ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অপরাধ আতঙ্কে বিনিদ্র রাত মহিপুরবাসীর

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

অপরাধ আতঙ্কে বিনিদ্র  রাত মহিপুরবাসীর

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী, ১ সেপ্টেম্বর ॥ চরম আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটাসহ মহিপুর থানার মানুষ। সন্ধ্যা হলেই শিশু ও নারীরা ধর্ষণ এবং সম্ভ্রম হারানোর ভয়ে রাত কাটায়। এমন শঙ্কায় তাদের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত দু’মাসে শিশু ধর্ষণ, হত্যা, লুণ্ঠন এবং নির্যাতনের পৃথক ঘটনায় ওই এলাকার মানুষের মনে এমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং জনপ্রতিনিধিরা আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক বিপর্যয় দেখলেও সংশ্লিষ্ট মহিপুর থানার ওসি বলছেন, ‘এসবই গুজব’। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টানা কয়েকদিন ধরে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা। এমনকি এলাকার লোকজন এ ঘটনায় এক শ্রেণীর বহিরাগত, বেকার জেলে শ্রমিকদের জড়িতের সন্দেহ পোষণ করে আসছেন। চুরির সঙ্গে এমন সব ঘটনায় মানুষ পুলিশের প্রতি এক ধরনের আস্থাহীনতা পোষণ করে আসছে। গত ১৪ আগস্ট রাতে মহিপুর থানার কাছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ইভার মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে ঘরের মধ্যে একদল দুর্বৃত্ত ধর্ষণ করে। শিশুটির স্পর্শকাতর অঙ্গ থেকে প্রচুর রক্ত ক্ষরণে হাসপাতালে নেয়ার আগেই মারা যায়। এ ঘটনার পর থেকে পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে। ইভা হত্যার পর ইভার মা সালমা বেগম ও কাওছার নামে দুই জনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ড নিয়ে পুলিশ তেমন কোন হত্যার তথ্য পায়নি বলে জানান ওসি। জানা গেছে, গত ১০ জুলাই মহিপুর থানার লতাচাপলি ইউনিয়নে মম্বিপাড়া গ্রামের পল্লী চিকিৎসক নারায়নের বাড়িতে ডাকাতি হয়। এ সময় নারায়নের বৃদ্ধা মাকে নির্যাতনের একপর্যায়ে তার পা ভেঙ্গে দেয়া হয়। মহিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা আমলে নেয়নি। নারায়নের বৃদ্ধা মা কুসুম রানীর ভাষ্য মতে, ডাকাতির ঘটনায় জড়িত একজনের নাম পুলিশের কাছে বলা হলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। পরে মাঠে পর্যায়ে অবস্থানরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাফুজুর রহমানকে অবহিত করায় ২১ আগস্ট এসলাম নামে এক জনকে আটক করে জেলে পাঠায় এবং ওই দিনই একটি মামলা রেকর্ড হয়। গত ২৬ জুলাই রাতে কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন এলজিইডির গেস্ট হাউসের কেয়ারটেকারের বসতঘরে হানা দেয় দুর্বৃত্তরা। কেয়ারটেকার মোশারেফকে বেঁধে মারধর করে লুটপাট চালায় তার ঘরে। ২৭ জুলাই রাতে কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সামনে জলিল মীরের স্ত্রীর মুখে কাপড় বেঁধে লুণ্ঠনের প্রস্তুতি নিলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তদের হানা থেকে রক্ষা পায়। এছাড়াও চুরি হয় লতাচাপলী সঃ প্রাঃ বিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরা। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাজমুস সাকিব খান কনা’র বাসায়ও চুরি হয়। কনা জানান, থানায় জানালে উল্টো পুলিশের ধমক খেয়ে আইনী সহায়তার জন্য আর পুলিশের কাছে যাননি। এছাড়া, ১১ জুলাই থেকে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে কুয়াকাটা নবীনপুরে রেদওয়ান রাসেল, কুয়াকাটা সদর রোডের শাহনেওয়াজের ফার্মেসি, পাঞ্জুপাড়ার মজিবর হাওলাদারের বাসা, একই এলাকার জামাল হোসেন, পৌরগোজার গফুর খান এবং কুয়াকাটার নেছার, মম্বিপাড়ার সুকেশ, সুকদেব, প্রিয়নাথের বাড়িতে চুরি হয়। সেই সঙ্গে নয়া মিস্ত্রিপাড়ায় মালেকের বাড়িতে রাতে দুর্বৃত্তরা হানা দিলে তার স্ত্রী নুরজাহানের চিৎকারে দুর্বৃত্তরা পালায়। সবশেষ ধর্ষণ শেষে শিশু হত্যার একদিন পর সেরাজপুরের একই গ্রামের বেল্লাল আকনের বাড়িতে রাতে সিঁদ কেটে ঘরে ঢুকে দুর্বৃত্তরা সর্বস্ব লুটে নেয়। ওই গ্রামের তিন-চার বাড়ির লোক সংঘবদ্ধ হয়ে নারী ও শিশুদের পাহারা দিতে হয়। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, পরিবার নিয়ে ভাবছি বন্দরে যাব, এখানে থাকলেও প্রাণহানিসহ নানা দুর্ঘটনায় কবলে পড়তে হবে। এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন সাধনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে টানা কয়েকদিন মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন পটুয়াখালীর জেলা পুলিশ। গত ১৯ আগস্ট ওই এলাকায় দুই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে দেখা গেছে। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদ্বয় জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। ওসি মিজানের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর নানা অভিযোগ-এমন প্রশ্নে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাফুজুর রহমান বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর মহিপুর থানার মিজানুর রহমানকে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
×