ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল বাংলাদেশ ॥ নতুন প্রেক্ষিত প্রস্তাবনা

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ডিজিটাল বাংলাদেশ ॥ নতুন প্রেক্ষিত প্রস্তাবনা

এটি আমাদের সকলেরই জানা যে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন। ২০২১ সাল হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঠিকানা। তবে একুশের জন্য অপেক্ষা না করে ২০১৮ সালেই সেই সময়সীমার বাইরে ভাবতে হচ্ছে। সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভেবেছেন। তার ঘোষণা অনুসারে ১৪ সালের নির্বাচনের ইশতেহারে ৪১ সালে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কথাও আমাদের স্মরণ রাখতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ছিল আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের অংশ। ২০০৮ সালের নির্বাচনটি ২০০৬ সালে হওয়ার কথা ছিল বলে নির্বাচনী ইশতেহারটির কাঠামো ২০০৬ এর আগেই তৈরি হয়েছিল। তবে আরও স্পষ্ট করে বললে, এটি বলতেই হবে যে, ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর জননেত্রী শেখ হাসিনা তার দলের নির্বাচনী ইশতেহারে রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা করার অংশ হিসেবেই ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করেন। রূপকল্প ঘোষণার বিষয়টি ২০০৬ এর পরে ২০০৮ এর আগে বিকশিত হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ শব্দটি প্রয়োগ করে এর ধারণা নিয়ে আমার নিজের লেখা প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালের স্বাধীনতা দিবসে দৈনিক করতোয়া, ২০০৭ এর এপ্রিল সংখ্যা কম্পিউটার জগত পত্রিকা এবং ২০০৮ এর ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত সাতক্ষীরা কম্পিউটার সমিতির স্মরণিকাসহ অনেক প্রকাশনায়। এটিও খুব স্পষ্ট করে বলা দরকার যে, শেখ হাসিনার আগে দুনিয়ার কোন দেশ তার নামের আগে বা পরে ডিজিটাল শব্দ ব্যবহার করেনি। ব্রিটেন ২৯ জানিুয়ারি ২০০৯ এবং ভারত ১৫ আগস্ট ২০১৪ সালে তাদের নামের সঙ্গে ডিজিটাল শব্দ যোগ করে। এখন কার্যত বিশ্ববাসী সকলেই মানবসভ্যতার ডিজিটাল বিপ্লবের বিষয়টি উপলব্ধি করছে। বাংলাদেশের জন্য রূপকল্প ২০২১ ঘোষণার সময়ের প্রেক্ষিতটাও আমাদের জানা দরকার। ২১ সালে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করবে বলেই রূপকল্প ২০২১ নির্ধারণ করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছরকে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সঙ্গে যুক্ত করেছি বলে আমাদের সার্বিক স্বপ্নটি ২০২০-২১ সালকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। সেই সময় অবধি আমাদের যাত্রাপথও আমরা চিহ্নিত করেছি। সেই পথচলা আমাদের অব্যাহত রয়েছে। তবে এখন সময় হয়েছে একুশ সালের পরের ভাবনাও ভাববার। বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে বিশ্বসভ্যতার আগামীর আকাক্সক্ষা, প্রযুক্তির অসাধারণ অগ্রগতি ও বিকাশ এবং সামগ্রিকভাবে মানব সভ্যতার ডিজিটাল রূপান্তর আমাদের সামগ্রিক প্রেক্ষিতটাই নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। আমার নিজের কাছে মহাশক্তিধর বা সার্বিক রূপান্তরের প্রাথমিক ও ভিত্তি প্রযুক্তি হিসেবে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তি বা ৫জিকে মনে হচ্ছে। ৫জির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে রবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বিগ ডাটা, আইওটিসহ অন্যান্য দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তি। ডিজিটাল বাংলাদেশের নতুন প্রেক্ষিত প্রস্তাবনা- ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচী বাস্তবায়নে তার সরকারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নিয়ে কাজ করতে নিয়োজিত করেন। এমনকি তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে তিনি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা দায়িত্ব