ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রণোদনামূলক তহবিল

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 প্রণোদনামূলক তহবিল

প্রবাসীদের জন্য সুসংবাদ বৈকি। তাদের উৎসাহ প্রদানে একটি প্রণোদনামূলক তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা অবশ্য এবং তা জনহিতকর। গঠিতব্য তহবিল থেকে প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফেরার পর কর্মদক্ষতা অনুযায়ী তারা ঋণ পাবেন। এছাড়া কাজের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার আগেও এখান থেকে ঋণ নেয়া যাবে। তুলনামূলক কম সুদ ও সহজ শর্তে ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচীর আওতায় তহবিল পরিচালিত হবে। তহবিলের আকার ঋণের মেয়াদ, সুদহার, আদায় পদ্ধতিসহ সার্বিক বিষয় ঠিক করতে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি কাজ করছে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের উৎসাহ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অবদানের স্বীকৃতি প্রদানই তহবিল গঠনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এখান হতে বিদেশ ফেরতদের ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে বৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হবে। আবার বিদেশ যাওয়ার জন্য পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচী থেকে ঋণ বিতরণে এখন শর্ত দেয়া হবে, যাতে দক্ষরা বেশি সুযোগ পান। এই ব্যবস্থা অত্যন্ত বাস্তবসম্মত বলা যায়। হরে-দরে ঋণ প্রদান সুফলের চেয়ে কুফলই বয়ে নিয়ে আসবে। সাম্প্রতিককালে অবৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানো ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগও নিয়েছে। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে কেউ যাতে হু-ির মাধ্যমে আনা অর্থ সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছে দিতে না পারে সেজন্য নানা ব্যবস্থা নেয়া হয়। এর ফলে রেমিটেন্স রেড়েছে। অবৈধ পন্থা হ্রাস পাচ্ছে। দেখা গেছে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রায় ১৩২ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১৮ দশমিক ০৫ শতাংশ বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিটেন্স ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়ে হয়েছিল এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার। এর আগে টানা দুই অর্থবছর রেমিটেন্স ব্যাপক কমেছিল। আর্থিক খাতের জন্য যা বিপর্যয় হিসাবেই বিবেচিত হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিটেন্স ৩৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার বা দুই দশমিক ৫২ শতাংশ কমে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলারে নেমে আসে। পরের বছর আরও ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমে দাঁড়ায় এক হাজার ২৭৭ কোটি ডলার। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে দীর্ঘ সময় পর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কমে ব্যাংকিং চ্যানেলে মাত্র এক হাজার ৪২৩ কোটি ডলার দেশে আসে। প্রবাসী আয় কমে এক দশমিক ৬৫ শতাংশ। স্বাধীনতার পর থেকে সাধারণভাবে প্রতি বছরই রেমিটেন্স বাড়লেও সাম্প্রতিক কয়েক বছরের এ ছন্দপতন সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দেয়। ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২৫টি ব্যাংকে প্রবাসীদের জন্য ঋণ সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে ৭টি ব্যাংকে বিশেষ প্রকল্প রয়েছে। বাকি ১৮টি ব্যাংকে যেসব প্রকল্প রয়েছে তার বেশিরভাগই গৃহনির্মাণ খাতে গতানুগতিক প্রকল্প। এসব প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য অন্য সব ঋণ সুবিধার মতোই। বিদেশে গমনেচ্ছু, বিদেশে অবস্থানরত এবং বিদেশ ফেরতদের জন্য আলাদা কোন সুবিধা নেই। দেশের অর্থনীতিতে অনন্য অবদান রাখছে প্রবাসী আয়। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পের পরই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের অবস্থান। অথচ তাদের জন্য পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা না থাকায় দক্ষ শ্রমশক্তি বিদেশে পাঠানো এবং বিদেশ ফেরত দক্ষ শ্রমিকদের দক্ষতা দেশে কাজে লাগানোর কার্যক্রম আশানুরূপ হচ্ছে না। ধারণা করা যায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হলে রেমিটেন্সের মাধ্যমে পাঠানো অর্থ ও বিদেশ ফেরত জনশক্তির কার্যদক্ষতা দেশের উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। বাড়বে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির পরিধি। ফলে ব্যাংকগুলোও প্রবাসীদের জন্য বিশেষ প্রকল্প চালুর ক্ষেত্রে উদ্যোগী হবে। এই তহবিল থেকে ব্যাংকগুলোকে ব্যাংক রেট তথা পাঁচ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হবে। ব্যাংকগুলো গ্রাহক পর্যায়ে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ বিতরণ করবে। ঋণের জামানত হিসাবে বিদেশ যেতে আগ্রহীদের ভিসা সরবরাহকারীর অঙ্গীকারনামা ব্যক্তিগত জামিনদার ও সব ধরনের রেমিটেন্স ঋণ প্রদানকারী শাখার মাধ্যমে পাঠানোর অঙ্গীকারনামা নেয়া হবে। তহবিলটি হবে ঘূর্ণায়মান। অর্থাৎ অর্থ ফেরত আসার পর পুনরায় বিতরণ করা হবে। দীর্ঘদিন আগেই এই প্রকল্প নেয়া ছিল সঙ্গত। তবে বিলম্বে হলেও এই পদক্ষেপ যুগান্তকারী ফলদায়ক হয়ে উঠবে।
×