ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত ॥ অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

  কয়েক কোটি টাকা আত্মসাত ॥  অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি

স্টাফ রিপোর্টারে, রাজশাহী ॥ গোদাগাড়ী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং নানা অনিয়মের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতারও অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অধ্যক্ষের সীমাহীন দুর্নীতির কারণে কলেজটির শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। অর্ধেকে নেমে এসেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। অধ্যক্ষের এসব অপকর্মের প্রতিকার ও তার অপসারণ চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কলেজটির শিক্ষক ও কর্মচারীরা। শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী নগরীর একটি রেস্তরাঁয় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় কলেজ অধ্যক্ষের হাতিয়ে নেয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানান ভুক্তভোগী শিক্ষক এবং কর্মচারীরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন প্রভাষক হান্নান হোসাইন। লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, অধ্যক্ষ আবদুর রহমান তার শ্যালক সেলিম হাসানকে মনোবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক পদে ২০১৫ সালের ১৯ মার্চ নিয়োগ দেন। পরের বছর ২০১৬ সালের ২৭ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম বাগডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন সেলিম। এরপরেও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অধ্যক্ষ আবদুর রহমান তার শ্যালককে কলেজ থেকে পদত্যাগ না করিয়ে ২০১৬ সালের অক্টোবরে জাতীয়করণ প্রক্রিয়ায় সেলিম হাসানের নাম এবং সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে প্রেরণ করেন। এছাড়াও সম্প্রতি শিক্ষা অধিদফতর থেকে তৃতীয় শিক্ষকের নাম চাওয়া হলে সেখানেও সেলিম হাসানের নাম পাঠিয়েছেন অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষ কলেজে কোন বেঞ্চ না বানিয়ে ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে ২ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিলের প্রক্রিয়া সঠিকভাবে না করে তিনি নগদ টাকা গ্রহণ করেন। এটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধানের পরিপন্থী। এভাবে তিনি কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বেতন না নেয়ার বিধান থাকলেও তিনি তাদের কাছ থেকে বেতন নিয়েছেন। এরপর বিভিন্ন ধরনের বিল ভাউচার দেখিয়ে তা আত্মসাত করেন। গত কয়েক বছরে তিনি এভাবে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। এছাড়া অধ্যক্ষ আবদুর রহমান অভিভাবকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। শিক্ষকদের তিনি বিভিন্নভাবে হেনস্থা করেন। কর্মচারীদের মারধর করেন। ছাত্রদের অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করেন এবং প্রহারের মতো নিষ্ঠুর কাজটিও করে থাকেন। লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, অধ্যক্ষ কলেজের স্টাফ কাউন্সিল থেকে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত দেননি। অনার্স প্রথমবর্ষের ভর্তির সময় সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৬৬ হাজার টাকা এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে ১ লাখ ৯৪ হাজার টাকা গ্রহণ করে তা আত্মসাত করেছেন। এছাড়াও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত অনার্সের দুটি বিভাগের হিসাব থেকে তিনি বিভিন্ন বিল ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন। অধ্যক্ষ কলেজ ফান্ডের টাকা ব্যক্তিগত এ্যাকাউন্টে রাখেন। শুধু তাই নয়, মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক তারেক আজিজের প্রতিমাসের বেতনের ১০ হাজার টাকা নিজে উত্তোলন করে ১০ মাসের বেতন ১ লাখ টাকা পকেটস্থ করেছেন। এছাড়া কলেজ জাতীয়করণের পরেও তিনি অনার্স পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যক্ষকে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ১৫টি অনিয়ম এবং দুর্নীতির ব্যাপারে ব্যাখ্যা চেয়ে কারণ দর্শানো নোটিস দেন। গত ১৯ আগস্ট কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং শিক্ষকদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় কলেজ অধ্যক্ষ তার বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাসকে মোবাইল ফোন দিয়ে আঘাত করেন। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে বিক্ষুব্ধ জনতা উপস্থিত হয়ে কলেজ অধ্যক্ষকে মারধর করেন। পরে এমপি ফারুক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং কলেজ অধ্যক্ষের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেন। এরপর থেকে অধ্যক্ষ আবদুর রহমান কলেজে অনুপস্থিত রয়েছেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে কলেজ অধ্যক্ষের অনিয়ম এবং অর্থ আত্মসাতের ঘটনা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানান শিক্ষক ও কর্মচারীরা। সংবাদ সম্মেলনে কলেজের উপাধ্যক্ষ উমরুল হক, শিক্ষক বেলায়েত আলী, মনজুর রহমান, এবিএম কামরুজ্জামান বকুল, আবদুল করিম, মাজহারুল ইসলাম, নাজমুস সাদাত, প্রদর্শক ফারুক হোসেন ও মাইনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে অধ্যক্ষ আবদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাকে অধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে দিতে একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে।
×