প্রদান করেন, যিনি বস্তুত সরকারের এসব কর্মযজ্ঞে অসাধারণ নেতৃত্ব প্রদান করে আসছেন। তার প্রজ্ঞা, মেধা, দূরদর্শিতা ও সৃজনশীলতা দেশের ডিজিটাল রূপান্তরে ব্যাপকভাবে কাজে লাগছে। নীতি নির্ধারণ থেকে বাস্তবে প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে তিনি অনন্য নেতৃত্ব প্রদান করে যাচ্ছেন। এই সময়কালে সরকার ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সফলতা অর্জন করে চলেছে। এরই মাঝে ২০১৪ সালে আরও একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই সময়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও একটি নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে বাংলাদেশের অগ্রগতির লক্ষ্যকে ২০৪১ সাল অবধি সম্প্রসারিত করেন। আমি আগেই বলেছি, তখন তিনি দেশটিকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণাও প্রদান করেন। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি একটি সফল শাসনকাল অতিক্রম করছেন। ২০১৮ সালেই আরও একটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে এদেশে। বদলে যাওয়া প্রেক্ষিত, নতুন প্রযুক্তি, নতুন বিশ্বব্যবস্থা তথা সার্বিক বিবেচনায় আমার নিজের কাছে মনে হচ্ছে যে, এবার বাংলাদেশকে তার নিজের ভাবনাগুলোকে আরও অগ্রসর করতে হবে। ২০১৮ সালে বসে আমরা কেবল জ্ঞানভিত্তিক সমাজ, ডিজিটাল ইকোনমি, শিল্প বিপ্লব ৪.০, জাপানী সমাজ ৫.০, থাইল্যান্ড ৪.০, ডিজিটাল শিল্প বিপ্লব বা সৃজনশীল অর্থনীতি ইত্যাদির মাঝেই সীমিত থাকতে পারিনা। বস্তুত আমাদের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভাবনাটি আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। আমি মনে করি আমাদের এখন সময় হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ এর একুশ পরবর্তী ভাবনাগুলোকেও সমন্বিত করা। আমি দুঃসাহসের সঙ্গেই এটি বলতে পারি যে, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা আমাদের বিশ্বসভ্যতার অগ্রসরতম ভাবনার নেতৃত্বের স্থান দিয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এর লক্ষ্যের দিক থেকে এটি একেবারেই নতুন কোন বক্তব্য নয়। বরং ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার সময় যে প্রত্যয় বা মূল লক্ষ্য আমাদের ছিল এখনও সেটিই আছে। আমাদের এই ঘোষণাটির স্বপ্ন হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা। সোনার বাংলার সংজ্ঞা যদি খুঁজতে যান তবে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশের কথা ভাবতে হবে। মনে রাখা দরকার, শেখ হাসিনা এরই মাঝে ২০৪১ সালের লক্ষ্যের কথাও ঘোষণা করেছেন। লক্ষণীয় বিষয় যে সারা দুনিয়া এখন তো আর ২০০৮ সালে নেই। আমরা তখন আমাদের লক্ষ্য অর্জনে যেসব প্রযুক্তির কথা বলেছিলাম তা ডিজিটাল হলেও বিগত এক দশকে আমরা এমনসব প্রযুক্তির মুখোমুখি হয়েছি যার কথা যদি বিবেচনায় না নেয়া হয়। তবে আমরা গন্তব্যে পৌঁছানোর যথাযথ পথটি খুঁজে পাব না বা উপযুক্ত হাতিয়ারও ব্যবহার করতে পারব না। আমাদের এটিও ভাবতে হচ্ছে যে, ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রচলিত ধারাটিও বিলীন হতে চলেছে। বিশ্ব সভ্যতার ক্রমরূপান্তরের ক্ষেত্রে আমরা এমনটি জেনেছি যে, মানুষ আগুনের যুগ বা পাথরের যুগের মতো আদিযুগ অতিক্রম করে কৃষি যুগে পা ফেলে। আদিযুগে মানুষ প্রধানত প্রকৃতিনির্ভর ছিল। প্রকৃতিকে মোকাবেলা করত সে এবং প্রকৃতিকে নির্ভর করেই তার জীবন যাপিত হতো। বস্তুত কৃষি যুগ ছিল মানুষের সৃজনশীলতার প্রথম ধাপ যখন সে উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। সে জ্ঞান অর্জন করে কেমন করে বীজ বপন করতে হয়, তার থেকে চারা ও বৃক্ষ হয় এবং সেই বৃক্ষের ফল সে নিজে খাবার জন্য ব্যবহার করতে পারে। দিনে দিনে সে এমনসব প্রযুক্তি আয়ত্ত করে। গাছে পানি দিলে বৃক্ষটি বেঁচে থাকে, সার দিলে সে বেড়ে ওঠে ইত্যাদি; তার শেখা হয়। সে শিখে, মাটি কর্ষণ করলে ফসলের ফলন বাড়ে। সেচ আর সার দিলে ফলন আরও বাড়ে। দিনে দিনে সে ফসলের