ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৪ দলের বৈঠক শেষে প্রেসব্রিফিংয়ে নাসিম

জুডিসিয়াল ক্যু করতে ব্যর্থ হয়ে মুখচেনা মহলের নতুন চক্রান্ত

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 জুডিসিয়াল ক্যু করতে ব্যর্থ হয়ে মুখচেনা মহলের নতুন চক্রান্ত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জুডিসিয়াল ক্যুতে ব্যর্থ হয়ে যুক্তফ্রন্টের নামে কিছু নেতা আগামী নির্বাচনকে ঘিরে নতুন চক্রান্ত শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, একজন বিশিষ্ট আইনজীবী রয়েছেন যিনি একজন সাবেক প্রধান বিচারপতিকে ব্যবহার করে জুডিসিয়াল ক্যু করে পাকিস্তানের মতো অবস্থা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তার কারণে, ১৪ দলের নেতৃবৃন্দের দৃঢ়তার কারণে ওই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন চক্রান্ত শুরু হয়েছে, কীভাবে এই নির্বাচনকে প্রতিহত করা যায়। শনিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ের পাশে নতুন ভবনে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের এক বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংকালে মোহাম্মদ নাসিম আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে যে, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচনী কর্মকা- সারাদেশে শুরু হয়ে গেছে। যেহেতু সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে আগামী ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে। সে কারণেই নির্বাচন নিয়ে মানুষের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে, দলের প্রস্তুতিও আছে। তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন আসে, ভোটের মাধ্যমে জনগণের রায় নেয়ার সময় আসে, তখনই একটি অশুভ মুখচেনা মহল অশুভ তৎপরতা শুরু করে দেয়। নির্বাচন করা জনগণের অধিকার, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাও একটি রাজনৈতিক দলের অধিকার। জনগণের রায়কে আমরা সকলেই হাসিমুখে বরণ করে নেব। এটাই হচ্ছে চিরাচরিত নিয়ম। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখনো এই অশুভ মহলটি জ্বালাও-পোড়াও করে দেশে একটি অসাংবিধানিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল। তখনও আমরা ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে সেই অশুভ শক্তি মোকাবেলা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনকে আমরা সহায়তা করেছিলাম। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে যখন নির্বাচন প্রায় ঘরের দুয়ারে কড়া নাড়ছে, জনগণ যখন উন্মুখ হয়ে আছে তাদের রায় দেয়ার জন্য একটি নির্বাচিত সরকারের পক্ষে, তখন আবার সেই মুখচেনা মহলটি মাঠে নেমে গেছে। নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করলে আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাব। কিন্তু নির্বাচনের সময় আসলেই যেন কিছু অবান্তর, অসাংবিধানিক প্রশ্ন তারা সামনে তুলে আনে। সারা দুনিয়ায় এখন নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে। তাই আমরা মনে করি, জনগণের রায় দেয়ার যেমন অধিকার আছে, তেমনি তথ্যপ্রযুক্তির যুগে নির্বাচনকে কোনভাবেই প্রভাবিত করার সুযোগ নেই। সে ব্যাপারে দেশবাসী যেমন সজাগ, তেমনি আমাদের সংবাদ মাধ্যমও সজাগ। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দৌজা চৌধুরী ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনসহ কয়েকজনের নতুন জোট গঠন প্রসঙ্গে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে আজকে ফ্রন্ট হচ্ছে, কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু আমরা তো অনেককে চিনি। অত্যন্ত ঘৃণার সঙ্গে বলতে হয়, অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে বলতে হয়, যারা কিছুদিন আগেও এখানে জুডিসিয়াল ক্যু করার চেষ্টা করেছিলেন এখানে। এটা আজকে প্রকাশিত হয়ে গেছে। ১৪ দলের মুখপাত্র আরও বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর জন্য বলা হচ্ছে আমাদের এ দাবি মানতে হবে। এ ধরনের অযৌক্তিক দাবি কেউ মানবে না। কোন অর্থহীন সংলাপের পক্ষে ১৪ দল নয়। সংলাপের মানে হচ্ছে এই নির্বাচনকে পিছিয়ে দেয়া, দীর্ঘায়িত করার একটা চক্রান্ত। এই সংলাপের অর্থই হলো দেশে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যে পরিস্থিতির মাধ্যমে দেশে একটা অসাংবিধানিক সরকার যেন প্রতিষ্ঠা করা যায়। এ জন্যই সংলাপের কথা বলা হয়। এর সঙ্গে ১৪ দল একমত নয়, ১৪ দল ছাড় দেয়ার পক্ষেও নয়। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করবে। নির্বাচন কমিশন তার নীতি অনুযায়ী সবাইকে সমান সুযোগ দেবে আমরা সেটা বিশ্বাস করি। বর্তমান সরকারের অধীনেই সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর কোন ব্যত্যয় ঘটার সুযোগ নেই। সংবিধানের বাইরেও নির্বাচন করা যেতে পারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে যারা কথা বলে তাদের মনের অভিসন্ধি কি তা আপনারা বুঝতে পারেন। একটি খেলা যখন হবে, খেলার কিছু বিধিবদ্ধ নিয়ম-কানুন আছে। সেই নিয়ম তো আর কথায় কথায় পরিবর্তন করা যাবে না। খেলায় জিততে হলে যে কোনভাবে নিয়ম পরিবর্তন করে খেলায় অংশগ্রহণ করতে হবে- এটা হতে পারে না। সুবিধা অনুযায়ী খেলার নিয়ম পরিবর্তন করতে পারবেন না। ১৪ দলের পক্ষ থেকে দৃঢ়কণ্ঠে তিনি বলেন, আমরা বলতে চাই, সংবিধান বিরোধী কোন কাজ বাংলাদেশে হবে না। সংবিধান বিরোধী কোন কাজ আমরা ১৪ দল মেনে নেব না। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে ১৪ দল জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচন আমরা সবাই চাই। আমরা আন্তরিকভাবে চাই সব দল অংশগ্রহণ করুক। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জনগণের রায় মেনে নিক। ১৮ তারিখ থেকে মাঠে নামবে চৌদ্দ দল ॥ নির্বাচন নিয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে চলতি মাসের ১৮ তারিখ থেকে চৌদ্দ দল মাঠে নামবে জানিয়ে জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এ ধরনের মুখচেনা মহলকে আমরা জানি, এরা চক্রান্ত শুরু করেছে। আমরা বিশ্বাস করি এ ধরনের চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ আছে থাকবে। তিনি বলেন, ১৪ দল সজাগ রয়েছে। আমরা অনুরোধ করব দেশবাসীকে আগামী নির্বাচন ফলপ্রসূ করার জন্য আপনারা সজাগ থাকবেন। তিনি জানান, এই লক্ষ্যে সেপ্টেম্বর মাসের ১৮ তারিখ থেকে মাঠে নামব। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে বিভাগীয় সমাবেশ করব। এই সমাবেশ সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর আমরা যার যার মতো নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ব। আমাদের সামনে একটাই কাজ, একাত্তরের ঘাতক, ’৭৫-এর খুনীদের পরাজিত করা। মাঠে-ময়দানে এবং নির্বাচনের মাঠে পরাজিত করা। আর নির্বাচন ঠেকানোর ক্ষমতা কারো নেই। জাতীয় পার্টি জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের সভায় উপস্থিত ছিলেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাসদ একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, অপর সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান, ন্যাপের ইসমাইল হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডাঃ অসীত বরণ রায়, গণআজাদী লীগের মুহাম্মদ আতাউল্লাহ খান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
×