অনেকে কম দামে জমি কিনে গ্রামে শিল্প স্থাপন করছেন। এটাও ভেবে দেখার সময় এসেছে নির্দিষ্ট জোনে ছাড়া শিল্পে বিদ্যুত এবং গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে কি না। ইংরেজী দৈনিক ডেইলি সান আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত বিদ্যুত সরবরাহকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ২০২১ সালে সবার ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হবে। সেই লক্ষ্যমাত্রার অনেক কাছে পৌঁছে গেছি আমরা। এখন ৯২ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় চলে এসেছে। আশা করছি ঘোষিত সময়ের আগেই সবার ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে যাবে। তিনি বলেন, পিক আওয়ার (সর্বোচ্চ চাহিদার সময়) ও অফ-পিক আওয়ারে (নি¤œ চাহিদার সময়) বিদ্যুতের চাহিদার ব্যবধান অনেক বেশি। বিদেশে পিক আওয়ারে অর্থাৎ সন্ধ্যা ৬ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিদ্যুত ব্যবহার কম। সেখানে সন্ধ্যার পর শপিংমল বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সন্ধ্যার পর বিদ্যুত চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এ ব্যবধান ম্যানেজ করা খুবই জটিল। বাংলাদেশে অফিস টাইম এগিয়ে আনা যায় কি না সেটা ভেবে দেখার সময় হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ডেইলি সানের সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিদ্যুত বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। অন্যদের মধ্যে অংশ নেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) মঈন উদ্দিন, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম, ও অধ্যাপক ইজাজ হোসেন, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া, বিজিএমইএ’র সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান, সামিট পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল ওয়াহেদ প্রমুখ। বিদ্যুত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, বিদ্যুত ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনে আমরা অনেক এগিয়ে আছি এ কথা বলতে পারি। এক সময় বলা হতো কুইক রেন্টাল দেশকে দেউলিয়া করবে। কিন্তু না তেমন কিছুই হয়নি। দেশ বরং এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, রংপুর-রাজশাহী অঞ্চলে একটি বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ থাকায় কিছুটা লোডশেডিং হচ্ছে। তবে দেশের অন্য কোথাও লোডশেডিং নেই। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, এক সময় ৮৫ শতাংশ বিদ্যুত উৎপাদন হতো গ্যাসে। এখন মাত্র ৪৯ শতাংশ গ্যাসে উৎপাদন হচ্ছে। এখন এলএনজি আনা হচ্ছে। এতে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে। এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৬ টাকার মতো, তবে তিন-চার বছরের মধ্যে এটা ৮ টাকায় চলে যাবে। এটা কিভাবে সামাল দেয়া যাবে এখনই ভাবা দরকার। ম. তামিম বলেন, খারাপ আবহওয়ার কারণে অনেক সময়ে ভাসমান এলএনজি স্টেশন থেকে সরবরাহ বিঘিœত হতে পারে। সে কারণে অবশ্যই স্থায়ী এলএনজি স্টেশনের দিকে যেতে হবে। না হলে ঝুঁকি থেকেই যাবে। বড় বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় দক্ষ প্রকৌশলী রেডি হচ্ছে না বলেও মনে করেন ম. তামিম। অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, আমরা মেগাওয়াট গেমে অনেক সফল। এখন গেমস শিফট করতে হবে। এখানে অনেক ঘাটতি রয়েছে। লোডশেডিং হচ্ছে কিন্তু সেটা স্বীকার করা হয় না। মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ২০২১ সালের জন্য যে লক্ষ্য ঘোষণা করা হয়েছে তার অনেক কাছে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। এখন ২০৪১ সালের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। ২০৪১ সালে ৪৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হলেও ৬০ হাজারের লক্ষ্যে নিয়ে কাজ চলছে। তিনি বলেন, এর জন্য প্রায় ৮২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। আমরা মনে করছি এটা পারব। আমাদের এখন চ্যালেঞ্জ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন। আমরা সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। এতে কিছুটা সময় লাগছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন বলেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ৯০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুত বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে। ২০১৯ সালের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নে বাংলাদেশ সক্ষম হবে বলে আশা করেন তিনি।
×