বৈচিত্র্য আনতে পারে এবং তার কৃষিজ্ঞানের নিরন্তর বিকাশ ঘটে। এরপর অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে যান্ত্রিক যুগ বা শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়। সেটিকে এখন সবাই শিল্প বিপ্লবের প্রথম স্তর বলে চিহ্নিত করে। প্রধানত কৃষিনির্ভর, গ্রাম্য ইউরোপ ও আমেরিকাকে যন্ত্রনির্ভর ও শহুরে হিসেবে গড়ে তুলে এই শিল্প বিপ্লব। হাতে তৈরি যন্ত্র, কায়িক শ্রম ইত্যাদির সহায়তায় কুটির শিল্পের মতো যে উৎপাদন ব্যবস্থা ছিল তাতে বিশেষায়িত যন্ত্র, কারখানা ও শক্তির সংযুক্তি ঘটে। আসে গণ উৎপাদনের সময়। লোহা ও বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে বাষ্পীয় কলের উদ্ভাবন, উন্নততর পরিবহন ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যাংকিং ইত্যাদির সূচনা হয়। একই সঙ্গে শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেননি এমন মানুষেরা চরম বিপদের মুখোমুখি হয়। কর্মহীনতা ও সামগ্রিক পরিস্থিতি তাদের মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করে। অবশ্য শিল্প বিপ্লবের আগেও তাদের জীবন দুঃসহই ছিল। তবে যেহেতু তারা উন্নত জীবনটি শিল্প বিপ্লবের আগে দেখেনি এবং যন্ত্র এসে সভ্যতার রূপান্তরটি ঘটিয়েছিল সেহেতু তারা মনে করেছিল যে তাদের দুরবস্থার জন্য শিল্প বিপ্লবই দায়ী। সেই ধারণা থেকেই শিল্প বিপ্লবের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা উনিশ শতকে ইংল্যান্ডে শত শত কারখানায় হামলা চালিয়েছিল, যন্ত্রপাতি ভাংচুর করেছিল ও হাজার খানেক হরতাল বা ধর্মঘট করেছিল। নেড লুট নামক এক ইংরেজ এর নেতৃত্ব দিয়েছিল বলে সেসব কর্মকা-কে লুডিটি বলা হতো। আমরা যখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি তখনও সম্ভবত নেড লুটের মতো নেতা ও তার অনুসারীদের সৃজন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। হাজার হাজারের বদলে লাখো লাখো ধর্মঘট, প্রযুক্তি ভাংচুর, প্রযুক্তি প্রতিরোধ এবং কায়িক শ্রম বিলীনকারী প্রযুক্তি প্রতিহত করার মতো অবস্থা ঘটতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রচলিত শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটালেও শিক্ষিত মানুষের বেকারত্ব এসব রাষ্ট্রের জন্য বিশাল ও ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠেছে। এর কারণটি খুবই সরল অঙ্কে দেখা যায়। প্রথম শিল্পযুগের শিক্ষা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষতা দিতে পারে না। অবস্থাটি আরও বদলাবে এবং শিক্ষিত মানুষের বেকারত্বের চাপটি আরও বাড়বে। এর প্রধানতম কারণ হচ্ছেÑ প্রচলিত জ্ঞান নিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে টিকে না থাকার সম্ভাবনা। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে প্রচলিত কারখানা, প্রচলিত শ্রম, বিদ্যমান অফিস-আদালত, ব্যবসা বাণিজ্য, সরকার ব্যবস্থা, শিক্ষা ও জীবনধারার অকল্পনীয় রূপান্তর ঘটছে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য এটি অন্যদের-বিশেষত শিল্পোন্নত ও বয়স্ক জনগোষ্ঠীর দেশগুলোর চাইতে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জযুক্ত। আমরা স্মরণ করতে পারি প্রথম শিল্প বিপ্লবের প্রাথমিক ধাক্কাটা সামাল দেবার পর বিশ্ব প্রধানত প্রযুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং তার জীবন মানের উন্নতি ও সভ্যতার বিবর্তণে প্রযুক্তিকেই কাজে লাগিয়েছে। সেই কারণেই ১৮৭০ সালে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পরের সময়টাকে দ্বিতীয় এবং ১৯৬৯ সালের ইন্টারনেটের সূচনার পরের স্তরকে তৃতীয় শিল্প বিপ্লব বলে চিহ্নিত করা হলেও প্রযুক্তির প্রভাবে প্রথম শিল্প বিপ্লবের সময় যে ধাক্কাটা এসেছিল দ্বিতীয় বা তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সময় বিশ্ব তেমন বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়নি। বরং দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি সারা বিশ্বের মানুষের জীবন মানকে অসাধারণ উচ্চতায় স্থাপন করেছে। তবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সময়ে আমাদের জন্য ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটো বিষয়ই রয়েছে। আমরা তিনটি শিল্প বিপ্লবে তেমন শরিক না হওয়ার ফলে সেই তিন বিপ্লবের ভুলগুলো না করার ইতিবাচক সময়ে রয়েছি। অন্যদিকে তিনটি শিল্প বিপ্লব মিস করার জন্য আমাদের চ্যালেঞ্জটা বেড়েছে। আমরা সমাজ সভ্যতা তিনটি শিল্প বিপ্লবের রূপান্তর মিস করার ফলে আমরা আমাদের নাগরিকদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা দিতে পারিনি। তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের পর থেকেই বিশ্বসভ্যতা ডিজিটাল যুগে পা দিলেও এখন বিশ্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রবোটিক্স, আইওটি, বিগডাটা এবং ৫জি মোবাইল ব্রডব্যান্ডের যুগের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা যারা দুনিয়ার ডিজিটাল বিপ্লব, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, ডিজিটাল সমাজ, সৃজনশীল অর্থনীতি, ডিজিটাল অর্খনীতি, ই-দেশ, ইউবিকুটাস দেশ ইত্যাদি বলছি তাদেরকেও বুঝতে হবে নতুন প্রযুক্তিসমূহ বিশ্বকে একটি অচিন্তনীয় যুগে নিয়ে যাচ্ছে। এখনই এইসব প্রযুক্তিসমূহের অতি সামান্য প্রয়োগ সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটাচ্ছে। আগামীতে আমরা এসব প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারব কিনা সেটিই ভাবনার বিষয়। অন্যসব আলোচিত নবীন প্রযুক্তি যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রবোটিক্স, আইওটি, ব্লক চেইন ইত্যাদির আলোচনা কমও যদি করি, তবুও এটি বলতেই হবে যে, মোবাইলের প্রযুক্তি যখন ৪জি থেকে ৫জিতে যাচ্ছে তখন দুনিয়া একটি অভাবনীয় রূপান্তরের মুখোমুখি হচ্ছে। আমরা ৫জির প্রভাবকে যেভাবে আঁচ করছি তাতে পৃথিবীতে এর আগে এমন কোন যোগাযোগ প্রযুক্তি আসেনি যা সমগ্র মানবসভ্যতাকে এমনভাবে আমূল পাল্টে দেবে। ২০২০ সাল নাগাদ এই প্রযুক্তি বিশ্ববাসী ব্যাপকভাবে ব্যবহার করবে। মোবাইলের এই প্রযুক্তি ক্ষমতার একটু ধারণা পাওয়া যেতে পারে এভাবে যে আমরা এখন যে ৪জি প্রযুক্তি ব্যবহার করছি তার গতির হিসাব এমবিপিএস এ। অন্যদিকে ৫জির গতি জিবিপিএস এ। এমন ৫জির সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রবোটিক্স, আইওটি, বিগ ডাটা, ব্লক চেইন বা এ ধরনের যুগান্তকারী ডিজিটাল প্রযুক্তি যেমনি করে নতুন সুযোগ তৈরি করছে তেমনি করে নতুন চ্যালেঞ্জেরও জন্ম দিচ্ছে। আমাদের জন্য এটি খুবই প্রয়োজনীয় হবে যে আমরা যেন প্রযুক্তিকে আমাদের জনগোষ্ঠী, সমাজ-সংস্কৃতি ও দেশ-কালের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যবহার করতে পারি। এসব প্রযুক্তি একদিকে জীবনকে বদলে দেবে, অন্যদিকে কায়িক শ্রমকে ইতিহাস বানিয়ে দেবে। আমাদের মতো জনবহুল কায়িক শ্রমনির্ভর দেশের জন্য এটি একটি মহাচ্যালেঞ্জ। অন্যদিকে আমাদের মতো তরুণ জনগোষ্ঠীর দেশের জন্য সেই জনগোষ্ঠীকে এসব প্রযুক্তিজ্ঞানসমৃদ্ধ করে কাজে লাগিয়ে বিশ্ব জয় করার একটি অপার সম্ভাবনাও তৈরি করছে এসব প্রযুক্তি। বাংলাদেশ প্রধানত একটি কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে নিজেকে একুশ শতক অবধি টেনে এনেছে। খুব সাম্প্রতিককালে কিছু মৌলিক শিল্পায়ন ছাড়া দেশটি কৃষিনির্ভরই ছিল। তবে জিডিপির চিত্রটা এরই মাঝে দারুণভাবে বদলে গেছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল মাত্র শতকরা ১৯ ভাগ। সেবা খাত কৃষি ও শিল্পকে অতিক্রম করে জিডিপিতে শতকরা ৫০ ভাগের বেশি অবদান রাখতে শুরু করেছে। এই পরিবর্তনের প্রধান কারণ দেশটির সামগ্রিক রূপান্তর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ নেতৃত্ব এমন অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। বিশেষ করে তার নেতৃত্বে ঘটা আমাদের ডিজিটাল রূপান্তর এমন এক সুযোগ তৈরি করেছে যা এর আগে আমরা কখনও ভাবতেও পারিনি। লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক।
×